4thPillar



মুক্তমনের অম্লান ভাষ্যকার

মুক্তমনের অম্লান ভাষ্যকার

গত শতাব্দীর সত্তর দশকের উত্তাল কলকাতা। ট্রামে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে তিনিও চলেছেন। সেই সময়ে ব্যক্তিহত্যা একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ঘোষিত নীতি, সেই শক্তির চোখে আবার তিনিও একজন ঘোষিত শত্রু। এই অবস্থায় ট্রামের রাস্তা আটকালো জ্বলন্ত মশাল হাতে একদল উগ্র যুবা, তারা ট্রাম পোড়াবে। ত্রস্ত যাত্রীরা সবাই প্রাণ বাঁচাতে হুড়মুড় করে নেমে গেলেন। কিন্তু তিনি নামছেন না, তাই দেখে তারা বলল, শিগ্‌গির নামুন আমরা এখুনি আগুন ধরিয়ে দেব। নির্বিকার মুখে তিনি বললেন, আমি তো টালিগঞ্জ যাব বলে টিকিট কেটেছি। তোমরা কী করবে আমি জানি না, কিন্তু গন্তব্যে না পৌঁছে আমি নামব না। আর তোমরা এমন কিছু প্রশংসনীয় কাজ করছ না, যার সঙ্গে আমাকে সহযোগিতা করতে হবে। —এক ব্যক্তির অবিচল অহিংস প্রতিরোধে সেদিন ক্ষিপ্ত ওই যুবাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল জনগণের সম্পত্তি ট্রাম। দৃঢ় মনোবলের অহিংস প্রতিবাদী ওই যে মানুষটি, তিনি হলেন মুক্তচিন্তার ভাষ্যকার, একই সঙ্গে জীবনপ্রেমিক অম্লান দত্ত। এখন তাঁর জন্মশতবর্ষ চলছে বলে নয়, সময়ের দাবিতেই মন হচ্ছে, তাঁর মুক্তধারার চিন্তার সঙ্গে আমাদের গভীর সংলাপ প্রয়োজন। প্রকৃত গণতন্ত্রের সঙ্গে তিনি কখনো মুক্তচিন্তার বিরোধ দেখতে পাননি। সতর্ক করেছেন এই বলে, ‘বিশ শতকের মধ্যবিন্দুতে দাঁড়িয়ে আমরা গ্রহণ করেছিলাম স্মরণীয় সংবিধান। গণতন্ত্রের উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের সহযোগিতার ভিত্তিতে জনকল্যাণ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সামাজিক পরিবর্তন। সেই উদ্দেশ্য যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের প্রমত্ততায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে।’ —বলেছেন, ‘হিংসা অহিংসার সঙ্গে গণতন্ত্রের ভাগ্য জড়িয়ে আছে।’ এই শতাব্দীর গোড়ায় দেশের একটি রাজ্যে দাঙ্গার পরিস্থিতির সময়, অম্লান দত্ত তিনদিনের অনশনে বসেছিলেন। দেশের চেতনাকে স্পষ্টতর করবার এবং মঙ্গলকামী মানুষের সংকল্পকে দৃঢ়তর করবার জন্যই এই অনশন। বলেছিলেন, মন্দির বা মসজিদ নয়, সম্প্রীতির ক্ষেত্রকে প্রশস্ত করাই প্রধান কাজ। ঈশ্বরের নামে প্রাণ দেবার বা প্রাণ কেড়ে নেবার কোনো সদর্থ হয় না। অম্লান দত্তের ভাষণ ও লেখার সঙ্গে যাঁরা পরিচিত তাঁরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, তাঁর লেখায় আছে সুশৃঙ্খল ভাবনার মধ্যে শান্ত অথচ নিরন্তর প্রশ্নমাখানো কথার স্রোত। তার সঙ্গে মিশে আছে তর্ক স্নিগ্ধতার ছাপ। লেখায় তাঁর যে বাক্যের বাঁধন এবং গদ্যের গড়ন, তাই যেন ফুটে উঠতে ভাষণেও। বলার সময় শুরু থেকেই তিনি একটু একটু করে শ্রোতাকে যেন ভিতর ঘরে তাঁর চিন্তার আঙিনায় টেনে আনেন, তারপর তাঁদের ছেড়ে দেন স্বাধীন চিন্তার নানা দিগন্তে। ফলে চিন্তার শতদল বিকশিত এক ছবি আমাদের সামনে ফুটে ওঠে, যেখানে বক্তার মতকে চাপিয়ে দেওয়ার কোনো উগ্রতা নেই। ১৯৫৩ সালে অম্লান দত্তের ‘For democracy’ বইখানা হাতে পান আইনস্টাইন। মুগ্ধ হয়ে যান তাঁর যুক্তিশাণিত মুক্তচিন্তায়। তিনি চেয়েছিলেন বইটা বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে যাক। সেই সংস্করণের ভূমিকাও লিখতে চেয়েছিলেন এই বিজ্ঞানী। অম্লান দত্ত ব্যক্তিচিন্তার স্বাধীনতা ও আপোশহীন সত্যানুসন্ধানের পক্ষে। তিনি গান্ধীবাদী ছিলেন না। কিন্তু তাঁর মৌলিক চিন্তার ভরকেন্দ্রে ছিলেন মহাত্মা গান্ধী এবং রবীন্দ্রনাথ। কার্ল মার্কস খুঁটিয়ে পড়েছেন, কিন্তু শেষপর্যন্ত তাঁর চিন্তায় পুরো সায় দিতে পারেননি। অথচ তিনি ছিলেন ভিন্ন মতবাদেরও স্বাধীনতার পক্ষে। আমেরিকায় যখন উগ্র কমিউনিস্ট বিরোধী সেনেটর ম্যাকার্থির যুগ, সেনেটর তখন সমস্ত লাইব্রেরি থেকে কমিউনিউনিজম-সমর্থিত বইপত্র পুড়িয়ে ফেলার জন্য গরম গরম বক্তৃতা দেন। অম্লান দত্ত তখন ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’-য় প্রবন্ধ লেখেন যার শিরোনাম ‘The Bookburning democracy’—বইপোড়ানো গণতন্ত্র। এই মুক্তচিন্তাই সম্ভবত এক নির্ভীক মনেরও জন্ম দেয়। গত শতাব্দীর মধ্য সত্তরে তখন দেশে জরুরি অবস্থা। তার পক্ষে সিলমোহর লাগানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী উপাচার্যদেরও ডেকেছেন দিল্লির বিজ্ঞানভবনে। অম্লান দত্ত উত্তরঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের তখন উপাচার্য। সেই সভায় তিনি বললেন, আমার আগে সাত-আটজন উপাচার্য এই মৌলিক অধিকার রদ করা জরুরি অবস্থার অকুণ্ঠ প্রশংসা করলেন। তার মানে কি এই এর বিরুদ্ধে কিছুই বলার নেই? আসলে এঁরা কিছু বলতে ভয় পাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্তচিন্তার দুর্গ, সেই দুর্গাধিপতিরাই যদি এত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন, তাতেই তো বোঝা যায় অবস্থাটা কতটা ভয়ংকর। সেই সভায় সেদিন নেমে এল স্তব্ধতা। এর কয়েকবছর পরেও কিন্তু তিনি বিশ্বভারতীর উপাচার্য হবার আমন্ত্রণ পান, তাও তিনি গ্রহণ করেন মুক্ত মনেই। এই মুক্ত মননধর্মই যাঁর জীবনধর্ম, সেই মনস্বী অম্লান দত্তকে কি আমরা একটু ভালো করে বুঝে দেখব? আর তার সঙ্গে তর্কও যদি চলে, চলুক না।

ভুলে না যাই 25 জুন
ভুলে না যাই 25 জুন

"ইন্দিরা তেরে সুবা কি জয়, তেরে শাম কি জয়, তেরে কাম কি জয়, তেরে নাম কি জয়।’ প্রা…

আত্মনির্ভরতা আর ভারতীয় ঔষধ ভাণ্ডারের অলীক রূপকথা
আত্মনির্ভরতা আর ভারতীয় ঔষধ ভাণ্ডারের অলীক রূপকথা

ভারতে বিজ্ঞানের গবেষণা আজ কোথায় দাঁড়িয়ে? গত প্রায় আট বছর ধরেই বিজ্ঞানীদের চাপ দেওয়া হচ্ছে যে মৌলিক বিজ্…


Trending


ভিডিও

মণিপুরের কুকিদের পাশে দাঁড়াল মিজোরাম


হুতোম
মৌতাত
মৌতাত
শব্দব্রহ্ম
শব্দব্রহ্ম
নগরকেত্তন
নগরকেত্তন
১২-ইয়ারি
১২-ইয়ারি

মুক্তচিন্তা
অন্য ভাবনা
অন্য ভাবনা
বইপত্র
বইপত্র
আমার পাঠ
আমার পাঠ
দর্পণ
দর্পণ

চর্চা
দেশের কথা
দেশের কথা
মেয়েদের কথা
মেয়েদের কথা
সংলাপ
সংলাপ
পরিবেশ
পরিবেশ

মানবজমিন
অ-সাধারণ
অ-সাধারণ
পোর্ট্রেট
পোর্ট্রেট
সফলনামা
সফলনামা
আপনার কথা
আপনার কথা

ফিল্ম
শর্ট-ফিল্ম
শর্ট-ফিল্ম
ডকুমেন্টারি
ডকুমেন্টারি

সংস্কৃতি
মণিমুক্তো
মণিমুক্তো
মিউজিক
মিউজিক
থিয়েটার
থিয়েটার
গ্যালারি
গ্যালারি

ফোরাম
গ্রাফিতি
গ্রাফিতি
শেয়ারিং
শেয়ারিং
আর্টিকল 19
আর্টিকল 19

ভিডিও
vdo
vdo

ব্লগ
সুদীপ্ত সেনগুপ্ত
সুদীপ্ত সেনগুপ্ত
শিখা মুখার্জী
শিখা মুখার্জী
রজত রায়
রজত রায়

Testimonials

আমরা এখানে আপনাদের কথা বলার জন্য প্রচেষ্টা করি। তার মধ্যে কিছু আপনাদের ভালো লাগে, কিছু হয়তো নাও লাগতে পারে। আমরা দুটোকেই সমানভাবে সন্মান করি। তাই আপনাদেরই কিছু মন্তব্য আমাদের উদ্দেশ্য , আমরা এখানে প্রত্যয়িত করলাম।.


4thPillar

Support 4thPillarWeThePeople

Admin Login Donate
আমাদের কথা

আমরা প্রশ্ন করি সকলকে। আমরা বহুত্ববাদী, স্বাধীন, যুক্তিবাদী। আমরা সংশয়বাদী; তর্কশীল; আবার সহিষ্ণুও বটে। আসুন কথা হোক; পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, বিশ্বাস রেখে আলোচনা হোক। মননের ইতিহাসে শেষ কথা বলার স্পর্ধা কারও যেন না হয়; আবার কোনও স্বরই যেন অকিঞ্চিৎকর বলে উপেক্ষিতও না হয়। এই রকম ভাবনার একটা ইন্টারনেট-ভিত্তিক বিশ্বব্যাপী কমিউনিটি গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।

© 2023 4thPillarWeThepeople. All rights reserved & Developed By - 4thPillar LeadsToCompany
// Event for pushed the video