রাজ্যের আটটি কেন্দ্রে আগামী 13 মে ভোট। বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান দুর্গাপুর, আসানসোল, বীরভূম ও বোলপুর। বহরমপুর রাজার খুব অসুখ। কী অসুখ কারও জানা নেই। সন্ন্যাসী বলেছেন, ভাবনামুক্ত, হাসিখুশি একটা মানুষের জামা পরিয়ে, তারই তোষকে শোয়ালে রাজার অসুখ সেরে যাবে। তেমন মানুষ পাওয়া গেলেও, সেই ফকিরের না আছে জামা, না আছে তোষক! বহরমপুরের রাজা অধীর চৌধুরীর 'অসুখ' খানিকটা তেমনই। টানা পাঁচবারের সাংসদের কুর্সি এবার টলোমলো। পারিষদরা রোগ সারাতে এক চিকিৎসকের খোঁজ পেয়েছেন। তাঁর নিদান কতটা কাজে আসবে, না বুমেরাং হবে, তা ভোট নেওয়ার সাতদিন আগেও বোঝা যাচ্ছে না। বিদায়ী লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা, প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী বহরমপুর কেন্দ্রে গত লোকসভা নির্বাচনে পেয়েছিলেন 5 লক্ষ 91 হাজার 106 ভোট। প্রদত্ত ভোটের 45.43 শতাংশ। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের অপূর্ব সরকার 5 লক্ষ 10 হাজার 410 ভোট পেয়েছিলেন, 39.23 শতাংশ। বিজেপির কৃষ্ণ জোয়ারদারের ঝুলিতে 1 লক্ষ 43 হাজার 38 ভোট, 10.99 শতাংশ। অধীরের জয়ের ব্যবধান ছিল 80 হাজারের মত। বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর চিন্তা বাড়িয়ে বহরমপুর লোকসভার অধীন সব বিধানসভা মিলিয়ে ভোট প্রাপ্তির নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। ছয়টি বিধানসভায় তৃণমূল জিতেছে, একটিতে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে অধীর চ্যালেঞ্জ দিয়ে বসেছেন, হারলে রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। মোদী-শাহের রাজ্য থেকে তারকা ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে এনে, এই কেন্দ্রের লড়াইয়ে নামিয়ে তৃণমূল চমক দিয়েছে। কিন্তু লোকসভার ভোট আলাদা, বাইরে থেকে এসে ইউসুফ কি বিধানসভার ভোট ধরে রাখতে পারবেন? বহরমপুরের রবিনহুড অধীরের 'অসুখের চিকিৎসা' করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী নির্মলকুমার সাহা। নামজাদা শল্য চিকিৎসক। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। সংখ্যালঘু প্রধান এলাকায় বিজেপি গত লোকসভায় 11 শতাংশের মতো ভোট পেয়েছে। ডা. সাহার দিকে সংখ্যালঘুদের একাংশ ঝুঁকে পড়তে পারে স্রেফ 'ডাক্তারবাবু' বলে, এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ইউসুফ পাঠান পরিযায়ী, জিতলে গুজরাত থেকে দিল্লি যাবেন বড় জোর, এই প্রচার ভোটারদের একাংশের মনে ধরছে। গত বিধানসভা ভোটে বহরমপুরে জিতেছিল বিজেপি। তৃণমূল জিতেছিল বড়ঞা, কান্দি, ভরতপুর, রেজিনগর, বেলডাঙ্গা এবং নওদায়। তাই যতই নিখুঁত হোক অস্ত্রোপচার, 'গভীর অসুখ' সারিয়ে অধীর আরও একবার দিল্লি যাচ্ছেন, এই বাজি কেউ ধরছেন কি! কৃষ্ণনগর কৃষ্ণনগরকে বিজেপি যে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে দেখে। তিনি ইতিমধ্যে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের শহরে দুবার এসে নির্বাচনী প্রচার সেরে গিয়েছেন। লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন এখানকার প্রাক্তন সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তাকে দেশবিরোধী তকমা দিয়েছে বিজেপি। তাই কৃষ্ণনগর হয়ে উঠেছে বিজেপির প্রেস্টিজ ফাইট। গত লোকসভায় 63 হাজারের মতো ভোটে জিতেছিলেন তৃণমূলের মহুয়া। তিনি পেয়েছিলেন 6 লাখ 14 হাজার 872 ভোট, 44.99 শতাংশ। বিজেপির কল্যাণ চৌবের প্রাপ্তি 5 লক্ষ 51 হাজার 654 ভোট, 40.37 শতাংশ। সিপিএমের শান্তনু ঝা 1 লক্ষ 20 হাজার 222ভোট পেয়েছিলেন, 8.80 শতাংশ। কংগ্রেস প্রার্থী প্রায় তিন শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। মহুয়ার বিরুদ্ধে এবার বিজেপির বাজি রাজপরিবারের বধূ অমৃতা রায়। তাঁর নাম ঘোষণার পর কৃষ্ণচন্দ্র রায়কে নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। দেশপ্রেম, দেশদ্রোহী ইত্যাদি শব্দের আড়ালে জনগণের রুটি রুজির প্রশ্ন চাপা পড়ে যাচ্ছে। 2021-এর বিধানসভা ভোটে এই লোকসভার অন্তর্গত কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে জিতেছিলেন বিজেপির মুকুল রায়। বাকি ছয় কেন্দ্র তেহট্ট, পলাশিপাড়া, কালীগঞ্জ, নাকাশিপাড়া, চাপড়া এবং কৃষ্ণনগর দক্ষিণ ছিল তৃণমূলের হাতে। এখানকার সংখ্যালঘু ভোট, তৃণমূলের সংগঠনের উপরি, বিজেপির সামনে চ্যালেঞ্জ মহুয়ার নিজস্ব নির্বাচন পরিচালনার কায়দা। এসব অতিক্রম করে প্রবীণ রাজমাতা 25 বছর পর রাজবাড়িতে পদ্ম ফোটাতে পারবেন কি? কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী এসএম সাদি, আই এস এফের আফরোজা খাতুন কত ভোট কাটবেন মহুয়ার, তারই উপর কিছুটা নির্ভর করছে কৃষ্ণনগরের ভোট ভাগ্য। তিন শতাংশের মতো ভোটার, শিবির বদলালে উল্টে যেতে পারে গতবারের ফল। রানাঘাট মতুয়া জনগোষ্ঠীর মানুষেরা গত লোকসভা নির্বাচনে ঢেলে ভোট দিয়েছিলেন বিজেপিকে। রানাঘাট কেন্দ্রে হাসতে হাসতে জিতেছিলেন জগন্নাথ সরকার। ব্যবধান ছিল দুই লক্ষের উপরে। জগন্নাথ 7 লক্ষ 83 হাজার 253 ভোট পেয়েছিলেন, 52.75 শতাংশ। জোড়াফুলের রূপালী বিশ্বাস 5লক্ষ 49 হাজার 825 ভোট পেয়েছিলেন, 37.03 শতাংশ। সিপিএম ও কংগ্রেস আলাদা লড়াই করে আট শতাংশের মতো ভোট পেয়েছিল। গতবার নাগরিকত্বের স্বপ্ন পদ্ম হয়ে ফুটেছিল। এবার ভোটের আগে কার্যকর হয়েছে নাগরিকত্ব আইন। রাম মন্দির তৈরি হওয়ার পর যেমন অযোধ্যা আর ইস্যু নয়, তেমনই সিএএ দিয়ে মতুয়াদের আর জাগানো যাবে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু এখানকার ভোটারদের বিজেপির প্রতি সমর্থন যে একেবারে চলে যায়নি, তার প্রমাণ গতবারের বিধানসভা নির্বাচন। এই লোকসভার অন্তর্গত নবদ্বীপ এবং শান্তিপুরে জিতেছিল তৃণমূল। বিজেপি জেতে অন্য পাঁচটি কেন্দ্র রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম, কৃষ্ণগঞ্জ, রানাঘাট উত্তর-পূর্ব, চাকদহ এবং রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে। বিজেপি দিয়েই বিজেপি বধ করতে চায় তৃণমূল। তাই পদ্ম টিকিটে বিধানসভায় জয়ী বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীকে জগন্নাথের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে ঘাসফুল শিবির। লোকসভা ভোটের আগে আচমকা রানাঘাটের বিধায়ক মুকুট দলবদল করেছেন। তিনি মতুয়া শিবিরের তরুণ মুখ। তবে তৃণমূলের মুকুটে রানাঘাটের পালক জোড়া তাঁর কাছে বেশ চ্যালেঞ্জের।
আমরা এখানে আপনাদের কথা বলার জন্য প্রচেষ্টা করি। তার মধ্যে কিছু আপনাদের ভালো লাগে, কিছু হয়তো নাও লাগতে পারে। আমরা দুটোকেই সমানভাবে সন্মান করি। তাই আপনাদেরই কিছু মন্তব্য আমাদের উদ্দেশ্য , আমরা এখানে প্রত্যয়িত করলাম।.