(1) বুকে হাত দিয়ে বলুন। আমি চিনি। খুব কাছ থেকে চিনি। অনেক বছর ধরে চিনি। তারা উদারহৃদয়। তারা উষ্ণ। তারা উপকারী। তারা প্রকৃত বন্ধু। আমি তাদের ভালোবাসি। তার জন্যে আমাকে বাংলাদেশী বা পাকিস্তানী হতে হবেনা। আমি আমেরিকায় গিয়ে সারা পৃথিবীর মুসলমানদের খুব কাছ থেকে দেখেছি। যা হনুমানরা কল্পনাও করতে পারবে না। আমি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, ক্যানাডা, আমেরিকা, সুদান, ইথিওপিয়া, সেনেগাল, কেনিয়া, জর্দান, ইজরায়েল, প্যালেস্টাইন -- এসব দেশের কয়েক হাজার মুসলমানের সঙ্গে মিশেছি। তাদের বাড়ি গিয়ে থেকেছি। খেয়েছি। তাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে অনেক কথা বলেছি। আমি সারা পৃথিবীর আন্ডারপ্রিভিলেজড ছেলেমেয়েদের ইংরিজি শিখিয়ে যাচ্ছি কয়েক বছর ধরে আমার ইউটিউব চ্যানেলে। পয়সা নিইনা। এদের মধ্যে কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে বাংলাদেশের মুসলমান। আমার ভারতের অধ্যাপকজীবনের সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র ও সহকর্মীদের মধ্যে ছিল মুসলমান। এখনো তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়ে গেছে। আমি বাংলাদেশের শহরে, গ্রামে, উপশহরে গেছি, থেকেছি। আমি একশো ভাগ হিন্দু। আমি স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণদেবের ভক্ত। কিন্তু আমি মুসলিমবিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদীদের চরম বিরোধী। ও হ্যাঁ, বলা হয়নি, আমি আবার এই হনুমানবাহিনীর সঙ্গেও বহুকাল ওঠাবসা করেছি। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, আরএসএস-বিজেপি বেশি ভালো, না আমার চেনা-দেখা অসংখ্য মুসলমান -- সারা পৃথিবীর মুসলমান? আমি উত্তরই দেবোনা। কারণ, ফালতু প্রশ্নের উত্তর আমি দিইনা। আমার জীবনই আমার উত্তর। (2) শিশু অবস্থা থেকে বালক অবস্থায় পদার্পণ ঘটার এই আধো ঘুম আধো জাগার সময়ে মুসলমান বন্ধু রবীন্দ্রসঙ্গীতে পরপর দুবার ফার্স্ট প্রাইজ পাওয়া চঞ্চল আহমেদের ছাতা ফুটো করে দিয়েছিলাম আমার ছাতার শিক দিয়ে। ওর একমাত্র অপরাধ ছিল, ও মুসলমান। আর আমার মুসলমানবিদ্বেষ জন্মাচ্ছিলো বাবার সংগঠন আর এস এসে এ্যাক্টিভিটি শুরু করার সুবাদে। তখন আমি মাত্র ক্লাস ফোর। নিষ্পাপ শিশু থেকে কর্কশ বালক-কিশোর জীবনে গ্র্যাজুয়েশন হচ্ছে। ঘটিকাহিনি'তে এই ঘটনার বিশদ বর্ণনা দিয়েছি, তাই এখানে দিতে চাইনা আর। তবে, চঞ্চলের সঙ্গে কারুর যদি কখনো দেখা হয়, বলবেন, পার্থ তোমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। ও বলেছে, ছাতার দাম শোধ দিতেও রাজি আছে। অপমানের দাম শোধ ও তো আর দিতে পারবেনা। (3) আমার অনেক লেখায়, বইতে, আলোচনায় আমি বলেছি আরএসএস বিজেপি জমানার সঙ্গে হিটলারের জার্মানির আশ্চর্য মিল। আরএসএস শুরুই হয়েছিল হিটলার মুসোলিনির পদাঙ্ক অনুসরণ করে। তাদের গেস্টাপো ও এসএস যেভাবে বেছে বেছে ইহুদীদের মারত, নির্যাতন করত, জেলে নিয়ে যেত, আজ ভারতে মুসলমানদের সেই অবস্থা। জয়পুর এক্সপ্রেসে গুলি চালিয়ে বেছে বেছে মুসলমানদের মেরেছে এক কনস্টেবল। এবং মারার সময়ে সে মোদী ও যোগীর নাম নিয়েছে। ঠিক যেমন হাইল হিটলার বলে ইহুদীদের মারতো গেস্টাপো বাহিনী। যোগীর রাজ্য উত্তরপ্রদেশে বুলডোজার দিয়ে অসংখ্য মুসলমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিনা নোটিসে, বিনা বিচারে। এমন কি ভারতের সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত সে অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার জানিয়েছে এই সেদিন।
আমরা এখানে আপনাদের কথা বলার জন্য প্রচেষ্টা করি। তার মধ্যে কিছু আপনাদের ভালো লাগে, কিছু হয়তো নাও লাগতে পারে। আমরা দুটোকেই সমানভাবে সন্মান করি। তাই আপনাদেরই কিছু মন্তব্য আমাদের উদ্দেশ্য , আমরা এখানে প্রত্যয়িত করলাম।.