ডাবল ইঞ্জিন সরকারের সম্বন্ধে আমরা সবাই অবগত। বেশ কয়েকটি রাজ্যে এই ইঞ্জিনের রমরমা গতি রাজ্যকে কোথায় পৌঁছে দিয়েছে তার হদিশ দেশবাসী বিলক্ষণ জানে। ডাবল ইঞ্জিনের দুর্বার গতি ক্রমাগত দাম বাড়িয়েছে জ্বালানি, রান্নার গ্যাস সহ যাবতীয় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের। বেকারত্ব ছুঁয়েছে দেশের সর্বকালের রেকর্ড। নতুন এক প্রজাতির ইঞ্জিনের সরকার আগামী 4 জুনের পর হয়তো দেশে আবির্ভূত হতে চলেছে - তার নাম হবে হাইব্রিড ইঞ্জিন সরকার। লোকসভা ভোটে যেই বেশি আসন পাক না কেন, এই হাইব্রিড ইঞ্জিন চালু হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা একটি রাজ্যে। এই ইঞ্জিনের ফলে সেই রাজ্য এগোবে তড়িৎগতিতে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামোয় গুণগত না হলেও জোয়ার আসবে পরিমাণে। কেষ্ট - বিষ্টুরা আবার রাজ্যে ফিরে আসবে, উন্নয়নের স্টিয়ারিংও ফিরবে তাদের হাতে।
প্রবল উৎসাহে ‘400 পার’ দিয়ে প্রচার শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রথম দফার ভোটের পর মোদীর আমোদ হঠাৎ উধাও। রাতারাতি 400 পারের স্লোগান পাল্টে শুরু করলেন কংগ্রেসকে আক্রমণ। মুসলমানরাজ্, মঙ্গলসূত্র, মহিষ দান, সংরক্ষণ ইত্যাদি। যে কংগ্রেস নিজেরাও ক্ষমতায় আসার বিষয়ে সংশয়ী ছিল তাঁদেরও নাড়িয়ে দিলেন স্বয়ং নরেনবাবু। তৃতীয় দফার পর তো দিশেহারা প্রধানমন্ত্রী এবার বন্ধু ব্যবসায়ীদের কালো টাকা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন। কারণ কী?
একা কুম্ভ প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে এরকম ছটফট করছেন কেন? সব জায়গায় ভোট কম পড়ছে বলে? কম পড়া মানে কি জনমত শাসকের বিরুদ্ধে রায় দিচ্ছে? সরকার থেকে মুখ ফেরাচ্ছে সমর্থকরাই! শোনা যাচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকরা এবার টাকা পয়সা খরচ করে বাড়ি এসে ভোট উৎসবে অংশগ্রহণ করার উৎসাহ পাননি। গরমের অজুহাত দেখিয়ে ভাসমান ভোটাররা ভোট দিতে বেরোননি। শেয়ার মার্কেট পতনের ইঙ্গিত দেয় শাসকের অনিশ্চয়তা। শোনা যায়, পরিবর্তনের গন্ধ সবার আগে নাকে আসে পুলিশের। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে থাকা পুলিশ হঠাৎ নির্বাচনের মাঝে মহিলা কুস্তিগীরদের কারণে খ্যাত ব্রিজভূষণের নামে চার্জশিট তৈরীর কাজ শুরু করেছে। কেজরিওয়ালের অন্তর্বর্তী জামিন নিয়েও অমিত শাহ বেজায় ক্ষুব্ধ, নিন্দুকেরা বলছে বিচারকরাও নাকি সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়ে পরিবর্তনের শীতল হাওয়ার ছোঁয়া পেয়েছেন। ইতিহাসকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো প্রধানমন্ত্রী নিজের দলের ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে উদ্ধার করেন দ্বিতীয়বার সরকারে আসার বিষয়ে বাজপেয়ী এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে আদবানির সঙ্গে পরামর্শ করে ভোট 6 মাস এগিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। শুরু হয়েছিল সারা দেশ জুড়ে "শাইনিং ইন্ডিয়া"র বিজ্ঞাপন। তারপর কি ফল হয়েছিল সবার জানা।
এবার ছয় মাস আগে হিন্দি বলয়ে তিন রাজ্যের ভোট সাফল্য পেয়েই সংসদে প্রধানমন্ত্রী নিজের তৃতীয় টার্মের কর্মসূচি ঘোষণা করে দিলেন। এসে গেল মোদির গ্যারান্টি! পাল্টা এল ফোর টুয়েন্টি! পলিটিক্সে সবই চলে! হাইব্রিড ইঞ্জিনের চলনটা কেমন হবে রাজ্যবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে দেখার জন্য!
ভোট পর্ব শেষ হওয়ার মুখে। "হাওয়া হাওয়া মুঝকো লুটা দে...." হাওয়া ঘুরছে, সঙ্গে ঘুরছে বাকিরাও, ঘুরছে মিডিয়া, ঘুরছে রাজপূত, ঘুরছে পন্ডিত, ঘুরছে যোগীর উত্তরপ্রদেশ, নীতিশের বিহার, শিন্ডের মহারাষ্ট্র। 74 বর্ষীয় বিষ্ণুর অবতারকে টক্কর দিতে এগিয়ে আসছে এক ঝাঁক নবীন - তেজস্বী, অখিলেশ, অরবিন্দ, শচীন, কানাহাইয়া এবং হাজার হাজার মাইল হাঁটা রাহুল। শুধু পাল্লার দিকে নজর এক যুবকের। তার দৃষ্টি প্রখর না হলেও তাকেই তো হতে হবে হাইব্রিড ইঞ্জিনের ড্রাইভার। কিন্তু সেই যুবকের ধারণা নেই গোকুলে বাড়ছেন যিনি (বাম কংগ্রেস) - তিনিই লাস্ট কামরার গার্ড হবেন বলে অপেক্ষা করছেন!