4thPillar


আপনি নিজে কজন মুসলমানকে চেনেন?

পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়April 4, 2025
আপনি নিজে কজন মুসলমানকে চেনেন?

(1)

বুকে হাত দিয়ে বলুন। 

আমি চিনি। খুব কাছ থেকে চিনি। অনেক বছর ধরে চিনি। তারা উদারহৃদয়। তারা উষ্ণ। তারা উপকারী। তারা প্রকৃত বন্ধু। আমি তাদের ভালোবাসি। তার জন্যে আমাকে বাংলাদেশী বা পাকিস্তানী হতে হবেনা। 

আমি আমেরিকায় গিয়ে সারা পৃথিবীর মুসলমানদের খুব কাছ থেকে দেখেছি। যা হনুমানরা কল্পনাও করতে পারবে না। আমি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, ক্যানাডা, আমেরিকা, সুদান, ইথিওপিয়া, সেনেগাল, কেনিয়া, জর্দান, ইজরায়েল, প্যালেস্টাইন -- এসব দেশের কয়েক হাজার মুসলমানের সঙ্গে মিশেছি। তাদের বাড়ি গিয়ে থেকেছি। খেয়েছি। তাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে অনেক কথা বলেছি। 

আমি সারা পৃথিবীর আন্ডারপ্রিভিলেজড ছেলেমেয়েদের ইংরিজি শিখিয়ে যাচ্ছি কয়েক বছর ধরে আমার ইউটিউব চ্যানেলে। পয়সা নিইনা। এদের মধ্যে কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে বাংলাদেশের মুসলমান। আমার ভারতের অধ্যাপকজীবনের সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র ও সহকর্মীদের মধ্যে ছিল মুসলমান। এখনো তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়ে গেছে। 

আমি বাংলাদেশের শহরে, গ্রামে, উপশহরে গেছি, থেকেছি। আমি একশো ভাগ হিন্দু। আমি স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণদেবের ভক্ত। কিন্তু আমি মুসলিমবিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদীদের চরম বিরোধী। ও হ্যাঁ, বলা হয়নি, আমি আবার এই হনুমানবাহিনীর সঙ্গেও বহুকাল ওঠাবসা করেছি। 

কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, আরএসএস-বিজেপি বেশি ভালো, না আমার চেনা-দেখা অসংখ্য মুসলমান -- সারা পৃথিবীর মুসলমান? আমি উত্তরই দেবোনা। কারণ, ফালতু প্রশ্নের উত্তর আমি দিইনা। 

আমার জীবনই আমার উত্তর।

(2)

শিশু অবস্থা থেকে বালক অবস্থায় পদার্পণ ঘটার এই আধো ঘুম আধো জাগার সময়ে মুসলমান বন্ধু রবীন্দ্রসঙ্গীতে পরপর দুবার ফার্স্ট প্রাইজ পাওয়া চঞ্চল আহমেদের ছাতা ফুটো করে দিয়েছিলাম আমার ছাতার শিক দিয়ে। ওর একমাত্র অপরাধ ছিল, ও মুসলমান। আর আমার মুসলমানবিদ্বেষ জন্মাচ্ছিলো বাবার সংগঠন আর এস এসে এ্যাক্টিভিটি শুরু করার সুবাদে। তখন আমি মাত্র ক্লাস ফোর। নিষ্পাপ শিশু থেকে কর্কশ বালক-কিশোর জীবনে গ্র্যাজুয়েশন হচ্ছে। 

ঘটিকাহিনি'তে এই ঘটনার বিশদ বর্ণনা দিয়েছি, তাই এখানে দিতে চাইনা আর। তবে, চঞ্চলের সঙ্গে কারুর যদি কখনো দেখা হয়, বলবেন, পার্থ তোমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। ও বলেছে, ছাতার দাম শোধ দিতেও রাজি আছে। অপমানের দাম শোধ ও তো আর দিতে পারবেনা। 

(3)

আমার অনেক লেখায়, বইতে, আলোচনায় আমি বলেছি আরএসএস বিজেপি জমানার সঙ্গে হিটলারের জার্মানির আশ্চর্য মিল। আরএসএস শুরুই হয়েছিল হিটলার মুসোলিনির পদাঙ্ক অনুসরণ করে। তাদের গেস্টাপো ও এসএস যেভাবে বেছে বেছে ইহুদীদের মারত, নির্যাতন করত, জেলে নিয়ে যেত, আজ ভারতে মুসলমানদের সেই অবস্থা। জয়পুর এক্সপ্রেসে গুলি চালিয়ে বেছে বেছে মুসলমানদের মেরেছে এক কনস্টেবল। এবং মারার সময়ে সে মোদী ও যোগীর নাম নিয়েছে। ঠিক যেমন হাইল হিটলার বলে ইহুদীদের মারতো গেস্টাপো বাহিনী। 

যোগীর রাজ্য উত্তরপ্রদেশে বুলডোজার দিয়ে অসংখ্য মুসলমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিনা নোটিসে, বিনা বিচারে। এমন কি ভারতের সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত সে অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার জানিয়েছে এই সেদিন। 


আপনি নিজে কজন মুসলমানকে চেনেন?

অবশ্য আমার অনেক “বন্ধু” আছে, যারা এই ঘটনাকেও সমর্থন করবে। ভারত এখন একেবারেই হিটলারের জার্মানির প্রথম অবস্থা। দু হাজার চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে আরএসএস-বিজেপি জিতে গেলে তা হয়ে যাবে সম্পূর্ণভাবেই একটি ফ্যাসিস্ট দেশ -- এ কথা আমার বই "ভারত শেষ ধ্বংসের সন্ধিক্ষণে"তে লিখেছি। চব্বিশে ওরা চারশো আসন পায়নি। কিন্তু ওরা কাজ থামায় নি। যে মুহূর্তে ওরা সে সংখ্যায় পৌঁছবে, ভারত হয়ে যাবে আক্ষরিক ভাবেই একটা ফ্যাসিস্ট দেশ। 

সেখানে মুসলমান তো বটেই, যে কোনও বিরোধী দলকে এবং তাদের নেতা নেত্রী কর্মীদের ধ্বংস করার রাস্তা খুব সহজ হয়ে যাবে। জার্মানিতেও কেউ ভাবেনি, হিটলারের বাহিনী এমন দানব হয়ে উঠতে পারে। লিবারালরা, এলিটরা উড়িয়ে দিয়েছিল। নিরপেক্ষ সেজে থেকেছিল অনেকেই।   

তারপরের ইতিহাস আমরা সবাই জানি। ওহ না, ভুল বললাম, ইতিহাস আমরা আর পড়িনা।

আমরা যারা আরএসএস, বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, এবিভিপি, বজরং দল বা এদের আরও যেসব হাজার ধর্মান্ধ হিংস্র সংগঠন আছে, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছি, আমাদের অনেকের কয়েকটা প্রব্লেম আছে। এটা আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ। এক, আমরা অনেকেই মানুষের ধর্মবোধ বা স্পিরিচুয়ালিটিকে সম্মান দিই না, এবং ধর্মবোধকেই অস্বীকার করি। 

তার ফলে, তারা যখন ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই করে, তাদের যথেষ্ট আদর্শগত জোর থাকা সত্ত্বেও তাদের আন্দোলন পালে তেমন বাতাস পায় না। দুই, আর একদল আছে যারা হিন্দুত্ববাদী ধর্মান্ধতা, হিংসা ও ঘৃণার রাজনীতি এবং দাঙ্গা নিয়ে প্রবল আন্দোলন করে, কিন্তু চরমপন্থী মুসলিম বা চরমপন্থী খৃস্টানদের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলে না। 

ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে সবরকমের ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। নাহলে তা দ্বিচারিতা বা হিপোক্রিসি হয়ে যাবে। তবে, এই মুহূর্তে ভারতের মতো দেশে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টরাই সবচেয়ে বড় বিপদ। তাই দল-মত-ধর্ম-জাতি নির্বিশেষে তাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে রুখে দাঁড়ানোই প্রধান কর্তব্য। 

 

Partha Banerjee, Ph.D.

 

Wikipedia at https://en.wikipedia.org/wiki/Partha_Banerjee

 

Blog at onefinalblog.wordpress.com


New
পহেলগাম থেকে মুর্শিদাবাদ – এক বিদ্বেষের রাজনীতি
নিজবাসভূমে পরভাষী
মহাকুম্ভের অমৃতবারি ও অন্ধদের হস্তিদর্শন


Other Writings by -পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

// Event for pushed the video