4thPillar


অন্তরীণ গালিব : ১৮৫৭

সঞ্চারী সেন | 28-03-2020July 9, 2023
অন্তরীণ গালিব : ১৮৫৭

‘কব সে হুঁ কেয়া বতাউঁ

জহাঁ এ খরাব মেঁ

শব হায় হিজর কো

ভি রখুঁ গর হিসাব মেঁ’

 

বহুকাল রয়েছি এ নিষ্ঠুর পৃথিবীতে

বিচ্ছেদরজনী যদি রাখি গণনাতে

 

অনেক কাল আগে কোনও এক সময়ে এমনই মনে হয়েছিল গালিবের, যখন কাব্যচর্চার চূড়ান্ত পর্যায়ে হয়তো তিনি আবদ্ধ ছিলেন নিজের শূন্য হৃদয়ের গহন অন্তর্লোকে। কিন্তু আজকের এ কাহিনী অন্য। এই গল্পে গালিব গৃহবন্দী, হিসেব করলে প্রায় এক বছর দু' মাস এবং আরো কিছু দিনের জন্য। অবিশ্বাস্য ঠেকছে? বেশ, তবে নিজেরাই হিসেব করুন, ১৮৫৭-র  ১১ মে থেকে পরের বছর অর্থাৎ '৫৮-র জুলাই মাস পর্যন্ত। গালিব তাঁর ফার্সিতে লেখা ডায়েরিতে (‘দস্তমবু’, যার অর্থ পুষ্পস্তবক) এমনটাই লিখেছেন।  ইতিহাসও এর সাক্ষী। তখন দ্রোহকাল, তখন চতুর্দিকে সঙ্কট।

গালিব লিখছেন:

‘…১৬ই রমজান ১২৭৩ এবং ইংরেজি ১১ মে, ১৮৫৭-র দ্বিপ্রহরে হঠাৎ দিল্লির কেল্লার দরজা ও দেওয়াল কেঁপে উঠল। ...কিছু নিঃসহায়, পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন মানুষ আতঙ্কিত ও শোকার্ত হয়ে নিজের নিজের ঘরে বসে রইলেন। …সেই শোকগ্রস্ত মানুষদের অন্যতম আমিও। ...আমার দুঃখময় দিনগুলির কথা তোমাদের কাছে গল্পের মতোই শোনাবে, কিন্তু এ কাহিনী শুনলে তারার চোখ থেকেও  অশ্রু হয়ে ঝরে পড়বে রক্ত’

 

এর চার মাস পরে, ১৮ সেপ্টেম্বর, গালিব লিখছেন:

 

‘সারা শহরে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সব ঘরের দরজা বন্ধ। দোকানদার ও খরিদ্দার সব গায়েব। না আছে শস্য বিক্রেতা যে গম কেনা হবে, না ধোপা যে কাপড় ধুতে দেওয়া হবে। …এর আগে …গলির লোকেরা বাইরে বেরিয়ে জল তো আনতই, মাঝে মাঝে আটাও পাওয়া যেত। এখন সে অবস্থা আর নেই। …গলির দরজা পাথর দিয়ে বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ও অন্ধকার হয়ে গেছে, আফসোস এ ক্রন্দন এ বিলাপে। ...হায় এ অসহায়তা ও দুঃখ, এ কি চিরন্তন?’

 

না, ইতিহাস বলছে, সে সময়ও অন্তহীন ছিলনা।

 

তার চেয়ে বড় কথা এমন পরিস্থিতিতেও গালিব নিজের সৃষ্টিশীলতা এবং রসবোধ হারিয়ে যেতে দেননি। সিপাহী বিদ্রোহে সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ ছিল মুসলমান সম্প্রদায়ের, চরমতম শাস্তিও তাই নির্ধারিত হয়েছিল তাঁদেরই জন্য। এ সময়েই কর্নেল বার্ন নামে এক ফৌজি অফিসারের জেরার উত্তরে গালিব বলেছিলেন, ‘হুজুর ম্যাঁয় তো আধা মুসলমান হুঁ, আধা ইসলিয়ে কে শরাব পীতা হুঁ, পর সুঅর নহীঁ খাতা।’

 

ইসলামে শরাব ও শুয়োর দুই ই মানা, গালিব এর মধ্যে একটির ভক্ত, তাই এমন রসিকতা। কোনও এক সময়ে কাব্যে লিখেছিলেন:

 

‘রনজ সে খূ গর হুয়া ইনসাঁ

তো মিট যাতা হ্যায় রনজ

মুশকিলেঁ ইতনী পড়ী মুঝ পর

কে আসাঁ হো গয়েঁ’

 

দুঃখে অভ্যেস হয়ে গেলে দুঃখ ঘুচে যায়

দুরূহ সময়গুলোও ক্রমে সহজ হয়ে এল।

এমনটাই নিয়ম প্রকৃতির, শরতের আকাশের মতোই আপনার মনে নিরন্তর খেলা তার।


New
বিদায় পিটি নায়ার: কলকাতার ইতিহাসবেত্তা
এগজিট পোল মিলে গেলেও যে প্রশ্ন উঠবেই
কংগ্রেস সেঞ্চুরি না করলে কে রুখবে বিজেপিকে?


Other Writings by -সঞ্চারী সেন | 28-03-2020

// Event for pushed the video