এবার আইপিএল ফাইনাল একেবারে জমেনি। একতরফা ম্যাচে অনায়াস জয় পেয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। তবে ইন্ডিয়ান ইলেকশন লিগ একেবারে জমজমাট।
আর তিনদিন পর শেষ দফার নির্বাচন, সেই পয়লা জুন সন্ধ্যেয় প্রকাশিত হবে একের পর এক এক্সিট পোল। ভোট পণ্ডিতরা মোটের উপর বিজেপির ক্ষমতায় ফেরার ইঙ্গিত দিলেও তাঁরা একমত, এটা বলা যাবে না।
দেশের নির্বাচন বিশ্লেষক হিসেবে শীর্ষস্থানীয় দুই ব্যক্তিত্ব নেটপাড়াকে মাতিয়ে রেখেছেন ভোট তর্কে। তাঁদের একজন, প্রাক্তন সেফোলজিস্ট যোগেন্দ্র যাদবের মতে, বিজেপি চলতি নির্বাচনে অনেক আসন হারাতে চলেছে। তারা একক বৃহত্তম দল হলেও নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা থেকে পিছনে থাকবে। অপরজন প্রাক্তন ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর। তিনি বলছেন, বিজেপি 2019 সালের লোকসভা ভোটের মতোই 300-র বেশি আসন পেতে চলেছে। তাদের ফল গতবারের থেকে ভালো হবে।
543টা কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা 90 কোটি। এমন দেশে মানুষের মন বোঝা সহজ নয়। নির্বাচনের বিশেষজ্ঞরা কতবার এ কাজ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। 2004 সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর ক্ষমতায় ফেরা নিশ্চিত বলে যে সংবাদমাধ্যম প্রচার করেছিল, তাদের হিসেব উল্টে দিয়েছিল জনতা। এই কয়েকমাস আগে ছত্তিশগড় বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় সব পণ্ডিত বলেছিলেন, কংগ্রেসের ক্ষমতায় ফেরা নিশ্চিত। কিন্তু সবাইকে অবাক করে ভোটে জিতে গিয়েছে বিজেপি।
তবু অতীতের নির্বাচনের পরিসংখ্যান, এবারের পরিস্থিতি, রাজনৈতিক দলের সমীকরণ, চলমান ইস্যু ইত্যাদি বিবেচনা করে ভোট বিশেষজ্ঞরা আগাম অনুমান করেই থাকেন। সব দফার ভোট মিটে গেলে সেফোলজিস্টরা দেখানোর চেষ্টা করেন, কোন দল কটি আসন জিতবে। সেই ফল মিলে গেলে স্টুডিওতেই তারা আনন্দে কোমর দুলিয়ে ওঠেন, কিন্তু এবারের নির্বাচন তাদের সকলের সামনেই একটা কঠিন প্রশ্নপত্র এনে হাজির করেছে।
বিজেপি এবার 400 আসন জেতার ডাক দিয়েছিল। কয়েক মাস আগেও মনে হচ্ছিল, ভোটের আগেই যেন ফল ঠিক হয়ে গিয়েছে! বিরোধীরা ছিল অগোছালো। ক্রমশ পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। এখন আর কেউ 400 আসনের কথা বলছে না, সেটা কমে হয়েছে 370। প্রশ্ন উঠেছে, বিজেপি কি একক ক্ষমতায় সরকার গঠন করতে পারবে? নাকি তাদের জোটসঙ্গীদের উপর নির্ভর করতে হবে?
যোগেন্দ্র যাদবের যুক্তি
এই প্রশ্নকে আরো ঘোরালো করে তুলেছেন যোগেন্দ্র যাদব। সেফোলজি ছেড়ে দিয়েছেন 2012 সালে। এরপর ভোট সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করলেও তা নেহাৎ পর্যবেক্ষকের ভূমিকায়। এখন পুরোদস্তুর রাজনৈতিক কর্মী যোগেন্দ্র ভোটের আগে এবং নির্বাচন চলাকালীন কয়েকটি রাজ্যের সফর করেছেন। কথা বলেছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাঁর ধারণা, বিজেপি গতবারের জেতা আসনের 50টির বেশি হারাতে পারে।
যোগেন্দ্র বক্তব্য, "বিজেপি উত্তর ও পশ্চিম ভারতে ভালোই ধাক্কা খেতে চলেছে। রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, দিল্লির মতো রাজ্যে প্রায় সব আসনে বিজেপি জয়ী হয়েছিল। এবার প্রতিটি রাজ্যেই আসন হারাতে চলেছে তারা। মহারাষ্ট্রে জোটসঙ্গীদের খারাপ ফল নরেন্দ্র মোদীর বাহিনীকে চাপে ফেলতে পারে। একই সঙ্গে দক্ষিণের কর্নাটকে গতবারের তুলনায় বেশ কয়েকটি আসন হারাতে পারে বিজেপি।"
এই কটি রাজ্যে বিজেপির আসন বাড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, বরং কয়েকটি আসন কমতে পারে। উত্তরপ্রদেশে গতবার গেরুয়া শিবির 62টি আসনে জয়ী হয়েছিল। উত্তর ও পশ্চিম ভারতের ঘাটতি পোষানোর জন্য বিজেপি যোগী আদিত্যনাথের দিকে তাকিয়ে থাকলেও কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির জোট তা সফল হতে দেবে না, এমনটাই ধারণা যোগেন্দ্র যাদবের।
দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতে বিজেপি গতবারের তুলনায় ভালো ফল করবে বলে মনে করেন যোগেন্দ্র। তিনি বলেন, "কর্নাটক বাদ দিলে অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ুতে আসন বাড়বে পদ্ম শিবিরের। পূর্বের আসাম, ওড়িশায় বিজেপি ভালো ফল করবে। গতবারের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির আসন বাড়বে না। সুতরাং উত্তর ও পশ্চিম ভারতে সঙ্গে কর্নাটকে বিজেপির যে ক্ষতি হবে, তা দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের বাড়তি আসন দিয়ে পূরণ করা যাবে না।"
মহারাষ্ট্র থেকে বিহার, এই দুই বড় রাজ্যে বিজেপির জোটসঙ্গীরা খুব একটা ভালো জায়গায় নেই। মহারাষ্ট্রে শিবসেনা ও এনসিপি এবার কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি। গতবার এ রাজ্যে বিজেপি ও শিবসেনা জোট 48টি আসনের মধ্যে 41টিতে জয়ী হয়েছিল।
এবার সেই সংখ্যা নিশ্চিত ভাবে কমবে বলে মত যোগেন্দ্রর। তিনি বলেন, "বিহারে জনতা দল ইউনাইটেড এবার খারাপ ফল করতে চলেছে। গতবার 40টির মধ্যে 39টি আসন এই জোট পেয়েছিল। এবার বিজেপি 17 আসনে লড়ছে। তারা খুব বেশি আসল না হারালেও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা নীতীশ কুমারের দলের।"
অন্ধ্রপ্রদেশের তেলুগু দেশম পার্টি ছাড়া বিজেপির আর কোনও জোটসঙ্গী এবার ভালো ফল করার জায়গায় নেই, এমন দাবি করে যোগেন্দ্র বলেন, "বিজেপি যদি 250টি আসনের কাছাকাছি নেমে আসে, তাহলে ইন্ডিয়ার অন্যান্য শরিকদের আসন জুড়েও প্রয়োজনীয় 272 সংখ্যাটি মোদির অধরা থেকে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অন্যান্য দলের সমর্থনে বিজেপির সরকার হতেই পারে। তবে তা 2019-এর মতো মোদীর একক ক্ষমতায় বলিয়ান সরকার হবে না।"
প্রশান্ত কিশোরের কৈফিয়ৎ
প্রশান্ত কিশোরও এখন একজন রাজনৈতিক কর্মী। 2022 সালের পর থেকে তিনি আর ভোট কুশলীর কাজ করেন না। আইপ্যাক নামক সংস্থাটি এখন তাঁর অনুগামীরা চালান। মাসের পর মাস তিনি চষে বেরিয়েছেন নিজের রাজ্য বিহার। কীভাবে রাজনৈতিক বিকল্প গড়ে তোলা যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করেছেন। এই ভোটের মরশুমে হঠাৎই ভোট বিশ্লেষকের চেনা অবতারে আবার দেখা যাচ্ছে প্রশান্ত কিশোরকে।
যোগেন্দ্র যাদবের মতো পিকে একের পর এক ইউটিউব প্লাটফর্মে সাক্ষাৎকার দিয়ে চলেছেন। তাঁর বক্তব্যের সারমর্ম, নরেন্দ্র মোদী আরও একবার ক্ষমতায় আসতে চলেছেন।
পিকে বলছেন, "উত্তর ও পশ্চিম ভারতের সঙ্গে কর্নাটককে জুড়ে যদি একটি রাজনৈতিক মানচিত্রে রাখা যায়, তাহলে বিজেপির খুব বেশি ক্ষতি হবে না। 50 এর বেশি আসন এই রাজ্যগুলিতে বিজেপি হারালে তবে তাকে গুরুতর ক্ষতি বলা যেতে পারে। যদি সেটাই হয়, তাহলে দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতে বিজেপি যে আসন বাড়াতে পারবে, তার ভিত্তিতে গতবারের তুলনায় সার্বিক ভালো ফল তাদের হতে পারে।"
যোগেন্দ্রর মতো একই সুরে প্রশান্তর বক্তব্য, "10 বছরের নরেন্দ্র মোদীর শাসনে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা আছে। কিন্তু প্রচণ্ড ক্রোধ নেই। অনেকটাই শীতল বা ঠান্ডা সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া। মোদী সম্পর্কে তাঁর বহু সমর্থকের মোহভঙ্গ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু বিরোধী নেতৃত্বের অভাবে তাঁরা নিমরাজি হয়ে আরও একবার মোদীর দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।"
মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে ভালো ফল হবে বিজেপির। পিকে অনেক আগেই বলেছেন, বাংলার ফল এবার সকলকে চমকে দেবে। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ থেকে আরও বেশি আসনে বিজেপি জিতবে।
প্রশান্তর মতে, "তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা ও ওড়িশায় আসন বাড়বে গেরুয়া বাহিনীর। তাদের যা ক্ষতি উত্তর ও পশ্চিম ভারত এবং কর্নাটকে হবে, সেটা মোদী ব্রিগেড দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের ফলে পুষিয়ে দেবে। তাতে বিজেপি গতবার যে 303 আসনে জয় পেয়েছিল, তার থেকে বেশি আসন পাবে।"
2014 সালে ইউপিএর দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ বেছে নিয়েছিল বিজেপিকে। 2019 সালে তারা কিছুটা বেকায়দায় থাকলেও, পুলওয়ামা হামলা ও বালাকোটে অভিযান বদলে দিয়েছিল ছবি। এবারের নিস্তরঙ্গ নির্বাচনে কেন বিজেপিকে আরও বেশি আসন দিতে চাইছেন প্রশান্ত?
জবাবে পিকে বলেছেন, "এবারের ভোটে বিজেপির বৃহত্তর জয়ের নেপথ্যে রয়েছে বিরোধীদের ব্যর্থতা। এর আগের দুবার পরিচ্ছন্ন ইনিংস খেলে সেঞ্চুরি করেছিলেন মোদী। কিন্তু এবার ছবার ক্যাচ তুলে তিনি সেঞ্চুরি করতে চলেছেন। এটা কিন্তু রেকর্ড বুকে লেখা থাকবে। বিরোধীদের ব্যর্থতা যে তারা প্রধানমন্ত্রীর ভুলের সুযোগ নিতে পারেনি। তাই বারবার বিজেপির ফেরার রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে বিরোধীরা।"
এজন্য কংগ্রেসকে অনেকটাই দায়ী করেছেন প্রশান্ত কিশোর। বলেছেন, "গত বছর ইন্ডিয়া জোট তৈরি হওয়ার পর তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। বিজেপি কিছুটা চাপে পড়েছিল বলে আবার এনডিএকে জাগিয়ে তোলে। কিন্তু কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস হাত গুটিয়ে নেয়। তারা আশা করেছিল, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্রিশগড়ের ফলকে পুঁজি করে জোটের নেতৃত্ব দেবে। অনেকটা সময় এতে নষ্ট হয়ে যায়। তারপর জোট সেভাবে আর দানা বাধেনি। বিরোধীদের এই অগোছালো জোট মোদীর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করার জন্য যথেষ্ট নয়।"
যোগেন্দ্র যাদব সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "আমি যে সব মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের প্রতি 10 জনের ছয়জন বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কথা বলেছে।" এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পিকে বলেন, "বিজেপি গতবার 37 শতাংশ ভোট পেয়েছিল। অর্থাৎ গত নির্বাচনে প্রতি 10 জনের মধ্যে ছয়জনের বেশি ভোটার বিজেপির বিপক্ষেই ভোট দিয়েছেন।"
সুতরাং 10 জনের মধ্যে চারজনের কম মানুষের ভোট নিয়ে সহজেই বিজেপি সরকার গড়তে পারে বলে মনে করছেন প্রশান্ত কিশোর। এ প্রসঙ্গে স্মরণীয়, 2009 সালে কংগ্রেস মাত্র 145টি আসনে জয়ী হয়েও দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার গঠন করতে পেরেছিল। এবার কংগ্রেস স্বাধীনতার পর সবচেয়ে কম আসনে লড়ছে। হাত চিহ্নের প্রার্থীরা রয়েছেন 330টি কেন্দ্রে। বিজেপি লড়ছে 440 আসনে।
দেশের দুই শীর্ষ ভোট পণ্ডিতের মধ্যে কার মত ঠিক, সেটা বোঝা যাবে চার জুন দুপুরের মধ্যে। তার আগে গত নির্বাচনের কিছু পরিসংখ্যানে নজর রাখলে একটা অনুমান আপনিও তৈরি করতে পারেন।
কোন ফর্মুলায় হারজিত?
এজন্য 2019 সালের নির্বাচনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটা ছবি সামনে থাকা প্রয়োজন। গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেস ও বিজেপির সরাসরি লড়াই 190টি আসনে। বিজেপির সঙ্গে আঞ্চলিক দলগুলির সরাসরি লড়াই ছিল 185টি কেন্দ্রে। কংগ্রেসের সঙ্গে আঞ্চলিক দলগুলি লড়েছিল 71টি আসনে। দুটি আঞ্চলিক দলের মধ্যে লড়াই সরাসরি হয়েছিল 97টি কেন্দ্রে।
সরাসরি লড়াইয়ের 190টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস মাত্র 15টি কেন্দ্রে জয় পায়। বিজেপির জয় এসেছিল মূলত মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, গুজরাট, রাজস্থান, হরিয়ানা, আসাম ও কর্নাটকে। যে 175 টি আসনে বিজেপি জিতেছিল, তার মধ্যে 153টি কেন্দ্রে তাদের প্রাপ্ত ভোট ছিল 50 শতাংশের উপরে।
সরাসরি লড়াইয়ের আসনগুলির মধ্যে দুই দলের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান ছিল 20 শতাংশ। দুই লক্ষের বেশি ভোটে বিজেপি যেতে 164টি কেন্দ্রে। এর মধ্যে 114টি কেন্দ্রে জয় এসেছিল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। তিন লাখের বেশি ভোটে বিজেপি জেতে 105টি আসনে। এর অর্ধেকের বেশি আসনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তারা জয় পায়।
এবারের নির্বাচনের সম্ভাবনা অনুযায়ী, রাজ্যগুলির মধ্যে একমাত্র কর্নাটকে কংগ্রেস প্রায় সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছে বিজেপিকে। গত লোকসভায় এই রাজ্যের 28টির মধ্যে 25টি কেন্দ্রে বিজেপি জিতেছিল। সম্প্রতি বিধানসভা নির্বাচনে এখানে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিজেপি এখানে কমবেশি 10টির মতো আসন কংগ্রেসের কাছে হারাতে পারে। কিন্তু উত্তর ও পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতে বিজেপির হাত থেকে অনেক আসন ছিনিয়ে আনতে হবে কংগ্রেসকে।
গান্ধী ব্রিগেড গতবার গোটা দেশে 52টি কেন্দ্রে জিতেছিল। এর মধ্যে 31টি আসন এসেছিল তিনটি রাজ্য থেকে। সবচেয়ে বেশি জয় কেরলে, 15টি কেন্দ্রে। এখানে তাদের লড়াই জোটসঙ্গী বামপন্থীদের সঙ্গে। সুতরাং বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের ফল ভালো না হলে তারা সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারবে না। পরিণামে বিজেপির গরিষ্ঠতার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া নিশ্চিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অমিত শাহ আগেই বলেছেন, কংগ্রেস ৪০টির বেশি আসন পাবে না। তাঁদের কথা মিলে গেলে প্রশান্ত কিশোরের ভবিষ্যৎবাণী সত্যি হয়ে যাবে।
এবারের নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে বড় ভূমিকা আঞ্চলিক দলগুলির। 2019 সালের ভোটে বিজেপির সঙ্গে আঞ্চলিক দলগুলির সরাসরি লড়াই ছিল ১৮৫টি আসনে। এর মধ্যে বিজেপি যেতে 128টি কেন্দ্রে, বাকি ৫৭টিতে আঞ্চলিক দল। এই আসনগুলি মূলত পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার ও ওড়িশায়। যে 128টি কেন্দ্রে বিজেপি জিতেছিল, তার মধ্যে ৭২টি কেন্দ্রে গেরুয়া শিবিরের প্রাপ্ত ভোট ছিল 50 শতাংশের উপরে।
দুই শিবিরের লড়াইয়ে প্রাপ্ত ভোটের ফারাক ছিল সাড়ে সাত শতাংশের মতো। এই আসনগুলির একাংশে কংগ্রেসের কিছুটা শক্তি আছে। বিজেপি ও আঞ্চলিক দলগুলির পর কংগ্রেস প্রার্থী 88টি আসনে তৃতীয় স্থানে ছিল। তাদের গড় প্রাপ্ত ভোটের হার চার শতাংশ। এই ভোট সমাজবাদী পার্টির মতো দলের সঙ্গে জুড়ে গেলে বিজেপির কাজটা কঠিন হবে।
এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দলগুলির বিরুদ্ধে বিজেপি মোট 225টি আসনে 50 শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। 100-র বেশি কেন্দ্রে বিজেপি দুই বা তিন লক্ষ ভোটে কংগ্রেসকে হারিয়েছিল। এই বিপুল ব্যবধান কি কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দলগুলি মুছে দিতে পারবে, এই প্রশ্নে অনেকটাই লুকিয়ে রয়েছে এবারের ভোটের ফল।
কলকাতার ময়দানে এক পিকে ছিলেন। দারুণ ভোকাল টনিক দিতেন ফুটবলারদের। তাঁকে ডাকা হত ভোট ব্যানার্জি বলে। ভোটে জিততে কে হবেন রাহুল গান্ধীর পিকে?