সোনম ওয়াংচুক। লোকসভা ভোট, ইলেক্টোরাল বন্ড, কেজরিওয়াল - এসব খবরের ভিড়ে এই নামটা হয়তো অনেকেরই নজর এড়িয়ে গেছে। বা সেভাবে খেয়াল করেননি। তবে রাজকুমার হিরানির থ্রি ইডিয়টস্ সিনেমা যারা দেখেছেন তারা সহজেই চিনবেন বাস্তবের এই র্যঞ্চোকে। আমির খান অভিনীত যে চরিত্র আমাদের মুগ্ধ করেছিল। বাস্তবে তিনিই সোনম ওয়াংচুক। সম্প্রতি একটানা 21 দিন অনশন করলেন এই মানুষটি। কী কারণে তাঁর এই অনশন?
2019 সালে জম্মু কাশ্মীরে 370 ধারা বিলোপের পর কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হয় লেহ্ লাদাখ। কেন্দ্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলের আওতায় আনা হবে লাদাখকে। ষষ্ঠ তফশিলের আওতায় এলে এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রন থাকবে স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর হাতে। অন্যথায় রাজনীতি আর কর্পোরেটের যোগসাজশে ধ্বংস হয়ে যাবে প্রকৃতি। লাদাখের বিপুল খনিজ সম্পদকে কর্পোরেটের কালো থাবা থেকে বাঁচাতেই হবে। প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে যথেচ্ছ নির্মাণ কী ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে আমরা তার ভয়াল রূপ দেখছি, উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ে, অসহায় হয়ে দেখতে হচ্ছে, ক্রমশঃ ডুবছে যোশীমঠ। গত বর্ষায় সিকিমে হিমবাহ ফেটে হঠাৎ বন্যা বুঝিয়েছে , প্রকৃতি রক্ষায় এখনও সচেতন না হলে কতটা নির্মম হয়ে উঠতে পারে প্রকৃতি।
থ্রি ইডিয়টস্ সিনেমায় যেমন দেখানো হয়েছে, লাদাখে যথার্থই তেমনই স্কুল আছে ওয়াংচুকের। যেখানে শুধু অকৃতকার্য ছাত্ররাই পড়ার সুযোগ পেত। আর এভাবেই ওয়াংচুক শিক্ষার হারে পাঁচ শতাংশ থেকে পঁচাত্তর শতাংশে পৌঁছে দিয়েছেন লাদাখকে। লাদাখের কনকনে শীতের কামড় থেকে বাঁচাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্যে বানিয়েছেন সোলার হিটেড টেন্ট। পৃথিবীর একমাত্র কৃত্রিম হিমবাহ তাঁরই মস্তিষ্ক প্রসূত। যা গ্রীষ্মে লাদাখবাসীর জলের সমস্যা মেটায়, চাষের কাজে লাগে এবং এই সমস্ত কাজে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক এনার্জি ব্যবহৃত হয়।
ষষ্ঠ তফশিলের অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা প্রদান, লাদাখের নিজস্ব পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন ও সংসদে লাদাখের অংশীদারিত্ব বাড়ানো। এই সব দাবিকে সামনে রেখে 6ই মার্চ থেকে অনশন আন্দোলন শুরু করেছেন ওয়াংচুক। সঙ্গে পেয়েছেন প্রায় ত্রিশ হাজার লাদাখবাসীকে। একাধারে শিক্ষাবিদ, পরিবেশবিদ ও সমাজকর্মী ওয়াংচুক জানিয়েছেন,তাঁর ঘোষিত একটানা একুশ দিন অনশনের পর, এখনও প্রায় 300 মহিলা চালিয়ে যাচ্ছেন অনশন কর্মসূচি। এরপর অনশনে বসবেন যুবকরা। তারপর আবার অনশন করবেন সোনম ওয়াংচুক। এই আমরণ অনশন কর্মসূচি তারা চালিয়ে যাবেন যতদিন না তাদের দাবি মানছে সরকার।
ক্রমশঃ মানুষের নজর কাড়ছে এই আন্দোলন। কলকাতাতেও আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। কারণ এ লড়াই শুধু লাদাখের নয়। এ লড়াই আমার, আপনার, সবার। আগামী প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে হলে হাতে হাত মিলিয়ে এ লড়াই লড়তে হবে। অন্ধ হলে যে প্রলয় বন্ধ হবে না, তা আজ প্রমানিত সত্য। তাই আপাতত অল ইজ নট ওয়েল ইন লাদাখ।