4thPillar


মিসেস চ্যাটার্জিদের কথা

সুস্মিতা ঘোষMay 8, 2023
মিসেস চ্যাটার্জিদের কথা

সে 90 দশকের মাঝামাঝির কথা। আমি তখন নতুন মা, আবার আমেরিকার একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট। বলাই বাহুল্য বেবি সিটার ছাড়া চলেনা। প্রথমে এক গুজরাতি  প্রৌঢ়ার সাহায্য নিয়েছিলাম। তার বাড়িটা একটু দূরে বলে কাছাকাছির মধ্যে এক সাদা আমেরিকান মহিলাকে বেবি সিটার রাখলাম। তার দুটো মেয়ে একটার বয়স তিন, অন্যটা আমার কন্যার চেয়ে মাসখানেকের ছোট। আমার কন্যার বয়স তখন ছয় মাস। ভাবলাম ভালোই হবে দুটি বাচ্চার সঙ্গ পেয়ে তাদের বাড়িতে আনন্দেই থাকবে মেয়ে। এমনি আনন্দেই ছিল কিন্তু সকালে বেরোনোর আগে, বা সন্ধ্যেবেলা ঘরে ফিরে কিছুতেই খেতে চাইত না। আক্কেল গুড়ুম হল তখন মেয়ে না মাসে পৌঁছল। রুটিন চেকআপ করতে গিয়ে দেখা গেল তিন মাসে ওজন বাড়ার বদলে কমে গেছে। আমেরিকান শিশু চিকিৎসক তো সাংঘাতিক ধমক ধামক শুরু করলেন। বললেন এরকম চললে বাচ্চাকে সরকার নিয়ে নিয়ে ফস্টার কেয়ারে রেখে দেবে। তারপর বললেন ডাইরি রাখতে সারাদিন বাচ্চা বাড়িতে এবং ডে কেয়ারে কি কি এবং কতটা করে খায়। আমরা ডাক্তারকে বলেই ছিলাম বাড়িতে একেবারে খেতে চায় না। বেবি সিটার যে লিস্ট দিল একেবারে আঁতকে ওঠার মত। কি কি খেয়েছে লিস্টটা অত খারাপ না, সিরিয়াল, দই, বেবি ফুড পেস্ট এইসব - এগুলো সে আবার সরকার থেকে ফ্রী পেত, কারণ ওর রোজগার কম এবং দুটি বাচ্চা আছে। কি পরিমাণ খাওয়াতো, না আমেরিকানরা মিথ্যাচার করে না কথায় কথায়, তাই জানা গেল দই - চা চামচের আধ চামচ, চারদানা সিরিয়াল, আধ চামচ বেবি ফুট পেস্ট, এক আউন্স দুধ -সারাদিনে আমার মেয়ে এটুকুই মাত্র খায়। তার বক্তব্য ছ মাসের মেয়ে সব নিজে নিজে খাবে তাই সে তার সামনে এসব খাবার সাজিয়ে দিত, যতটুকু সে নিজে নিজে খায় পাঁচ মিনিটে, ততটুকুই খেতে দেয়া উচিত। যা খেলোনা তা সে সামনে থেকে তুলে ফেলে দিত। তার নিজের বাচ্চাগুলি অবশ্য নিজে নিজেই খেতে পারতো প্রচুর পরিমাণ। আমার মেয়ে যে প্রায় কিছুই খাচ্ছে না এটা সে নজরও করেনি নজর করার প্রয়োজন বোধও করেনি। যাই হোক সৌভাগ্যক্রমে একজন আসাম থেকে আসা বাঙালি সেই সময় ই আমার মেয়ের দায়িত্ব নিতে রাজি হলো। কয়েক মাসের জন্য অবস্থা কিছুটা উন্নত হলো।  ওজন কমে যাওয়ার জন্য আমাদের তখন প্রতি ১৫ দিনে একবার শিশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হতো। এই আমেরিকান শিশু চিকিৎসকটির সাথে একজন ভারতীয় রেসিডেন্ট তখন কাজ করতো। সে এই আমেরিকান বনাম ভারতীয় শিশুপালনের প্রথার তফাৎ এর ব্যাপারটা ধরতে পেরে পরবর্তী ভিজিট গুলোতে সামাল দেয়ার চেষ্টা করত। আমাদের বলে দিয়েছিল ঘুণাক্ষরেও যেন প্রকাশ না পায় যে বাচ্চা আমাদেরই শোবার ঘরে শোয়। বেবি সিটার পাল্টানোর পর দিনে মিনিমাম ৬০০ ক্যালোরি খাওয়ানো শুরু করতে ওজন বাড়া আবার শুরু হল, কিন্তু মেয়ের খাওয়ার সমস্যা রয়েই গেল বহু বছর পর্যন্ত। এরকম সমস্যা অবশ্য আমার মেয়ের প্রজন্মের বা তার পরের পরের প্রজন্মের প্রচুর বাঙালি বাচ্চারই দেখা যায়। এ হলো গিয়ে এপিসোড নাম্বার ওয়ান। এরপরে এপিসোড নাম্বার টু ও আছে। 


মিসেস চ্যাটার্জিদের কথা

তিন বছর বাদে আমি অন্য রাজ্যে, অন্য শহরে এলাম। পি এইচ ডি শেষ করে ফেলেছি, মেয়ে ও তখন প্রি স্কুলে - আমেরিকার অনেক প্রি স্কুল ই  ডে কেয়ারের ব্যবস্থাও রাখে। অর্থাৎ কিনা গোটা দিন টা বাচ্চাকে রাখে। এরকমই একটি ডে কেয়ার, যেটি আমার কর্মস্থল ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হসপিটাল এর সংলগ্ন, সেখানে আমায় শুনতে হল আমি নাকি চাইল্ড অ্যাবিউজ করছি। কারণ কি, না, কোন একদিন ওদের সামনে আমার মেয়েকে খাওয়াচ্ছিলাম এবং মেয়ে খাওয়া নিয়ে ঝামেলা করাতে আমি চোখ পাকিয়েছি। তাতে আমার মেয়ে কাশির ভান করছিল, যাতে ওকে খেতে না হয়। ‌ কিন্তু ওর ক্যালরির মাপটা তো তখনো মেনে চলতে হতো। কাজেই ছুতো সত্ত্বেও একটু জোর করে খাওয়াতে হতো। ওখানকার baby সিটার এর বক্তব্য, জোর করে খাওয়ানো চাইল্ড অ্যাবিউজ। এটা ওদের প্রটোকল বই তে লেখা আছে। যে বেবি সিটারটি আমায় এ কথা বলেছিল তার বয়স অল্প। চেহারা দেখে মনে হতো না জীবনে কারুর ভালোবাসা পেয়েছে বা কাউকে ভালবাসতে পারে। বাচ্চাগুলোর সাথে কি রকম কলের পুতুলের মত ব্যবহার করত। ‌ যথারীতি দ্বিতীয় এপিসোডেও সরকারের তরফে বাচ্চা কেড়ে নিয়ে ফস্টার কেয়ারে রাখার হুমকি। ‌ আমার এই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাগুলি শুনলে নিশ্চয়ই সাম্প্রতিক মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে সিনেমাটির কথা মনে পড়বে। আরেকটা মিল তো আছেই। ‌ পিতৃতন্ত্রবাদীরা অনেকেই আমাকে মিসেস চ্যাটার্জি সম্বোধন করে ফেলে। সাড়া দিই না অবশ্য। 

পশ্চিম গোলার্ধের সঙ্গে শিশুপালন সংক্রান্ত সংস্কৃতিক তফাৎ আরো অনেক জায়গাতেই । পশ্চিম গোলার্ধ কথাটা বোধহয় একটু বেশি বড় বা বাড়াবাড়ি হয়ে গেল। প্রতিটি দেশের ই কিছু আলাদা আলাদা সাংস্কৃতিক বা পরম্পরা জনিত ব্যাপার থাকে। এই যে আমেরিকাতে পারলে নিজের বাপ মাকেও নাম ধরে ডাকা, এই প্রথাটা ভারতে কর্পোরেট জগতে অনেক দিন ই চালু হয়েছে, কিন্তু এর মধ্যে একটা বিশাল মূল্যবোধের পার্থক্য লুকিয়ে আছে। আমার মা আমার মেয়েকে নিয়ে আমেরিকার পার্কে যখন বেড়াতে যেতেন, তখন দেখতেন মায়ের মতই আরো অনেক দাদু দিদা স্ট্রলারে নাতি নাতনি বসিয়ে বেরিয়েছে। তারা নিজের নাতি নাতনিকে আমার মেয়েকে দেখিয়ে বলত, look there's a baby. মা উপলব্ধি করেছিলেন, আমাদের বসুধৈব কুটুম্বকমের দেশ। তাই আমরা এক শিশুকে অন্য শিশুর সাথে পরিচয় করার জন্য বলি ওই ভাইটা বা ওই বোনটা, অন্তত ৩০ বছর আগে তো বলতামই। আমেরিকায় যেহেতু সবাইকে নাম ধরে ডাকার প্রথা সেই জন্য এরকম কোন আত্মীয়তার সম্বোধন নেই।  কাজেই cat, dog, duck... baby ..এক সুরে ডাকা। শিশুবয়স থেকেই বিচ্ছিন্নতা। আত্মীয়তা বা কুটুম্ববকতার অস্তিত্ব বিহীনতা। আমেরিকায় আমাদের কিছু বন্ধু হয়েছিল যারা আজ ও আমাদের আত্মীয়সম। একদিন আমার মেয়ে ওর প্রি- স্কুল টিচারকে খুব উৎসাহ ভরে জানিয়েছিল "I am going to visit my brother and sister today" অর্থাৎ কিনা ওদের বাড়ি যাবে। পরদিন ওর টিচার আমায় জিজ্ঞেস করল ওর ভাই বোন আছে কিনা। যখন আমি জানালাম যে o একমাত্র সন্তান, তখন ওরা চিন্তিত মুখে বলল যে ওর একটা মানসিক সমস্যা আছে, ও কিছু অলীক কথা বলছে, ভাই বোনের কাছে যাব বলছে। আমি তখন বললাম ও আমার বন্ধুর ছেলে মেয়ের কথা বলছে। আমরা এক পরিবারের মত। আমাদের দেশে এরকম ক্ষেত্রে ভাই বোন তুল্য ই মনে করা হয়। তখন ওরা আশ্বস্ত হয়ে বলল " Oh, that's a cultural thing then!". ওদেরকে আমি কিছুতেই বোঝাতে পারি নি যে সেই যুগে আমার মেয়ে bilingual (সেই যুগে বললাম, কারণ এখন সে আরো তিনটে ভাষা বলে)। ওদের ধারণা bilingual রা কিছুতেই ভালো ইংরেজি বলতে পারে না। এটা শুধু এই অল্প শিক্ষিত ডে কেয়ার বা প্রি স্কুল কর্মী না, এক বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানীর স্ত্রী কে ও একই কথা বলতে শুনেছি। তিনি আমায় বলেছিলেন, তোমাদের দেশে এত গুলো ভাষা that's no good, কারণ ওনার ধারণা তাতে নাকি বুদ্ধি বৃত্তির বিকাশ হয় না। আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম উনি কটা ভাষা জানেন? উনি বোধহয় অল্প স্বল্প জার্মান জানেন, কিন্তু ইংরেজির জন্য গর্বিত। আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমি যে এই তিনটে ভাষা জানি, আমাকে কি ওনার কম বুদ্ধি বৃত্তির মনে হয়? উনি যখন না বললেন, আমি ওনাকে জানিয়েছিলাম যে ভারতে বেশির ভাগ মানুষ ই কম করে তিনটে ভাষা জানে। এবং তুমি যদি মনে কর তারা অশিক্ষিত বা পিছিয়ে পড়া, তাহলে তুমি সত্যিটা জানো না। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল, ওদেশের বিশ্ব বিদ্যালয়ে কিন্তু মাস্টার্স বা পিএইচডি ডিগ্রী পেতে গেলে দ্বিতীয় একটি ভাষায় লিখতে পড়তে বলতে জানা আবশ্যক। আমার "Native language" বাংলা সেই আবশ্যকতা পূর্ণ করেছিল। এই প্রসঙ্গে আমার পরিচিত এক বাবার সগর্বে ছেলের জার্মান শিক্ষার কথা বলা মনে পড়ল। না, আরেকটা ভাষা শেখার প্রসঙ্গে কথাটা তুলিনি। আমি যখন ওনাকে বলেছিলাম আমার বাংলা ভাষা আমেরিকার ইউনিভার্সিটিতে দ্বিতীয় ভাষা জ্ঞান এর আবশ্যকতা পূর্ণ করেছে ওই বেশ গর্বের সঙ্গেই বলেছিলেন, he didn't learn it!

আবার শিশু পালনের কথায় ফিরে আসি। বাচ্চার কান্না কে আমেরিকাতে খুব অদ্ভুত চোখে দেখা হয়। একদিকে শিশু চিকিৎসকরা বাবা-মাকে পরামর্শ দেন বায়নার কান্না প্রশ্রয় না দিতে। স্বভাব নষ্ট না করার সাথে সাথে এটাও বলেন কাঁদলে ফুসফুসের জোর বাড়ে। আবার সেই আমেরিকাতেই প্রতিবেশী পথচারী পুলিশ এদের বেশিরভাগেরই ধারণা বাচ্চা কাঁদছে অর্থাৎ তাকে অ্যাবিউজ করা হচ্ছে। আমার কন্যার ৩ মাসে আমরা নায়াগ্রা বেড়াতে গিয়েছিলাম। কন্যাকে তার পিতা একটি গাছ তলায় সামলাচ্ছিল, এবং আমি কোন দরকারে ওই জায়গাটিতে ছিলাম না। এসে দেখলাম পুলিশ প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছে কার বাচ্চা কেন কাঁদছে ইত্যাদি। একবার শুনেছিলাম আমাদেরই অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর উপর তলায় এক পাকিস্তানি সদ্যোজাতর কান্না শুনে কোন আমেরিকান প্রতিবেশী পুলিশ ডেকেছিল চাইল্ড অ্যাবিউজ হচ্ছে জানিয়ে। 

শিশু বা কিশোরকে শাসন করার জন্য দু এক ঘা দেওয়াও আমেরিকানদের চোখে অ্যাবিউজ। ইউরোপে বোধহয় এতটা বাড়াবাড়ি নেই অন্তত এই ব্যাপারে। আমার এক french সহকর্মিনীকে অনুযোগ করতে শুনেছি এই ব্যাপারে। তার দুই পুত্র বস্টনের বাসে মারামারি করছিল। সে দুজনকেই এক ঘা এক ঘা দেওয়ার পর অন্য যাত্রীরা তাকে শাসিয়েছিল সে নাকি চাইল্ড অ্যাবিউজ করছে, তাকে ওরা পুলিশে দিতে পারে। 

আমেরিকান শিশুপালন সম্বন্ধে আর একটি কথা না বললেই নয়। আশির দশকে জন্মানো সমস্ত সদ্যোজাতকে ওরা পেটের উপর ঘুম পাড়াতে বলত। তারপরে Sudden Infant Death Syndrome নামে এক অজানা রোগে প্রচুর শিশু মৃত্যু হওয়ার পরে ওরা ৯০ এর দশকে সমস্ত নতুন মাকে বলে দিত যেন বাচ্চাকে পেটের ওপর ঘুম না পাড়িয়ে পিঠের ওপর ঘুম পাড়ায় কারণ পেটের উপর ঘুমলে কচি শিশুর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই তথ্যটা অর্থাৎ কচি শিশুকে পেটের উপর ঘুম পাড়ানোর অপকারিতা সম্বন্ধে ভারতীয়রা কিন্তু চিরকালই ওয়াকিবহাল।

কিন্তু ভারতীয় শিশুপালনে কি কোন দোষ ই নেই? কোন ভারতীয় বাবা-মাকি তাদের সন্তানদের অ্যাবিউজ করে না?

বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের জেনারেশন এক্স ওয়াই বা জেড এর প্রায় প্রতিটি শিশুরই খাওয়ার ঝামেলা। কেন? নিউক্লিয়ার পরিবার, কেন্দ্রবিন্দু একটি শিশু। চারপাশে দুটি চারটি অ্যাডাল্ট সবাই সারাক্ষণ শিশুটির দিকে চেয়ে আহা আহা করছে। শিশুরা ও অতিরিক্ত আদর এবং অ্যাটেনশন পেয়ে পেয়ে আরো অ্যাটেনশন চায়, চেয়ে খাওয়া নিয়ে ঝামেলা এবং আরো নানারকমের বায়নাবাজি চালায় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের সেইসব ডিমান্ড মেটানোও হয়। এইরকম আদরে বাঁদর বাচ্চা কিন্তু পশ্চিম গোলার্ধে প্রায় দেখা ই যায় না। শিশুকাল থেকে তাদের অনেক বেশি স্বাবলম্বী হতে শেখানো হয়।


মিসেস চ্যাটার্জিদের কথা

আর চাইল্ড অ্যাবইউজ? সেটাও অসংখ্য ঘরে দেখতে পাওয়া যায়। অনেক মাকেই লক্ষ্য করলে দেখা যায় নিজের হতাশার বোঝা চাপিয়ে দেয় অবোধ শিশুর উপর। অকারণ ে মার এদেশে অনেক শিশু ই খায়। মা বা বাবার অন্য কোন কারণে রাগের শিকার হয় শিশু। তাছাড়া ঘরে ঘরে সন্তানের উপর অবাস্তব প্রত্যাশা। না মেটাতে পারলেই সন্তান হয় মার খায় না হলে বাক্য জ্বালা শোনে। এখন তো আবার একটা বিরাট উৎপাত শুরু হয়েছে, প্র ায় প্রতিটি শিশুকে সেলিব্রিটি বানানোর প্রচেষ্টা বা ইঁদুর দৌড়। সেই পথ হামেশাই অ্যাবিউজে ভরা। 

পশ্চিম গোলার্ধে একটা জিনিস নজর করেছিলাম, যেসব বেবি সিটার এইসব শিশু পালনের প্রটোকল নিয়ে কুরুক্ষেত্র করত, তাদের বেশিরভাগের ই নিজের সন্তান নেই, বাড়িতে ছোট ভাই বোনকেও ঘনিষ্ঠ ভাবে নজর করেছে কিনা সন্দেহ। আমাদের দেশে এক সময় একান্নবর্তী পরিবার বা পরিবারে বহু সন্তান থাকার জন্য নিজের সন্তান থাকুক না থাকুক পুরুষই হোক বা নারী হোক সবার মধ্যে একটা সন্তান স্নেহ বা parental instinct থাকতো। সেই জিনিসটা পশ্চিম গোলার্ধে ভীষণই কম দেখেছি।   বিরক্তির কারণে নিজের শিশু সন্তান খুনের ঘটনা কিন্তু এক সময়ে পূর্ব গোলার্ধের চেয়ে পশ্চিম গোলার্ধে অনেক বেশি ছিল। এর মধ্যে আবার 90 দশকে বস্টনে লুইস এডওয়ার্ড নাম্নী এক ব্রিটিশ অষ্টাদশী বেবি সি ঘটনা খুব বেশি করে মনে পড়ে। সে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক ডাক্তার দম্পতির শিশুকে আছড়ে মেরে ফেলেছিল। সারা আমেরিকা তখন শিশুটি র ডাক্তার মাকে ধিক্কারে ভূষিত করেছিল কারণ সে কেরিয়ার ছেড়ে বাড়িতে বসে থাকতে পারেনি। অষ্টাদশী শ্বেতাঙ্গিনী সুন্দরী বেবি সিটারের পক্ষে আমেরিকা রায় দিয়েছিল যে সে নির্দোষ। প্রায় একই সময় সেই বস্টনে ই বেবি সিটারের কাজ নেওয়া ভারতীয় এক গৃহবধূর   হাত থেকে দুর্ঘটনা বশতঃ তার দায়িত্বাধীন একটি শিশু পড়ে গিয়ে মারা যায়। ভারতীয় গৃহবধূটির কিন্তু এক বছর জেল হয়েছিল। জেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। 

 আমাদের দেশে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই কিন্তু অন্য কোন শিশু দেখে বড় হয়নি। তাদের অনেকের মধ্যেই স্নেহ বস্তুটি তৈরি হয়নি। তাদের অনেকে বিবাহিত কিন্তু শিশু চায়না। প্রশ্ন জাগে, এখন আমাদের দেশে যেহেতু ডে কেয়ার ইত্যাদি আগেকার দিনের চেয়ে অনেক বেশি চলছে, এখানেও কি সেই রকম স্নেহহীন মহিলাদের কাছে বাচ্চারা সারাদিন কাটাবে?‌ স্নেহহীনতার vicious cycle চলবে আমাদের দেশে ও?


New
নায়কের খোঁজে বাঙালি
নায়কের খোঁজে বাঙালি
নির্বাচনী বন্ড: সরকারকে সব জানালেও সুপ্রিম কোর্টকে বলতে কেন বিলম্ব স্টেট ব্যাঙ্কের
নির্বাচনী বন্ড: সরকারকে সব জানালেও সুপ্রিম কোর্টকে বলতে কেন বিলম্ব স্টেট ব্যাঙ্কের
মুক্তমনের অম্লান ভাষ্যকার
মুক্তমনের অম্লান ভাষ্যকার


Other Writings by -সুস্মিতা ঘোষ
ভারতের প্রথম সফল স্টার্ট আপের আচার্য
ভারতের প্রথম সফল স্টার্ট আপের আচার্য

ওই একজন উস্কোখুস্কো চুলের শীর্ণকায় ম…


// Event for pushed the video