4thPillar


নায়কের খোঁজে বাঙালি

হিতব্রত চৌধুরীMarch 15, 2024
নায়কের খোঁজে বাঙালি

দীর্ঘদিন ধরে আয়রন ডেফিসিয়েন্সির মত "নায়ক অপুষ্টি"তে ভুগছে বাঙালি। মিথ্যেকে মিথ-এ উত্তরণ ঘটিয়ে বাঙালিকে মিথোজীবি করে তোলা ও চিৎপুরের চড়া দাগের মনোলগ ও স্বরচিত শ্লোক শুনতে শুনতে বাঙালির কান আজ ক্লান্ত। সেই বাঙালি রণক্লান্ত শরীরে খুঁজে বেড়ায় আগামীর সম্ভাবনাকে। লর্ডসে মাথার উপর গেঞ্জি ওড়ানো নায়ককে দেখে একসময় মনে হয়েছিল লাঠি ছেড়ে ব্যাট হাতে এক জাতির জনকের খোঁজ পাওয়া গেল! ঝাঁপিয়েও পড়েছিল আপামর বাঙালি। বাদ যায়নি আঞ্চলিক থেকে সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল। স্পিন ও ফাস্ট দুধরনের বোলিংকেই ভালোই ডিফেন্স করে চলছিলেন মহারাজ, কিন্তু অকস্মাৎ এক বাউন্সার সোজা গিয়ে বুকে! কেন্দ্রের বৃত্ত থেকে ছিটকে সোজা বাইপাস সংলগ্ন এক হাসপাতালে। সাবাটিকাল লিভ নিয়ে লালবাবা চাল থেকে লাল জর্দা সব কিছুতেই এখন তাঁর দাদাগিরি। ভট্টাচার্য, ব্যানার্জীর পর এক গাঙ্গুলিকে পাওয়া গেলেও কেন্দ্র রাজ্যের আকচা আকচিতে বাঙালির ভোরের স্বপ্ন আজ ভিনদেশী তারা।।


নায়কের খোঁজে বাঙালি

নিরুদ্দেশ বাঙালি নায়কের খোঁজে আবার পথে বাঙালি। নৌশাদ সিদ্দিকী নামে এক সাহসী দাঁড়িওয়ালা ছেলের হদিস মিলল। সুন্দর সরল ভাষায় কথা বলে। সংখ্যালঘু, দলিত, মহিলা কোথাও কেউ আক্রান্ত হলেই এক ছুটে সোজা সেখানে। জন প্রতিনিধি হয়েও তাঁর জেলে যেতে কোনো আপত্তি নেই, যুবসমাজ তাঁর কথায় ও কাজে ক্রমশ আগ্রহ দেখানো শুরু করেছে। কিন্তু দলিত বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে তো আর জাতীয় স্তরের নায়ক তৈরী করা যায় না। তাতে বাঙালির জাত চলে যাবে যে! বাঙালির মন পড়তে পেরেই তো 34 বছরের প্রগতিশীল বাম শাসনে মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ কমিশনার বা আই জি পদগুলি সযত্নে এই দুই সম্প্রদায় থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। প্রয়োজনে দিল্লিতেও পাঠিয়ে দিয়েছিল। দলীয় অনুশাসনে রাজ্য সম্পাদক তো দূরের কথা সিপিএম এর জেলা সম্পাদক এর মত পদগুলোও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে নিরাপদ দুরত্ব রক্ষা করা ছিল পার্টি প্লেনামের অলিখিত স্লোগান। হালে মেরুকরণের রাজনীতির হাওয়ায় 28 শতাংশ যখন শাসক দলে গিয়ে ভিড়েছে তখন তো বাধ্য হয়েই ঢোক গেলা।

বাঙালি নায়কের এই আকালের বাজারে দুষ্টের দমন করতে হঠাৎ আবির্ভাব এক বাঙালি ভগবানের। পেয়েছি পেয়েছি করে আপামর বাঙালির সে কী উল্লাস। দুর্নীতি দমনে একের পর এক রায়ে বাঙালির উদ্বাহু নৃত্য দেখে দিল্লি ইউনিভার্সিটি থেকে "MA In Entire Political Science” ডিগ্রীধারী প্রধানমন্ত্রী সেদিনই মনে মনে ঠিক করে নেন বাঙালির পরিত্রাতাকে। ক্ষমতাসীন মন্ত্রী, সান্ত্রী সবাইকে একের পর জেলে ঢুকিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন এ যুগের অসুরকুলের প্রহ্লাদ। প্রহ্লাদের প্রলাপ বকা শুরু হতে অবশ্য খুব বেশী দেরী হলো না। সুযোগ পেলে তিনি যে গান্ধী পরিবারের লোকদেরও জেলে ঢোকাবেন সেই হুমকি তাঁর মুখ থেকে শোনা গেলো। জীবন্ত বিচারককে কোর্টের ময়দান থেকে টিভির স্ক্রিনে এনে সোজা মানুষের ড্রইং রুমে, বই মেলার থিম প্যাভিলিয়ান ফিকে হয়ে গেলো তাঁর উপস্থিতিতে, মানুষরূপী ঈশ্বর।

সিভিল সার্ভিস এর চাকরি ছেড়ে আইনি পেশা বেছেছিলেন মানুষের সেবা করবেন বলে। যদিও হাল আমলের সিভিল সার্ভেন্টদের বিনীত আবেদন যদি উনি একটু সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে তাঁর যোগদানের সালটা উল্লেখ করেন তাহলে সুবিধা হয়। কারণ সমসাময়িক হয়েও কেউ নাকি জানেন না উনি কবে সিভিল সার্ভেন্ট ছিলেন? বা কোথাও কোনো নথিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সব সরকারি চাকরিই তো আর সিভিল সার্ভিস হিসেবে গণ্য হয় না। আবার আইনজীবিদের কারও কাছে কোনও তথ্য নেই যে তিনি আইনজীবি হিসেবে গরীব মানুষদের জন্য বিনা পয়সায় কেস লড়েছেন?   

এবার দেখা যাক ওনার ভগবান হয়ে ওঠার কাহিনি। শিক্ষা দফতরের নথিভুক্ত বহু আইনজীবিদের মধ্যে তিনিও ছিলেন একজন। সরকারি আইনজীবি হিসেবে দীর্ঘদিন শিক্ষা দফতরের হয়ে লড়াই করতে করতে তিনি জানতে থাকেন দফতরের দুর্বল দিকগুলো। ঠিক যেমন একজন ডাক্তার দীর্ঘদিন ধরে একজন রুগীকে শুশ্রূষা করতে গিয়ে জানতে পারেন রুগীর শরীরের নড়বড়ে কলকব্জাগুলো। বিচারকের আসনে বসে অচেনা অজানা এক আইনজীবিকে বগলদাবা করে তিনিই ব্রিফ দিতেন আবার তিনিই বিচার করতেন। এ যেন "সাপ হয়ে কাটো তুমি ওঝা হয়ে ঝাড়ো"। বিচারকের একের পর এক শাসক বিরোধী রায়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই অচেনা আইনজীবিও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকল। মিডিয়ায় মুখ দেখানো শুরু হল। মোটর সাইকেল বদলে দামী গাড়ি ঘরে ঢুকল। জানা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বিচারক একদিকে যেমন ভগবান হয়েছেন অপরদিকে অজানা প্রশ্নের ভুল উত্তর দিয়ে কোর্ট চত্বরে হাসির খোরাকও হয়েছেন। মূলস্রোত মিডিয়া সযত্নে সেগুলো গোপন করেছে। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর থেকে লোকসভার টিকিটের আশায় ৫ মাস আগে চাকরি ছেড়ে তাঁর কত আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার হা হুতাশ করে প্রমান করতে চান তিনি কতটা ত্যাগী?

দুর্নীতির সিলেবাসে আর কমন কিছু পড়ছে না দেখে কালো কোটের ময়দান ছেড়ে এবার তিনি জনতার ময়দানে। আন্দোলনকারী পরীক্ষার্থীদের উসকে দিয়ে ভগবান এখন দিল্লীশ্বরের পায়ের তলায়। প্রার্থনা একটা নিশ্চিত আসনের। বাঙালি হতাশ। বাজারের ব্যাগ হাতে আজ থেকেই আবার শুরু হয়েছে নায়ক খোঁজার পালা।


New
পহেলগাম থেকে মুর্শিদাবাদ – এক বিদ্বেষের রাজনীতি
আপনি নিজে কজন মুসলমানকে চেনেন?
নিজবাসভূমে পরভাষী


Other Writings by -হিতব্রত চৌধুরী
ডাবল ইঞ্জিনের রমরমা বাজারে বাংলা হাইব্রিড ইঞ্জিন!
ডাবল ইঞ্জিনের রমরমা বাজারে বাংলা হাইব্রিড ইঞ্জিন!

ডাবল ইঞ্জিন সরকারের সম্বন্ধে আমরা সবাই অবগত। বেশ কয়েকটি রাজ্যে এই ইঞ্জিনের রমরমা গতি রাজ্যকে কোথায় পৌঁ…


// Event for pushed the video