4thPillar


মাদক ব্যবসা ও বিভাজনের রাজনীতির আবর্তে আজকের মণিপুর

রিপোটার্স কালেক্টিভApril 19, 2024
মাদক ব্যবসা ও বিভাজনের রাজনীতির আবর্তে আজকের মণিপুর

কুশল সিংহরায় 

কবি অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছিলেন, "তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকুর পরে রাগ করো। তোমরা যে সব বুড়ো খোকা বাংলা ভেঙে ভাগ করো।"

শুধু 'বাংলা' শব্দটা পাল্টে নিলেই হয়। মণিপুর ভেঙে খানখান হয়ে গিয়েছে। সরকারের খাতায়, মানচিত্রে সেটা একটাই ভূখণ্ড, ভারতের অঙ্গরাজ্য। কিন্তু পাহাড়ের রানির হৃদয় টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে।

 মেইতেইদের মণিপুর। কুকিদের মণিপুর।
এই বিভাজনের বাতাস এখন জোরালো রাজ্যের আনাচেকানাচে। কেউ হিন্দু, কেউ খ্রিস্টান। কেউ মেইতেই, কেউ কুকি। একে অপরের দিকে বন্দুক-বেয়নেট তাক করে বসে আছে দুই শিবির।

এভাবেই এলোমেলো হয়ে গিয়েছে সব, তার মধ্যে মাথাচাড়া দিয়েছে মেইতেই ও কুকিদের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী। সাম্প্রতিক অতীতে এরা কিছুটা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। তবে গত কয়েকমাসে হাহাকার যত বেড়েছে, অনাস্থা ও সংশয়ের গলি দিয়ে ফের জনজীবনে এসে পড়েছে বন্দুকবাজরা।

 কোথাও গায়ের জোরে, কোথাও জনতাই তাদের কাছে টেনে নিয়েছে।

এমনটাই বলছিলেন 58 বছরের রতনকুমার সিং। মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ। হাইস্কুলে পড়ান। তাঁর কাছে সশস্ত্র যোদ্ধারা 'বিপ্লবী'। প্রতিটা মুহূর্তে যখন আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসছে, সেই সময় এই যোদ্ধাদেরই রতনরা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

দিনটা ছিল গত বছরের 28 মে। মণিপুরের ছোট শহর সুগনু সশস্ত্র যোদ্ধাদের সাদরে কাছে টেনেছিল। কুকিদের হামলার সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছিল না মেইতেইরা। তাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী সুগনুতে এসে পৌঁছতে ছবিটা বদলে যায়।
রতন বলেন, "কুকিরা আমাদের বাড়িতে আগুন দিচ্ছিল। পুলিশ ও আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা পাল্টা গুলি চালায়। কিন্তু ওদের বাগে আনা যাচ্ছিল না। বিপ্লবীদের দল এসে পড়ায় কুকিদের আমরা রুখে দিতে পেরেছি।"

বিপরীত শিবিরেও ছবিটা এমনই। 60 হাজার সেনা, আধাসেনা ময়দানে থাকলেও হিংসার আগুন ধিকিধিকি জ্বলছে মণিপুরে। এলাকা দখলের লড়াইয়ে সামনে চলে এসেছে মেইতেই ও কুকি যোদ্ধারা। তাদের পিছনে সাধারণ মানুষ, স্বেচ্ছাসেবক, এমনকী পুলিশও।

 

মুখ্যমন্ত্রীর শাসন

 

মণিপুরের একটা বড় অংশের মানুষ সংখ্যালঘু। তাদের রাজনৈতিক আচরণ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বা দেশের অন্যান্য বড় রাজ্যগুলির মতো নয়। সেই কারণে বছর দুয়েক আগে বিজেপি সহজেই ইম্ফলের ক্ষমতা দখল করেছিল।

এ রাজ্যের সংখ্যালঘু মাত্রেই বিজেপি বিরোধী ভোটার বলে ধরে নেওয়া হয়, মণিপুরে তা নয়। এন বীরেন সিংকে মুখ্যমন্ত্রী করার জন্য কুকিরাও মাঠে নেমেছিল। কুকি গণসংগঠন থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল। পদ্ম প্রতীকে লড়েছিলেন কুকিরা। পাহাড়ের 10 টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে জয় পেয়েছিলেন বীরেনের সঙ্গীরা। জেডিইউয়ের টিকিটে জেতা দুই কুকি বিধায়ক পড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে সংখ্যাটা নিয়ে যান সাতে।

সেই সময় ভোট প্রচারে গিয়ে বীরেনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন মোদী-শাহ। প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, "অবরুদ্ধ রাজ্য থেকে মণিপুর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। পাহাড় ও উপত্যকার মধ্যে দূরত্ব দূর করতে আমাদের সরকার উদ্যোগী হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে বীরেন সিংয়ের নেতৃত্বে।"

পাহাড়বাসী কুকিদের ধারণা, মেইতেইরা সব আর্থিক সুযোগসুবিধা ভোগ করে। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, কুকি ও মেইতেইদের মধ্যে এই ফারাক ঘুচে গিয়েছে তাঁদের শাসনে। বছর দুয়েক পড়েই মোদী ব্রিগেডের এই দাবি যে মুখ থুবড়ে পড়বে, কে জানত!

অসম রাইফেলসের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর নীতির ফলেই মণিপুরে আজ মেইতেই ও কুকিরা যুযুধান। মিত্রতার ভাষণ বছর দুয়েক পর কীভাবে বৈরিতার স্ক্রিপ্টে বদলে গেল?

 


মাদক ব্যবসা ও বিভাজনের রাজনীতির আবর্তে আজকের মণিপুর

মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ


2018 সালে প্রথমবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন বীরেন। তখনই তিনি ঘোষণা করেন, মণিপুরকে মাদকমুক্ত করবেন। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছিলেন, মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া হাজার হাজার একর জমিতে আফিমের চাষ হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে।

 হাতে টাকাকড়ি নেই। পাহাড়ি মানুষের রোজগার নেই। নেই কাজের সুযোগ। এর ফলে এক বড় অংশের মানুষ মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আফিম চাষ থেকে আয়, আবার সেই উপার্জনে মাদক সেবন।

বীরেনের দৃষ্টিভঙ্গিতে ভুল ছিল না। মায়ানমার ও মণিপুরের বিস্তীর্ণ অংশে আফিম, হিরোইন ও কৃত্রিম মাদকের ব্যবসা একেবারে জলভাত। রাষ্ট্রপুঞ্জের মাদক ও অপরাধ দফতর এই এলাকাকে 'বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাদক পাচার করিডর' বলে তকমা দিয়েছে। শুধু ভারত ও তার আশপাশের দেশ নয়, গোটা এশিয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় মাদক সরবরাহ হয় মণিপুর-মায়ানমার থেকে।

উত্তর-পূর্বের পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল লেফটেন্যান্ট জেনারেল কোনসাম হিমালয় সিং অবসর নিয়েছেন 2017 সালে। তাঁর সামনেই মণিপুরের পাহাড় বদলে গিয়েছে একটু একটু করে। তিনি বলেন, "মায়ানমারের মাদক ব্যবসার উপর কড়া নজর ছিল আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলির। তারা সামরিক জুন্টাশাসিত রাষ্ট্রের উপর চাপ বাড়াতে থাকে। তাই গত দেড় দশকে এই ব্যবসার কেন্দ্র কিছুটা পশ্চিমে, মণিপুরে সরে এসেছে।"

মাদক রুখতে 18টি গণসংগঠনের যৌথ মঞ্চ তৈরি হয়েছে। এর যুগ্ম আহ্বায়ক মাইবাম যোগেশ বলেন, "80 ও 90-এর দশকে মণিপুরের কয়েকটা জায়গায় মাদকের রমরমা কারবার ছিল। ধীরে ধীরে গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক ব্যবসার জাল।"

যোগেশের বক্তব্য, "মণিপুরের পাহাড়ে 2006 সাল থেকে আফিমের চাষ হচ্ছে। গত ছয়-সাত বছরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মাদক উৎপাদন হচ্ছে। এমনকী ইম্ফলেও।"

মায়ানমারে 'নম্বর ফোর' হিরোইনের বেশ চাহিদা ছিল। তবে দাম অনেকটা চড়া। তার পরিবর্ত বার করে ফেলেছে মণিপুর। নাম 'থুম মোরোক'। মেইতেইদের কাছে এর অর্থ নুন ও লঙ্কা। একটু কড়া প্রকৃতির মাদক, চট করে নেশা লেগে যায়। প্রতি গ্রাম 500 টাকা। এর ফলে মাদক অনেকের নাগালে চলে এসেছে বলে জানান যোগেশ।

চাহিদা বাড়ছে তাল মিলিয়ে। বাড়ছে উৎপাদন। পাহাড়ের পাশাপাশি আফিম চাষ হচ্ছে রাজধানী ইম্ফলেও। থৌবাল ও বিষ্ণুপুরে মাদক প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র হয়েছে অনেকগুলি। এগুলির বেশিরভাগই মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায়। তারাই মূলত মাদক প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত। মেইতেইরা পণ্য পরিবহণের কাজটি করে।

রাজ্যজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় চলেছে। আফিমের খেতে আগুন দিচ্ছেন সরকারি প্রতিনিধিরা। তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে। কিন্তু মাদকের কারবারে লাগাম টানা যাচ্ছে না। কারণটা একেবারেই অর্থনৈতিক। কাজের সুযোগ নেই যে রাজ্যে, সেখানে আফিম হয়ে উঠেছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। চূড়াচাঁদপুর জেলার আফিম চাষিরা এমনটাই বুঝিয়ে দিলেন।

একটা ছোট্ট কুঁড়ের নীচে কয়েকজন চাষি জড়ো হয়েছেন। খেতের বুক থেকে ঝকঝকে আলো এসে ওঁদের মুখে পড়ছিল। নাম বলতে চাইলেন না কেউ। একজন বললেন, "আমরা গরিবগুর্বো মানুষ, চাষে তেমন লাভ হত না। এক কেজি লঙ্কা বিক্রি করে 50-60 টাকা পেতাম। আমার সাতটি সন্তান, কীভাবে ওদের খেতে দেব এই রোজগারে!"

লঙ্কার ওজন কম। এক কেজি মানে পরিমাণে অনেকটা। এর তুলনায় আফিম চাষে লাভ অনেক বেশি। হিমালয় সিং বলেন, "700 বিলিয়ন টাকার মাদকের ব্যবসা। এর মধ্যে মাত্র 25 বিলিয়ন টাকার মতো মাদক ধরা পড়ে। পাঁচ শতাংশ। বাকি মাদকের জন্য প্রচুর টাকার হাতবদল হয় এই কারবারে।"

2020 সালে মণিপুর সরকার তথ্য দিয়েছিল, তারা 20 বিলিয়ন টাকার মাদক বাজেয়াপ্ত করেছে। যে রাজ্যের জনসংখ্যা 25 লক্ষের কিছু বেশি, রাজ্যের অর্থনীতি বার্ষিক 400 বিলিয়ন টাকার, সেখানে মাদক ব্যবসার কালো টাকা একপ্রকার উড়ছে।

 

নজরে মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী


মুখ্যমন্ত্রী মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের দিকেই আঙুল উঠে গেল ঘোষণার পাঁচ মাসের মধ্যে। কুকি সম্প্রদায়ের এক মাদক কারবারির সঙ্গে যোগাযোগ আছে বীরেন সিংয়ের স্ত্রী এস এস ওলিসির, এই অভিযোগ তোলপাড় ফেলে দিল।

কে এমন দাবি করলেন? কোনও বিরোধী নেতা নন, এক মহিলা পুলিশকর্তা। নাম থৌনাওজাম বৃন্দা। মণিপুর হাই কোর্টে পেশ করা হলফনামায় বৃন্দা বলেন, মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে তদন্তে হস্তক্ষেপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি হুখোসেই জাউয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত গুটিয়ে ফেলতে চাপ দিয়েছিলেন বৃন্দার উপর। মাদক ব্যবসার কিংপিন হিসেবে পরিচিত জাউ বিজেপি নেতা, মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ।

জাউয়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছিল হিরোইন পাউডার ও ইয়াবা ট্যাবলেট। অভিযুক্ত বিজেপি নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃন্দা হলফনামায় দাবি করেছেন, এরপর তাঁকে ফোন করেন মণিপুর রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতি আসনিকুমার মইরাংথেম। বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর ডান হাত জাউ। এই বিজেপি নেতাকে ছেড়ে দিয়ে তাঁর স্ত্রী বা পুত্রকে হেফাজতে নিতে হবে।" পরে পদত্যাগ করেন সাহসী অফিসার বৃন্দা।

বীরেনের মাদকবিরোধী যুদ্ধের হুঙ্কার সেখানেই মুখ থুবড়ে পড়ে। বোঝা যায়, মাদক কারবারকে নির্মূল করা তাঁর লক্ষ্য নয়। বিজেপি নেতা হুখোসেই জাউ জামিন পেয়ে যান, তাঁকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সুতরাং রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে ব্যবসা চলছে রমরমিয়ে। রাজনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কারবারিদের। এর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে নানা সশস্ত্র গোষ্ঠী। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, বিপুল সংখ্যায় সেনা ও আধাসেনা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে চলছে অবৈধ ব্যবসা?

হিমালয় সিংয়ের মতে, কোনও কোনও জওয়ান ব্যক্তিগতভাবে মাদক চক্রের সঙ্গে যুক্ত আছেন, এই সম্ভাবনা খারিজ করে দেওয়া যায় না। মায়ানমার সীমান্তের মোরে শহর মাদক পাচার, তোলাবাজি, লুটপাটের জন্য কুখ্যাত। সেখানে মণিপুরের এক পুলিশকর্মী ও অসম রাইফেলসের এক জওয়ান হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন। তাদের হেফাজত থেকে মিলেছিল 200 বিলিয়ন টাকার ইয়াবা ট্যাবলেট।

গত ডিসেম্বর থেকে মোরে অশান্ত। মেইতেই ও কুকিদের মধ্যে জোর লড়াই চলছে। 17 জানুয়ারি মণিপুর পুলিশের কম্যান্ডো বাহিনীর সঙ্গে কুকি যোদ্ধাদের 20 ঘণ্টার গুলির লড়াই চলে। আফিম চাষ, মাদক কারবার, জাতি সংঘর্ষের মধ্যে এভাবেই ক্রমশ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মণিপুরীদের জীবন।

এক্স হ্যান্ডেলে 2022-এর জানুয়ারিতে বীরেন সিং দাবি করেন, তাঁরা রাজ্যের 110 একর জমিতে আফিম চাষ নষ্ট করে দিয়েছেন। এর ফলে অসংখ্য মানু্ষের রুটি-রুজিতে টান পড়ে। তারা অসহিষ্ণু হয়ে পড়েন। তাদের ক্ষোভ জাতি বিদ্বেষে পরিণত করার জন্য যা দরকার, সেই ইন্ধনের অভাব ছিল না।

গত বছরের মে মাস থেকে মেইতেই গণসংগঠনগুলি মাদক ব্যবসায় সাম্প্রদায়িক রং লাগিয়ে দেয়। তাদের দাবি, কুকিরাই মাদকের কারবার চালাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে তাদের 'মাদক সন্ত্রাসবাদী' তকমা দিয়ে প্রচার চালানো হয়।

এই বিভেদমূলক প্রচার বিজেপির ঘরেও আগুন লাগিয়ে দেয়। পদ্ম শিবিরের নির্বাচিত কুকি ও মেইতেই বিধায়কদের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়। তাঁদের বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে। কুকি বিধায়করা তাঁদের দলের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই তোপ দাগেন। বলেন, বীরেন সিং মণিপুরে সাম্প্রদায়িক বিভাজন করছেন। দুটি নতুন মেইতেই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে মদত দিচ্ছেন।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে কুকিরা ক্রমশ বিজেপির কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাই নতুন করে অঙ্ক কষতে হচ্ছে শাসক দলের ভোট ম্যানেজারদের। তাই নজর এখন লোকসভা নির্বাচনের দিকে। 


মাদক ব্যবসা ও বিভাজনের রাজনীতির আবর্তে আজকের মণিপুর

পৃথক রাজ্যের দাবি

 

রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি অন্যান্য নেতাদের দলে টেনে এনেছে। কিন্তু মণিপুরে তারা নিজেরাই বেকায়দায়। এ রাজ্যে বিজেপির কুকি বিধায়করা দলকে দোলাচলে রেখেছেন। কুকি মন্ত্রী বা বিধায়করা পদত্যাগ করেননি, দল ছাড়েননি।

এই বিধায়করা রাজ্যের একাংশে স্বায়ত্তশাসিত পর্ষদ গঠনের দাবি জানিয়েছেন। শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়, বিভিন্ন কুকি নাগরিক সংগঠন এই দাবি জোরালো করে তুলেছে। কুকিল্যান্ডের ডাক শোনা যাচ্ছে। সুতরাং ভাগাভাগির পর্ব সম্পূর্ণ। বিজেপির মধ্যেই মেইতেই এবং কুকি সদস্যরা ভিন্ন গোলার্ধের বাসিন্দা হয়ে উঠছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি বিধায়ক বলেছেন, কেন্দ্রীয় নেতারা চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের ভাবনা অনুযায়ী দল চালাতে। এতে কোনও সুবিধা হবে না। এই বিধায়কের কথায়, মুখ্যমন্ত্রীর উপর সাধারণ মানুষ এতটাই ক্ষুব্ধ যে কুকি অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপি প্রার্থী লড়লে তার পক্ষে জেতা মুশকিল।

লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে মণিপুরে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, কিছুতেই রাজ্য ভাগ করতে দেওয়া হবে না। অর্থাৎ কুকিদের স্বায়ত্তশাসনের দাবি খারিজ করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে নির্বাচনে বিভাজন রেখা আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

লোকসভা ভোটে আউটার মণিপুর আসনে তাই প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। সেখানে লড়ছে তার জোটসঙ্গী নাগা পিপলস ফ্রন্ট। প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের পিছনে এবার দাঁড়িয়েছে কুকিরা। তফসিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত এই আসন। এখানকার কুকি জনগোষ্ঠীর ভোট এনডিএ জোটের বিরুদ্ধে গেলে তারা আসনটি হারাবে কি না, সে দিকে নজর রয়েছে সকলের।

ইনার মণিপুর আসন নিয়ে বিজেপি অনেকটা নিশ্চিন্ত। উপত্যকার ভোটদাতারা মোদীর পক্ষে থাকবেন, এমনটাই অনুমান করা হচ্ছে। বিভাজনের বিষ যখন তীব্র, তখন এই অনুমান অসঙ্গত নয়।

অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি থেকে কিছুটা শান্ত হয়েছে মণিপুর। তবে সেই শান্তি একটা অস্বস্তির মত ছড়িয়ে রয়েছে উপত্যকা ও পর্বতে। সংঘর্ষ কমে এলেও পাহারার রুটিন থেকে বেরতে পারেনি দুই শিবির।

অনেক ক্ষত হয়েছে। গভীর ক্ষত। তাতে সময় যদি প্রলেপ দেয়, তার জন্য হয়ত আরও কিছু মাশুল দিতে হবে সাধারণ মানুষকে। তারা কি এসবের জবাব চাইবে না, বুঝে নেবে না হিসেব নিকেশ? এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে 4 জুন।

 


New
বিদায় পিটি নায়ার: কলকাতার ইতিহাসবেত্তা
বিদায় পিটি নায়ার: কলকাতার ইতিহাসবেত্তা
এগজিট পোল মিলে গেলেও যে প্রশ্ন উঠবেই
এগজিট পোল মিলে গেলেও যে প্রশ্ন উঠবেই
কংগ্রেস সেঞ্চুরি না করলে কে রুখবে বিজেপিকে?
কংগ্রেস সেঞ্চুরি না করলে কে রুখবে বিজেপিকে?


Other Writings by -রিপোটার্স কালেক্টিভ
ভ্রাতৃঘাতী লড়াইয়ে রাষ্ট্রীয় মদত? বিস্ফোরক রিপোর্ট অসম রাইফেলসের
ভ্রাতৃঘাতী লড়াইয়ে রাষ্ট্রীয় মদত? বিস্ফোরক রিপোর্ট অসম রাইফেলসের

কুশল সিংহরায় 


4thPillar

Support 4thPillarWeThePeople

Admin Login Donate
আমাদের কথা

আমরা প্রশ্ন করি সকলকে। আমরা বহুত্ববাদী, স্বাধীন, যুক্তিবাদী। আমরা সংশয়বাদী; তর্কশীল; আবার সহিষ্ণুও বটে। আসুন কথা হোক; পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, বিশ্বাস রেখে আলোচনা হোক। মননের ইতিহাসে শেষ কথা বলার স্পর্ধা কারও যেন না হয়; আবার কোনও স্বরই যেন অকিঞ্চিৎকর বলে উপেক্ষিতও না হয়। এই রকম ভাবনার একটা ইন্টারনেট-ভিত্তিক বিশ্বব্যাপী কমিউনিটি গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।

© 2023 4thPillarWeThepeople. All rights reserved & Developed By - 4thPillar LeadsToCompany
// Event for pushed the video