4thPillar


জ্যোতি বসু এখনও বামপন্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ জাগান

শিখা মুখার্জি | 11-07-2022June 16, 2023
জ্যোতি বসু এখনও বামপন্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ জাগান

জ্যোতি বসুর 109 তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবন অডিটোরিয়ামের দুই তলারই শ্রোতাদের আসন পূর্ণ ছিল। তবে আগের মতো সমস্ত যাতায়াতের পথে শ্রোতাদের ভিড় চোখে পড়েনি। জ্যোতিবাবুকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা শ্রোতাদের মধ্যে যদিও প্রৌঢ়দের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের অনেককে দেখা গেছে, তবুও মনে হয় জ্যোতিবাবুর জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটার টান শুরু হয়েছে। এই আপাত হতাশচিত্র আচমকাই বদলে গেল যখন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জ্যোতি বসুর চিত্রপটে পুষ্পার্ঘ দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে মঞ্চে এলেন। শ্রোতাদের মধ্য থেকে একজন স্লোগান তুললেন ‘জ্যোতি বসু লাল সেলাম’। গোটা হলভর্তি সবাই তাতে একসুরে সাড়া দিলেন। এমনকি সবাই তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উঠে দাঁড়ালেন। যেটা লক্ষণীয়, এই স্লোগানের সুর ও ছন্দ বামপন্থীদের পরিচিত স্লোগানের মতো নয়। কিছুটা বিনা অনুশীলনের ও স্বত:স্ফূর্ত। যেমন হঠাৎই শুরু হয়েছিল, তেমনই হঠাই স্লোগান থেমে গেল যখন দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম পুষ্পস্তবক নিয়ে জ্যোতি বসুর চিত্রে শ্রদ্ধার্ঘ দিতে মঞ্চে এলেন। এমনকি জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ এর চেয়ারম্যান বিমান বসু মুখ খোলার আগেই তাঁরা সবাই বসেও পড়লেন। 

 


জ্যোতি বসু এখনও বামপন্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ জাগান

[ ...জ্যোতি বসুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দর্শকাসন থেকে তাঁর নামে স্বতঃস্ফূর্ত লাল সেলাম, আবেগ দেখা গেল না সেলিম বিমানকে কেন্দ্র করে ...]

 

বেঁচে থাকলে জ্যোতি বসু অবশ্যই সমবেত মানুষদের এই স্বতঃস্ফূর্ত অভিবাদন দেখে খুশি হতেন। কিন্তু তিনি সহজে আবেগে ভেসে না গিয়ে তাকে পাশে সরিয়ে রেখে সামনের দিকেই তাকাতে অভ্যস্ত ছিলেন। কারণ, তাঁর কাছে ব্যক্তির চাইতেও মতাদর্শ ও তার ভিত্তিতে লড়াই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যদিও কখনও কখনও দলের কাজের অগ্রগতির ক্ষেত্রে কোনও কোনও ব্যক্তিমানুষের ভূমিকা যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, তা তিনি অস্বীকার করতেন না।

সভায় উপস্থিত তরুণ প্রজন্মের শ্রোতাদের কথা মাথায় রেখে সীতারাম ইয়েচুরি জ্যোতি বসুর সঙ্গে তাঁর কাজ করার কিছু অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন। একবার হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ, জ্যোতি বসু, এম বাসবপুন্নাইয়া এবং ই বালানন্দনের মতো প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে তাঁরও চিন সফরের সুযোগ হয়েছিল। নেতারা সবাই দেশের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের ভাষাভাষী মানুষ। একমাত্র ইয়েচুরিই প্রত্যেক নেতার নিজস্ব ভাষায় কথা বলতে সক্ষম। তিনি সুরজিতের সঙ্গে হিন্দি ও পঞ্জাবি ভাষার মিশেল দিয়ে, জ্যোতি বসুর সঙ্গে বাঙলায়, বাসবপুন্নাইয়ার সঙ্গে তেলুগু এবং বালানন্দনের সঙ্গে তামিল ভাষায় কথা বলতেন। একদিন ব্রেকফাস্ট টেবিলে জ্যোতি বসু মন্তব্য করলেন, ইয়েচুরি অত্যন্ত বিপজ্জনক মানুষ। কারণ, ও পঞ্জাবি, বাঙলা, তামিল ও তেলুগু ভাষায় নেতাদের সঙ্গে কথা বলছে। যাকে বলছে, তিনি ছাড়া আর কেউই তা বুঝতে পারছেন না, কারণ তাঁরা অন্য আঞ্চলিক ভাষা জানেন না। যে জ্যোতি বসুকে আপাত রুক্ষ, কঠিন ও চারপাশের মানুষজন সম্পর্কে উদাসীন বলে অনেকেই মনে করেন, তাঁর এই রসবোধের পরিচয় পেয়ে শ্রোতারা খুবই আলোড়িত হন।


New
বিদায় পিটি নায়ার: কলকাতার ইতিহাসবেত্তা
এগজিট পোল মিলে গেলেও যে প্রশ্ন উঠবেই
কংগ্রেস সেঞ্চুরি না করলে কে রুখবে বিজেপিকে?


Other Writings by -শিখা মুখার্জি | 11-07-2022
সমূহ অবস্থা বুঝেই আজকের রাজনীতি: জ্যোতি বসুর জন্মদিনে ইয়েচুরি
সমূহ অবস্থা বুঝেই আজকের রাজনীতি: জ্যোতি বসুর জন্মদিনে ইয়েচুরি

পশ্চিমবঙ্গের দুর্বল থেকে দুর্বলতর হ…


// Event for pushed the video