ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ার নয়া ট্রেন্ড "অনলাইন খাপ পঞ্চায়েত'। বিরুদ্ধ স্বরে কথা বললেই আপনার বিরুদ্ধে বসে যাবে - "জনতার আদালত"। অবশ্যি সে আদালতে জনতা কতজন আর কতজন শাসকের হয়ে কথা বলা স্বঘোষিত দেশভক্ত তার আঁচ আমরা হামেশাই পেয়ে থাকি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে কথা বলার অপরাধে খুন হয়েছেন গৌরী লংকেশ। ওপার বাংলায় কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল মুক্তমনা ব্লগার অভিজিৎ রায়কে। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুক্তিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলার "অপরাধে' খুন হয়ে যান নরেন্দ্র দাভোলকার, গোবিন্দ পানসারের মতো ব্যক্তিত্ব।
ভারতবর্ষের বর্তমান শাসক শ্রেণী এবং তাঁদের প্রভু বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে মুখ খোলার অভিযোগে হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে সাংবাদিকদের। শুধু কর্পোরেট সংস্থা নয়, চাপিয়ে দেওয়া ধর্মীয় ন্যারেটিভের বিরূদ্ধে মুখ খুললেও নেমে আসছে ধর্ষণের হুমকি, ইনবক্সে ভেসে আসছে অকথ্য গালিগালাজ এবং খুনের হুমকি।
সৃষ্টি জসওয়ালকে আমরা অনেকেই চিনি না। এই একশ কোটির দেশের একজন সৃষ্টি। সৃষ্টি একজন সাংবাদিক, তিনি কাজ করতেন হিন্দুস্তান টাইমসে।
আরও পড়ুন: মেয়েদের ফেস নয়, বুকেই নজর ফেসবুকে
ঘটনার সূত্রপাত 2 জুলাই 2020 সালে। নেটফ্লিক্সের একটি সিনেমা নিয়ে একটি ট্যুইট করেন সৃষ্টি এবং এরপরেই শুরু হয় আক্রমণ।
তার সেই টুইটে ধেয়ে আসে "হিন্দু বিরোধী' বা "দেশদ্রোহী' এর মতো কমেন্ট। ইনবক্সে ধেয়ে আসে ধর্ষণ এবং খুনের হুমকি।
বিতর্কের মুখে পড়ে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে হিন্দুস্তান টাইমস। এমতাবস্থায় লড়াই ছাড়েননি সৃষ্টি। হুমকির মুখে পড়ে শহর ছাড়তে হয়েছে তাকে, স্বঘোষিত দেশভক্ত এবং হিন্দু বীর পুঙ্গবদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে তাঁর বাবা মাকে, কিন্তু তাতেও দমে থাকেননি সৃষ্টি। এই ঘটনার পরবর্তীতে দাঁড়িয়ে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন সৃষ্টি। বিশদে অনুসন্ধান করে প্রমাণ করেছেন কীভাবে একটি বিশেষ আইটি সেল এই ধরণের সংগঠিত আক্রমণ নামিয়ে আনে বিরুদ্ধ স্বরের উপর। আজকে দেশের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম যখন বিক্রি হয়ে গেছে শাসকের কাছে, যখন হাতরাসে ধর্ষণের মতো ঘটনার খবর করতে গিয়ে ইউএপিএ আইনে জেলবন্দি থাকতে হয় সাংবাদিকদের, তখন সৃষ্টির এই সাহস আমাদের উৎসাহ দেয়, ভরসা জোগায়।