4thPillar


গীয়ান ব’রে সিনড্রোম (GB Syndrome) নিয়ে কিছু কথা

ডঃ সুস্মিতা ঘোষFeb. 10, 2025
গীয়ান ব’রে সিনড্রোম (GB Syndrome) নিয়ে কিছু কথা

মহারাষ্ট্রের বাসিন্দারা চিন্তায় পড়ে গেছেন, কী এক অজানা অচেনা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে মহারাষ্ট্রে, বিশেষ করে পুণে তে। রোগের নাম গীয়ান ব’রে সিনড্রোম  (GuillainBarré syndrome, GB Syndrome). বাকি ভারতের বা বাকি বিশ্বের মানুষেরাও কিন্তু দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত নন।  তার একটা কারণ  অনেকেরই প্রিয়জন আছে এই অঞ্চলে। তাছাড়া ওখানে যখন প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, তাহলে আমাদের এখানেও তো হতে পারে! এই নিয়ে খবরে ও সমাজ মাধ্যমে নানা তথ্য উঠে আসছে যার কিছু ঠিক, কিছু ভুল।  কিছু আশ্বস্ত করে আবার কিছু ভয় বাড়ায়। এই নিয়েই আজকের আলোচনা, যদি ভয় কিছুটা কমানো যায়। 

গীয়ান ব’রে সিনড্রোমের  লক্ষণ  কী কী ? 

এটি একটি  স্নায়ু বা নার্ভের অসুখ।  প্রথম লক্ষণ হল পায়ের পাতা  দুর্বল হয়ে যাওয়া।  হাঁটতে, সিঁড়ি ভাঙতে কষ্ট দিয়ে শুরু হয়, তারপর দুর্বলতা বেশ দ্রুত, অর্থাৎ দু সপ্তাহের মধ্যে  শরীরের ওপরের অংশ, যেমন পা, কোমর, পিঠ, হাত মুখ এবং ঢোক গেলা বা নিঃশ্বাস নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত পেশীগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার দুর্বলতা শুরু হয় শরীরের উপর অংশে, অর্থাৎ মুখে , তারপর পায়ের দিকে নেমে আসে।  কথা বলা, ঢোক গেলা , নিশ্বাস নেওয়া, পাকযন্ত্র, রেচন যন্ত্র ও চোখ নিয়ে নানা সমস্যা শুরু হয় দু ক্ষেত্রেই।  হৃদস্পন্দনে ও রক্ত চাপে অস্বাভাবিকতা দেখা যেতে পারে।

দুর্বলতা ছাড়াও পাশাপাশি আর একটি প্রধান লক্ষণ হল সংবেদন তন্ত্র অর্থাৎ sensory organ এর  কাজে পরিবর্তন আসা। যখন তখন হাত পায়ের আঙুলের ডগা ঝন ঝন করে ওঠা, এবং শরীরের নানা জায়গায় সূচ ফোটানোর মত ব্যথা দেখা যায়।  রাত হলে ব্যথা বাড়ে। ব্যথা এবং দুর্বলতা থেকে আসে অবশ ভাব, যা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, এবং তার থেকে  পক্ষাঘাত বা প্যারালিসিস। রোগীদের এক তৃতীয়াংশের ভেন্টিলেশনও লাগতে পারে। প্রায় 5 শতাংশ রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। গত এক মাসে পুণেতে এই রোগে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য নার্ভের অসুখের সঙ্গে এখানে সবচেয়ে বড় তফাৎ হল, যে সমস্ত লক্ষণ গুলি দেখা দেয় তা জ্বর বা পেটের অসুখে অসুস্থ হওয়ার দু চার সপ্তাহ পরে।এটাই এই রোগের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।   


গীয়ান ব’রে সিনড্রোম (GB Syndrome) নিয়ে কিছু কথা

এটা কি একটা নতুন রোগ ?

না, রোগটা নতুন নয়।  একশ বছরের বেশি আগে থেকে এই রোগের কথা জানা আছে। 1916 সালে বিজ্ঞানী জি. গীয়ান, জে. ব’রে এবং এ,স্ট্রহল ফ্রান্সে এই রোগের কথা প্রথম উল্লেখ করেন। ঠাণ্ডার দেশে এবং শীতকালে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয় এবং যে সব অঞ্চলে ঠাণ্ডার সাথে সাথে অপরিচ্ছন্নতাও বেশি, সেখানে এই রোগের প্রাদুর্ভাব সব চেয়ে বেশি।  গত দশকে  পেরু, মেক্সিকো ইত্যাদি দেশে  ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে।  খোদ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে এই রোগের কারণেই সবচেয়ে বেশি স্নায়বিক পক্ষাঘাতের ঘটনা ঘটে। ভারতেও বিক্ষিপ্ত ভাবে অনেকেই আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অর্থাৎ কিনা সব দেশেই সর্বকালেই এই রোগ ছিল এবং আছে।

এই রোগ সব বয়সী মানুষকেই আক্রমণ করতে পারে, কিন্তু 50 এর পর সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকগুণ। আক্রান্তের ক্ষেত্রে দেখা যায় পুরুষের সংখ্যা মহিলাদের থেকে প্রায় দেড়গুণ বেশি।    

এই রোগ কেন হয় ?

এই রোগ হল এক ধরণের স্ব-প্রতিরোধ জনিত রোগ বা autoimmune disease, যা দু চার সপ্তাহ আগে ঘটে যাওয়া কোনো সংক্রমণের ফলশ্রুতি হিসেবে দেখা দেয়।  সংক্রমণের যে সব লক্ষণ, অর্থাৎ জ্বর, পেটের অসুখ, এগুলো এই রোগের ঠিক  লক্ষণ নয়, প্রিভিউ বলা যেতে পারে। চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায় এই সব লক্ষণকে বলে prodrome। রোগটি সংক্রমণের ফলশ্রুতি হিসেবে ঘটলেও ছোঁয়াচে নয়, অর্থাৎ পরিবারে একজনের হলে তার থেকে অন্যজনের ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই।  সম্ভাবনা নেই বংশগতির মাধ্যমে ছড়ানোরও।  

স্বপ্রতিরোধ বা autoimmune  জিনিসটা কী ? 

আমরা জানি যে, প্রতি মুহূর্তে আমরা যে সব রোগ জীবাণু র মুখোমুখি হচ্ছি, তাদের আক্রমণ থেকে আমাদের বাঁচাবার জন্যে শরীরে প্রতিরোধ তন্ত্র বা immune system  আছে।  এই তন্ত্রের পাহারাদার  হিসেবে আছে নানা ধরণের শ্বেত রক্তকণিকা। এরা কী করে? না শরীরের মধ্যে, বাইরে থেকে আসা কোনো কিছু কে দেখতে পেলেই তাকে ঘায়েল করে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। আমরা যেমন চেনা মানুষকে নির্ভয়ে ঘরে নিয়ে আসি আর অচেনা মানুষকে অনেক সময়ই সন্দেহের চোখে দেখি, বাড়িতে ঢুকতে দিই না। এদের কার্য পদ্ধতিও খানিকটা সেই রকম। শরীরের মধ্যের সমস্ত কিছু, অর্থাৎ প্রতিটি অঙ্গ, প্রতিটি কোষ, প্রতিটি কোষ থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন এনজাইম ও নানা রকম মাল মশলা, সব কিছুকে “আপন” বলে চেনে, আর বাইরে থেকে যারা ঢোকার চেষ্টা করে অর্থাৎ জীবাণু, বিষাণু ইত্যাদি, , তারা হবে তাদের চোখে  বহিরাগত।  বহিরাগতরা যাতে শরীরের দখল না নিয়ে নিতে পারে, শরীরের ক্ষতি না করতে পারে, তার জন্যে এরা অতন্দ্র  প্রহরীর মত পাহারা চালায়, ঢুকে পড়া বহিরাগতকে ঘায়েল করাই এদের কাজ। 

 কিন্তু কোনো কোনো রোগে এই সব পাহারাদারদের  চেনা -অচেনা বাছাই করার ক্ষমতা গণ্ডগোল হয়ে যায়। তখন তারা শরীরের মধ্যে কোনও  কোনও বিশেষ কোষকে আর  চিনতে পারে না।  ভাবে এরা বাইরে থেকে ঢুকেছে।  তখন সেই সব প্রয়োজনীয় কোষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়া তাদের কাজ হয়ে দাঁড়ায়।  যেমন রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস (RA) এ হাড়ের সন্ধিগুলোকে প্রতিরোধ সিস্টেমের পাহারাদাররা বহিরাগত মনে করে তাদেরকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে।  গীয়ান ব’রে সিনড্রোম এ এই পাহারাদারেরা স্নায়ু কোষের বিভিন্ন অংশকে মনে করে বহিরাগত। তারা প্রান্তিক স্নায়ু (peripheral nerve) গুলিকে আক্রমণ করে, স্নায়ুকোষের গায়ে যে মায়েলিন আবরণ থাকে, সেই গুলিকে ধ্বংস করে দেয়। তার ফলে স্নায়ু ক্ষয়ে গিয়ে পক্ষাঘাত ঘটে, মৃত্যুও ঘটতে পারে।  এই রোগ কিন্তু RA র মত ধীর গতিতে চলে না, খুবই দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয়। কয়েক সপ্তাহ, এমনকি কয়েক দিনেও সব ওলট পালট হয়ে যেতে পারে।     

আমাদের প্রতিরোধ তন্ত্রের গণ্ডগোল, অর্থাৎ শরীরের কোষকে বহিরাগত ভাবা, এটা কিন্তু সব সময়ে  বিনা কারণে হয় না।  অনেক সময়ই তার আগে অন্য কোনো সংক্রমণ শরীরের  প্রতিরোধ ব্যবস্থা কে ঘুলিয়ে দেয়।  যেমন গীয়ান ব’রে সিনড্রোম এর ক্ষেত্রে জানা গেছে যে, দু চার সপ্তাহ আগেই কোনো জ্বর বা পেটের অসুখ জাতীয় কোনো সংক্রমণ এই গণ্ডগোলটা তৈরি করে থাকে।  ঠিক কী কী কারণে এই বিধ্বংসী ঘটনা ঘটে তা পুরোটা স্পষ্ট নয় বিজ্ঞানীদের কাছে।

  এটুকু দেখা গেছে যে  জীবাণু ঘটিত অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়াল  এবং বিষাণু ঘটিত অর্থাৎ ভাইরাল  দু ধরণের  সংক্রমণেই, প্রতিরোধতন্ত্র নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারে। দেখা গেছে  সবচেয়ে বেশি  গীয়ান ব’রে সিনড্রোমের ক্ষেত্রে Campylobacter jejuni জীবাণুর সংক্রমণ এর পরে ঘটেছে । ভাইরাসদের মধ্যে Zika, সাইটেমেগালো ভাইরাস (CMV), এমন কি Covid-19এর ভাইরাস SARS -Cov 2 এর সংক্রমণের পর ও এই রোগের প্রকোপ দেখা গেছে। 

 যে কোনো সংক্রমণের পরে আমাদের পাহারাদার কোষেরা যেভাবে কাজ করে সেটা এইরকম: বহিরাগত আক্রমণকারীকে ওরা টুকরো টুকরো করে ফেলে। এক একটি ছোট টুকরো কে এক বা একাধিক পাহারাদার এবার কোণঠাসা করে, তাকে আরো কুচি কুচি করতে করতে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে। এবার এই পাহারাদারদের একটা স্মৃতিশক্তি তৈরি হয়। বহিরাগত আক্রমণকারীর টুকরোগুলোর চেহারা ওরা মনে রেখে দেয়, এবং আবার যখন একই সংক্রমণ অর্থাৎ একই জীবাণু বা বিষাণু আক্রমণ করে, তখন ওরা “এই ব্যাটা আবার ফিরে এসেছে” ভঙ্গিতে রে রে করে উঠে সংক্রমণকারী জীবাণু বা বিষাণুকে প্রথমবার আক্রমণের চেয়েও অনেক তাড়াতাড়ি ধ্বংস করে ফেলে। ‌ আমরা চলতি কথায় ইমিউনিটি যাকে বলি। ‌ টিকা নিলে সেটিও এই একইভাবে আমাদের পাহারাদার কোষ গুলিকে শিখিয়ে দেয়, এই এই আক্রমণকারী জীবাণু বা বিষাণুর চেহারা এইরকম। কাজেই এরকম দেখতে কেউ ঢুকলেই সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধ্বংস করতে হবে। 

দুর্ভাগ্যবশত, যখন একটা বড় জিনিসকে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়, তখন অনেক সময়ই দেখা যায়, কোনও কোনও ছোট টুকরোর সাথে একেবারেই সম্পর্কহীন অন্য কোনও কিছুর একটা টুকরোর সাথে এই পাহারাদাররা গুলিয়ে ফেলেছে। 

একটা সহজ উদাহরণ দিই। ধরা যাক কোনও হাউসিং সোসাইটির পাহারাদারকে তার পূর্বসূরী শিখিয়ে গেল, M লেখা বোতাম ওয়ালা জামা পরা কাউকে দেখলেই মারবি। ওরা অমুক দলের গুণ্ডা।  এখন হঠাৎ ওই সোসাইটিরই  কোনও বাসিন্দা হয়ত একটা ব্যাগ বহুদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে, তাতে নানা রকম অক্ষর লেখা বোতাম, আছে, M ও আছে।  এই নতুন পাহারাদার, যে কিনা এম লেখা বোতাম খোঁজে আগন্তুকদের মধ্যে, একদিন হঠাৎই টর্চ ফেলে দেখলো, একজন ঢুকে যাচ্ছে , তার গায়ে কোথাও একটা M লেখা বোতাম জ্বলজ্বল করছে। পাহারাদার, চৌকিদাররা যেমন হয় সাধারণত, এরপরে আর বুদ্ধি না লাগিয়েই, অর্থাৎ যার গায়ে M লেখা বোতাম দেখা যাচ্ছে, সে ওখানকার সাধারণ বাসিন্দা কিনা এসব ভালো করে খতিয়ে না দেখেই আক্রমণ শুরু করে। 

স্ব- প্রতিরোধের ব্যাপারটা ও ঠিক সেই রকম। যে ব্যাকটেরিয়াটির দ্বারা সংক্রমণ হয়েছিল শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা তার বিরুদ্ধে বিশেষ পাহারাদার অ্যান্টিবডি তৈরি করে। যেমন আগে বলেছিলাম, ওই অ্যান্টিবডি গুলো আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়ার ছোট ছোট অংশকে চিনে নিয়েছে, এক একটি অ্যান্টিবডি এক একটি ছোট অংশের দায়িত্বে। এমনিতে ব্যাকটেরিয়ার শরীর তৈরি ব্যবহৃত জৈব রাসায়নিক ইটপাথরের সাথে মানুষের শরীর তৈরির মাল মসলার জৈব রাসায়নিক চরিত্র খুব একটা এক ধরনের নয়। তবু কখনো কখনো, বিরল ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার বাইরের কাঠামোর এক টুকরো ইট এর চেহারা মানুষের শরীরের ভেতরের কোন একটা অঙ্গের কোন একটা মাল মশলার কোন একটা ছোট খাঁজ এর মত বা কোনো টুকরোর মত দেখতে হতেই পারে।  এটা যে  হয়েছে সেটা নানা বিজ্ঞানী নানা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ ও করেছেন, নানা  স্বপ্রতিরোধ জনিত রোগের ক্ষেত্রে। গীয়ান ব’রে সিনড্রোমের ক্ষেত্রে স্নায়ুতন্তুর মায়েলিন কে ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরের সঙ্গে ভুল করে আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা পাহারাদার অ্যান্টিবডি, এবং সেই ভুলের মাশুলে স্নায়ু কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় । 

 


গীয়ান ব’রে সিনড্রোম (GB Syndrome) নিয়ে কিছু কথা

তবে করণীয় কী ? 

করণীয় একটাই , সংক্রমণ এড়ানো।  তবে সমাজ মাধ্যমে বাতলানো দাওয়াই এ মানুষ আরো বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে।  বলা হচ্ছে ভাত, পনীর ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।  কেন চলুন কিন্তু বলছে না।  2019 এ পেরু তে গীয়ান ব’রে সিনড্রোম এর যে প্রাদুর্ভাব তার কারণ  Campylobacter jejuni জীবাণুর ছড়িয়ে পড়া। মনে করা হচ্ছে এবং 2025 এ পুণেতে ও এই একই কারণে ঘটছে। এই জীবাণুটি গবাদি ও মুরগী জাতীয় পশু র সাথে জড়িত, এদের মলের সাথে ছড়ায়, ছড়িয়ে খাদ্যে এবং পানীয়ে মেশে।  সেই দূষিত খাদ্য ও পানীয় জলের মারফত সংক্রমণ ঘটে মানুষে।  

কিন্তু পনীর বা ভাত খাওয়া বন্ধ করলেই কি সংক্রমণ এড়ানো যাবে? মোটেই না।  পনীর বা দুগ্ধ জাত পদার্থে এমনিই খুব সহজে জীবাণু গজায়।  এগুলো জীবাণুর প্রিয় খাদ্য ও। তেমনি ভাত ও।  কিন্তু দুটো জিনিস ই সুপক্ক হলে, এবং গরম গরম , তৈরী হওয়ার সাথে সাথে খেলে সংক্রমণের সম্ভাবনা খুবই কম।  প্রেশার কুকার এ রান্না হলে তো আরো কম।  কিন্তু বাসি, খোলা খাবার তা সে ভাত বা পনীর হোক বা না হোক, বা ঠিক করে সংরক্ষণ না করা খাবার খাওয়া আর সংক্রমণকে নিমন্ত্রণ করে আনা সমার্থক। বাইরের খাবার খেতে বারণ করছে।  বাড়িতে সাধারণ স্বাস্থ্যের নিয়ম মানে না বা জানে না, বোঝে না এমন লোকের সংখ্যা কিন্তু অনেক।  নিজের বাড়ির পচা খাবার দোকানের গরম খাবারের চেয়ে ভালো হবে কি? আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল পানীয় জল।  পুণে তে এই প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে পানীয় এবং নর্দমার জল পরীক্ষা করা চলছে।  নর্দমার জলে তো Campylobacter jejuni জীবাণু পাওয়া গেছেই, সব চেয়ে ভয়ের ব্যাপার হল বেসরকারি পানীয় জল সরবরাহকারী 19টি সংস্থার জল দূষিত বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই সব জলে যে সব জীবাণু পাওয়া গেছে, সাধারণতঃ জলে মলের দূষণ ঘটলে এই সব জীবাণু দেখতে পাওয়া যায়।  আজকাল লোকের  বোতলীকৃত জলের ওপর অগাধ ভালোবাসা।  রেস্টুরেন্ট বা হোস্টেলের মেস, কিংবা নিমন্ত্রণ বাড়ি, সবাই পরিবেশন করে বোতলের জল। সবাই চায়ও বোতলের জল।  যারা প্লাষ্টিক দূষণ নিয়ে বড় বড় অনুষ্ঠান করে তারাও।  এখন এই বোতল গুলো ব্যবহারের পরে কোথায় যায়,কেউ কি জানে ? 

মধ্য এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত এখন সব পরিবারে একটা করে “একোয়াগার্ড “ থাকে, তা যে কোম্পানির ই হোক না কেন। এগুলোও যে অমোঘ তা কিন্তু নয়।  এইসব যন্ত্র গুলো কবে অর্ধ-বিকল হয়েছে, জলকে ঠিকমত পরিস্রবণ করতে পারছে কিনা, সেটাও সব সময় কিন্তু সহজে ধরা যায় না।  অনেক বিজ্ঞাপন বলে, তাদের কোম্পানির যন্ত্রে এই এই বৈশিষ্ট্য রাখা হয়েছে ভুল ভ্রান্তি আটকানোর জন্যে, কিন্তু সেগুলোও হামেশাই ব্যর্থ হয়।  

কাজেই , পরামর্শ এটাই থাক: টাটকা বানানো খাবার গরম অবস্থাতেই খান, বাসি পচা এড়িয়ে চলুন।  জল ফুটিয়ে খাবেন।  Prevention is better than cure। এ রোগের সঠিক নির্ণয় জটিল এবং ব্যয়সাপেক্ষ , চিকিৎসা ততোধিক জটিল এবং ব্যয়সাপেক্ষ, এবং মৃত্যুহারও বেশি।  

ডঃ সুস্মিতা ঘোষ বায়োটেক স্টার্টআপ ডায়াগনোরাইটের প্রতিষ্ঠাত্রী, আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ কানেটিকাট থেকে বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সেস এর ডক্টরেট।


New
মহাকুম্ভের অমৃতবারি ও অন্ধদের হস্তিদর্শন
মহাকুম্ভের অমৃতবারি ও অন্ধদের হস্তিদর্শন
বিদায় পিটি নায়ার: কলকাতার ইতিহাসবেত্তা
বিদায় পিটি নায়ার: কলকাতার ইতিহাসবেত্তা
এগজিট পোল মিলে গেলেও যে প্রশ্ন উঠবেই
এগজিট পোল মিলে গেলেও যে প্রশ্ন উঠবেই


Other Writings by -ডঃ সুস্মিতা ঘোষ
মহাকুম্ভের অমৃতবারি ও অন্ধদের হস্তিদর্শন
মহাকুম্ভের অমৃতবারি ও অন্ধদের হস্তিদর্শন

প্রয়াগরাজের মেলা সংলগ্ন…


4thPillar

Support 4thPillarWeThePeople

Admin Login Donate
আমাদের কথা

আমরা প্রশ্ন করি সকলকে। আমরা বহুত্ববাদী, স্বাধীন, যুক্তিবাদী। আমরা সংশয়বাদী; তর্কশীল; আবার সহিষ্ণুও বটে। আসুন কথা হোক; পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, বিশ্বাস রেখে আলোচনা হোক। মননের ইতিহাসে শেষ কথা বলার স্পর্ধা কারও যেন না হয়; আবার কোনও স্বরই যেন অকিঞ্চিৎকর বলে উপেক্ষিতও না হয়। এই রকম ভাবনার একটা ইন্টারনেট-ভিত্তিক বিশ্বব্যাপী কমিউনিটি গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।

© 2023 4thPillarWeThepeople. All rights reserved & Developed By - 4thPillar LeadsToCompany
// Event for pushed the video