4thPillar


প্রভু জগন্নাথ সকলকেই ক্ষমা করে দেবেন

সুদীপ্ত সেনগুপ্ত | 23-06-2020May 15, 2023
প্রভু জগন্নাথ সকলকেই ক্ষমা করে দেবেন

করোনার কারণে সারা দেশে সমস্ত বড় ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ। পুরীর রথযাত্রার কী হবে? জনস্বার্থ মামলার সুবাদে নিষ্পত্তির দায় বর্তাল দেশের শীর্ষ আদালতের উপর। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নেতৃত্বে তিন সদ্যের বেঞ্চ 18 জুন রায় ঘোষণা করলবিশেষ পরিস্থিতির কারণে এই বছর রথযাত্রা বন্ধ। বিচারপতি বোবদের ভাষায়, “এই বছর রথযাত্রা হলে প্রভু জগন্নাথ আমাদের ক্ষমা করবেন না।”

জনস্বার্থে আদালতের ওই রায়ে স্পষ্টতই সকলের স্বার্থ রক্ষিত হয়নি। অতএব তাঁরা ময়দানে নামলেন এবার। মাত্র চার দিনের মাথায় ওই প্রধান বিচারপতি বোবদের নেতৃত্বে একই বেঞ্চ কিছু শর্ত সাপেক্ষে রথযাত্রার অনুমতি দিয়ে দিল। ওড়িশা সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারও চার দিনের মধ্যে নিজেদের অবস্থান পুরো 180 ডিগ্রি ঘুরিয়ে ফেললরথযাত্রার ব্যবস্থা করা ‘অসম্ভব’ থেকে ‘সম্ভব’ হয়ে গেল। মাঝখানে নরেন্দ্র মোদী, পুরীর শঙ্করাচার্য, গজপতি মহারাজ প্রমুখ কয়েকজন সামান্য রক্তমাংসের মানুষের কিছু ভূমিকা ছিল। সেই ভূমিকার কথা মোদীর সহকর্মী আরও একজন সামান্য রক্তমাংসের মানুষ অমিত শাহ সগৌরবে ঘোষণাও করে দিয়েছেন।

 

সবই প্রভু জগন্নাথের লীলা!

 

জয় জগন্নাথ!

 

ঈশ্বরের ইচ্ছা নিয়ে কিছু বলার স্পর্ধা আমাদের নেই। কিন্তু আমাদের মতোই নশ্বর দেহের অধিকারী মানুষের ইচ্ছা-কর্ম-সিদ্ধি নিয়ে তো অনেক কিছুই বলার আছে!


প্রভু জগন্নাথ সকলকেই ক্ষমা করে দেবেন

পুরীর রথযাত্রার সঙ্গে কোটি কোটি মানুষের তীব্র ধর্মীয় ভাবাবেগ জড়িত। সুপ্রিম কোর্টের রথযাত্রা বন্ধের নির্দেশে সেই ভাবাবেগে আঘাত লেগেছিল ঠিকই। কিন্তু রায় মানব না, এমন কথা কেউ বলেননি। ওড়িশা বা দেশের অন্য কোথাও প্রবল জন আন্দোলন শুরু হয়েছিল, এমনও নয়। ধর্মীয় বিধি অনুসারে একবার রথযাত্রা বন্ধ রাখলে 12 বছর বন্ধ রাখতে হবে এবং গত 284 বছরে কখনও তা বন্ধ রাখতে হয়নি, এটাও ঠিক। কিন্তু এটা কোনও সদ্য জানতে পারা তথ্য নয়; 18 জুন সুপ্রিম কোর্টের রথযাত্রা বন্ধের নির্দেশের আগেও এটা জানা ছিলআদালতে সওয়াল জবাবের সময় এ প্রসঙ্গ উঠেও ছিল। সব জেনে বুঝেই করোনা সংক্রমণ রুখতে অন্য সব বড় ধর্মীয় জমায়েতের মতোই রথযাত্রাও বন্ধ রাখাই ছিল শীর্ষ আদালতের সুচিন্তিত মতামত।

 বিপরীত একটি সুচিন্তিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হল, কোর্টের নির্দেশ কোনওভাবে ঘুরিয়ে দিয়ে যদি রথযাত্রা চালু রাখা যায় এবং সেই কর্মের পিছনে কোনও ভক্তের অবদান প্রতিষ্ঠা করা যায়, তবে রথ দেখা এবং রাজনীতির কলা বেচা দুটোই একাধারে হতে পারে। সেটা কোনওরকম রাখঢাক না করেই প্রকাশ করে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রথযাত্রা বন্ধের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন করেছিলেন বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র। অমিত শাহ জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেই পিটিশনের বিষয়ে তিনি গজপতি মহারাজ এবং পুরীর শঙ্করাচার্যর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার পরই কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টে শর্ত সাপেক্ষে রথযাত্রার অনুমতির পক্ষে সওয়াল করেন। এই ধরনের ধর্মীয় ভাবাবেগ যেখানে জড়িত সেখানে ওড়িশা সরকারও তার পক্ষেই মত দেয়। কোটি কোটি মানুষের ভাবাবেগ রক্ষার জন্য তারা যে নরেন্দ্র মোদীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে, সেটা উল্লেখ করতে ভোলেননি শাহ। মামলাটি ছিল রথযাত্রা সংক্রান্ত। সুতরাং ইদ-উল-ফিতর বা অন্য বিভিন্ন ধর্মীয় জমায়েত নিয়ে অন্য কোটি কোটি মানুষের ভাবাবেগ ইত্যাদি প্রশ্ন এখানে অবান্তর।

 


New
মাদক ব্যবসা ও বিভাজনের রাজনীতির আবর্তে আজকের মণিপুর
ভ্রাতৃঘাতী লড়াইয়ে রাষ্ট্রীয় মদত? বিস্ফোরক রিপোর্ট অসম রাইফেলসের
বিরোধী জোট আছে, রাজনীতি কই?


Other Writings by -সুদীপ্ত সেনগুপ্ত | 23-06-2020

// Event for pushed the video