4thPillar


মোদীর মর্জি মেটাতে নাজেহাল বিদ্যুৎ কর্তারা

রজত রায় | 05-04-2020May 11, 2023
মোদীর মর্জি মেটাতে নাজেহাল বিদ্যুৎ কর্তারা

কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের হিসাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মোমবাতি জ্বালানোর উৎসবের দরুণ রবিবার রাত ন’টা নাগাদ গোটা দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় এক ধাক্কায় 13000 মেগাওয়াট চাহিদা কমে যাবে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে কমবে 753 মেগাওয়াট। আবার 9 মিনিট পরেই এক লাফে ওই ঘাটতি পূরণ করে চাহিদা আবার আগের জায়গায় ফিরে আসবে। এই সামান্য 9 মিনিটের মধ্যে এতবড় ওঠানামা কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের মতে নজিরবিহীন। মোদীর ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়েও গোটা দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের তরফে পাওয়ার সিস্টেম অপারেশন কর্পোরেশন লিমিটেড শনিবার একটি 14 পাতার নির্দেশাবলী সব রাজ্যকে পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রাত ন’টা বাজার 2-4 মিনিট আগে থেকেই বিদ্যুতের চাহিদা হু হু করে নেমে আসতে পারে, আর মোমবাতি পর্ব শেষ হওয়ার 2-4 মিনিট পরে চাহিদা বেড়ে আগের জায়গায় আসবে। এই ‘নজিরবিহীন’ অবস্থার মোকাবিলায় তাপবিদ্যুৎ-এর সঙ্গে জলবিদ্যুৎ ও গ্যাস থেকে তৈরি বিদ্যুৎকে পুরোদমে কাজে লাগাতে হবে। 


কেন্দ্রের নির্দেশাবলীতে বলা হয়েছে:
1. দেশের সব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ঘড়ি এক সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে। 
2. সন্ধ্যার সর্বোচ্চ চাহিদার সময়, অর্থাৎ সন্ধ্যা 6টা 10মিনিট থেকে রাত 8টা পর্যন্ত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি চালু রাখলেও ন্যূনতম বিদ্যুৎ তৈরি করবে, শুধু রাত ন’টায় দরকারের সময়ের জন্য তৈরি রাখতে হবে। সন্ধ্যা থেকে রাত 8টা পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে তাপবিদ্যুতের সঙ্গে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কাজে লাগানো হবে। 
3. রাত 8টার পর থেকে ন’টার আগে পর্যন্ত বড় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির উৎপাদন ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হবে, রাত 8-55 মি: এর মধ্যে বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে 60 শতাংশে নিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সেই তালে বাড়িয়ে যেতে হবে। 
4. রাত 8-57 মি: থেকে জলবিদ্যুৎ ও গ্যাসবিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো শুরু হবে। গোটা দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ফ্রিকোয়েন্সি স্থিতাবস্থায় আছে কি না, সে দিকে কড়া নজর রেখে চলতে হবে। তাই বলে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি বন্ধ করা চলবে না, বড়জোর 10 শতাংশ ক্ষমতায় চালিয়ে চালু রাখতে হবে। 
5. রাত 9-05 মি:থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি আবার উৎপাদন বাড়াতে শুরু করবে। রাত 9-09 মি: থেকে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিও উৎপাদন বাড়াতে শুরু করবে যাতে বাড়তি চাহিদাকে সামলানো যায়।
6. পাম্প স্টোরেজ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি (যেমন, পশ্চিমবঙ্গের অযোধ্যা পাহাড়ে আছে) রাত 8-45 মি: থেকে চালু করে দিতে হবে। রাত 9-09 মি: পর্যন্ত তা থেকে সিস্টেমে বিদ্যুৎ দিয়ে তারপর বন্ধ করতে হবে। 

 

রবিবার বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় কোনও বিপর্যয় যাতে না হয়, সেই জন্য ন্যাশনাল  লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার সবরকম ব্যবস্থা নিয়ে তৈরি। এ কথা জানিয়ে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের সচিব সঞ্জীব নন্দন সহায় সব রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতরের শীর্ষ আধিকারিককে চিঠি  দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন:
1. প্রধানমন্ত্রী রবিবার রাত ন’টায় ঘরের আলো নেভাতে বলেছেন, কিন্তু রেফ্রিজারেটর, টিভি, এ সি মেশিন ইত্যাদি এবং রাস্তার আলো নেভাতে বলেননি। বিদ্যুতের চাহিদার ওঠানামার ধাক্কা সামলাতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাই সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্তে টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি আগের মতোই চালু রাখতে পারেন। *
* বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য: যতই বলা হোক যে, সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আসল সময়ে সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র একই ফ্রিকোয়েন্সি ধরে রাখতে না পারলেই বিপদ ঘটতে পারে। তখন তার ধাক্কাটা পড়বে গোটা দেশের বিদ্যুতের গ্রিডে। কোন কোন অঞ্চল সার্কিট ব্রেকার দিয়ে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে বিপদ এড়াতে পারবে তা আগাম বলা কঠিন। তাই সাবধানের মার নেই। ঘরের টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি রাত ন’টার 15 মিনিট আগে থেকে বন্ধ করে দীপাবলি শেষ হওয়ার 15 মিনিট পর পর্যন্ত বন্ধ রাখাই শ্রেয়। এমনকি ইলেকট্রিক ফ্যানও। কারণ, ফ্যানের ক্যাপাসিটার ফ্রিকোয়েন্সির ওঠানামা নিয়ে ভীষণরকম স্পর্শকাতর। 
2. স্থানীয় প্রশাসনকে মনে করিয়ে দিতে হবে যে রাস্তার আলো জ্বালিয়ে রাখতে হবে। না হলে, আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে। 
3. হাসপাতাল ও অন্যান্য জরুরি পরিষেবা চালু রাখতে সেখানে আলো নেভানো চলবে না। 
 


এমনিতে লক ডাউনের জন্য অধিকাংশ কলকারখানা বন্ধ, ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ, শপিং মল, সিনেমা হল, রেস্তোরাঁ সব বন্ধ। যেহেতু দেশের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মধ্যে শিল্প সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, বাণিজ্যিক ক্ষেত্র তার পরেই আর সাধারণ গৃহস্থরা সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি গ্রাহক হলেও সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ খরচ করে। দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এখন 3,67,281 মেগাওয়াট (কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক, 17 মার্চ, 2020), সে জায়গায় দেশজুড়ে ঘরে ঘরে মোমবাতি জ্বালানোর দরুণ  13,000 মেগাওয়াট চাহিদা কমবে। বলা হচ্ছে, লক ডাউনের জন্য ইতিমধ্যেই বিদ্যুতের উৎপাদন 25 শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সম্ভবত আরও বেশি হ্রাস পেয়েছে।  ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিও লোকসান করতে শুরু করেছে। তার উপর মোমবাতি জ্বালাতে গিয়ে যদি আরও বিপত্তি ঘটে, সব লোকসানের দায় তো শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদের ঘাড়েই চাপবে। করোনা মোকাবিলায় মোদীর এই মোমবাতি নাটক সবদিক থেকে দেশবাসীর কাছে দীপাবলির পরে অমাবস্যাকেই ফিরিয়ে আনতে পারে।  


New
মাদক ব্যবসা ও বিভাজনের রাজনীতির আবর্তে আজকের মণিপুর
ভ্রাতৃঘাতী লড়াইয়ে রাষ্ট্রীয় মদত? বিস্ফোরক রিপোর্ট অসম রাইফেলসের
বিরোধী জোট আছে, রাজনীতি কই?


Other Writings by -রজত রায় | 05-04-2020

// Event for pushed the video