4thPillar


বিশ্বভারতীর ঐতিহাসিক রতন কুঠি এখন সিবিআই অফিস!

রজত রায় | 22-08-2022April 19, 2023
বিশ্বভারতীর ঐতিহাসিক রতন কুঠি এখন সিবিআই অফিস!

সি বি আই অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করার পর থেকে তাকে জেরা করে চলেছে। অনুব্রতর কিছু সঙ্গীকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন অনুব্রতর আরও কিছু সঙ্গীসাথীকে গ্রেফতার না করলেও প্রায় রোজই তাদের ডাকিয়ে এনে জেরা করার কাজ চলছে। এসবই অনুব্রতর বিরুদ্ধে গরু, কয়লা, পাথর ও বালির চোরাচালানের অভিযোগের সপক্ষে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য তদন্তের অঙ্গ। সে নিয়ে বলার কিছু নেই। কিন্তু গোটা ব্যাপারটার সঙ্গে বিশ্বভারতী যে ভাবে জড়িয়ে গেছে, তা রীতিমত চিন্তার ও উদ্বেগের ব্যাপার।

প্রকাশিত খবরেই জানা গিয়েছে যে অনুব্রতকে তার বোলপুরের নিচুপট্টি এলাকার বাসভবন থেকে তুলে আনার আগের দিন সি বি আই অফিসাররা সদলবলে বিশ্বভারতীর রতন কুঠি অতিথিশালায় রাত কাটিয়েছেন। রতন কুঠি বা টাটা বিল্ডিং নামে পরিচিত ওই গেষ্ট হাউস বহুদিন ধরেই বিশ্বভারতীর নামী ও বিশিষ্ট অতিথিদের থাকার জায়গা হিসাবে পরিচিত। বহু শিল্পী সাহিত্যিক এবং পণ্ডিত অধ্যাপক শান্তিনিকেতনে এসে রতন কুঠিতে থেকেছেন। এখন সেখানে সি বি আই অফিসাররা থাকছেন। আরও জানা যাচ্ছে, বিশ্বভারতীরই আর একটি গেস্ট হাউসকে রীতিমত নিজেদের অফিসে পরিণত করে সি বি আই সেখানে বিভিন্ন মানুষকে (অনুব্রতর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সন্দেহে) ডেকে এনে জেরা করে চলেছে। এ ভাবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনকে সি বি আই এর কর্মভূমিতে পরিণত করা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষক সমাজ থেকে কোনও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে বলে শোনা যায়নি।

ইংরেজ আমল থেকেই শিক্ষার প্রাঙ্গনে পুলিশের প্রবেশকে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ বলেই গণ্য করা হয়েছে। স্বাধীনতার পরেও শিক্ষার অঙ্গনে পুলিশের প্রবেশে বাধা দিয়ে এসেছেন শিক্ষাবিদরাই। এমনকি নকশাল আমলেও সেই রাজনৈতিক মতাদর্শের সহমর্মী না হয়েও কলকাতা ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে পুলিশকে ঢুকতে দিতে চাইতেন না কর্তৃপক্ষ। এখন যে ভাবে সি বি আই বিশ্বভারতীর অঙ্গনে জাঁকিয়ে বসেছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে পূর্ণ সম্মতি রয়েছে। এটা ঠিক যে বিশ্বভারতী একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং সি বি আই একটি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। কিন্তু তার দ্বারা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এই অধিকার জন্মায় না যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গনে সি বি আইকে আদর করে ডেকে এনে বসতে দেবে।


বিশ্বভারতীর ঐতিহাসিক রতন কুঠি এখন সিবিআই অফিস!

মনে রাখতে হবে যে সি বি আই এখানে রবীন্দ্রনাথের নোবেল পদক চুরির তদন্ত করতে আসেনি, এসেছে বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও তার সঙ্গীসাথীদের চুরির অভিযোগের তদন্ত করতে। অনুব্রত শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা নয়, বিশ্বভারতীর সঙ্গে তার কোনও যোগ নেই। তাই সি বি আইয়ের তরফে বিশ্বভারতীতে ঘাঁটি গেড়ে ওই তদন্ত চালানোর কোনও যুক্তি নেই। বরং অবিলম্বে বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষের উচিত, সি বি আইকে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে সরে অন্যত্র গিয়ে তাদের তদন্ত কাজ চালাতে বলা। শান্তিনিকেতন ও বোলপুর এলাকায় অসংখ্য হোটেল ও লজ রয়েছে। তারই কোনও একটি বেছে নিয়ে সি বি আই সেখানে তাদের অস্থায়ী বাসস্থান ও অফিসের ব্যবস্থা করতে পারে। নিরাপত্তার প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনী সি আর পি এফকে দিয়ে হোটেল চত্বরে পাহারার ব্যবস্থাও করতে পারে। শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা নষ্ট না করলেই হল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কর্তৃপক্ষ যে ভাবে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন সরকার ও দলকে তুষ্ট করে চলতে অভ্যস্ত, তাতে তারা এ নিয়ে মাথা ঘামাবেন না বলেই মনে হয়। একমাত্র বিশ্বভারতীর শিক্ষকও ছাত্রসমাজ এবং রাজ্যের শিক্ষাজগতের মানুষেরা প্রতিবাদে সরব হলে তবেই তাঁদের টনক নড়তে পারে। কিন্তু সেরকম কিছু আদৌ হবে কি?

#AnubrataMondal #CBI_at_VisvaBharati #RatanKuthi



New
মাদক ব্যবসা ও বিভাজনের রাজনীতির আবর্তে আজকের মণিপুর
ভ্রাতৃঘাতী লড়াইয়ে রাষ্ট্রীয় মদত? বিস্ফোরক রিপোর্ট অসম রাইফেলসের
বিরোধী জোট আছে, রাজনীতি কই?


Other Writings by -রজত রায় | 22-08-2022

// Event for pushed the video