4thPillar


ধর্ম-অধর্মের পাশাখেলায় মহাভারতের শকুনি

অদিতি ভট্টাচার্য্য | 08-08-2020May 11, 2023
ধর্ম-অধর্মের পাশাখেলায় মহাভারতের শকুনি

ইন্দ্রপ্রস্থে রাজা যুধিষ্ঠিরের সভা। রাজসূয় যজ্ঞে আমন্ত্রণ পেয়ে ময়দানবের তৈরি করা সে অত্যাশ্চর্য সভায় ভাইদের সঙ্গে করে প্রবেশ করছেন দুর্যোধন। সঙ্গে অবশ্যই রয়েছেন ছায়াসঙ্গী শকুনি। দুর্যোধন দেখছেন, ঘুরে ঘুরে। চমকিত হচ্ছেন, ঈর্ষায় জ্বলে পুড়ে খাক হচ্ছেন। শকুনি নির্বিকার, দুর্যোধনের ঈর্ষা তাঁকে স্পর্শ করছে না। তাঁর পাখির চোখ বহুদূরের পথে নিবদ্ধ। সে চোখে আগুন, যে আগুন খালি চোখে দেখা যায় না।

 

মহাভারত হরেক চরিত্রের সম্ভার। মূল চরিত্রের পাশে পাশে এগিয়ে চলা চরিত্রগুলো পুষ্ট করে আখ্যানকে, নতুন মোড় দেয়, কখনও বা  মূল চরিত্রও ম্লান হয়ে পড়ে এইসব চরিত্রের কর্মকুশলতায়। শকুনি তেমনই এক চরিত্র। আপাতদৃষ্টিতে মহাভারত পড়ে, শুনে শকুনিকে খলনায়ক বলে দেগে দেওয়া সম্ভব খুব সহজেই। খুব সহজেই তাঁকে ফেলে দেওয়া যায় বাতিলের খাতায়। কিন্তু যদি একটু গভীরভাবে ভাবা যায় যে, তিনি হলেনই বা খলনায়ক, মানুষ তো বটে! তাঁরও তো একটা মন আছে! কী বলে সে মন? কেনই বা এমন সর্বনেশে পাশাখেলায় মেতে সব ধ্বংস করতে প্রবৃত্ত হলেন তিনি? সে সব জানতে হলে শকুনিকে জানতে হবে। চলে যেতে হবে আফগানিস্তানে, পার্বত্যপ্রদেশ সেদিনের গান্ধার রাজ্যে।

 

আমাদের মনে সবসময়েই ধর্ম আর অধর্মের টানাপোড়েন চলে। বেশিরভাগ সময়ে অজান্তেই আমরা ধর্মের পক্ষ নিই, অধর্মের ছায়া থেকে সরে থাকার চেষ্টা করি। অধর্মকে না জানলে যে ধর্মের বোধ জন্মাবে না। অভাব ছাড়া ভাবের অস্তিত্ব কোথায়! মহাভারত ধর্মের জয়ের কথা বলে। যে অধর্মকে পিছনে ফেলে ধর্মের এগিয়ে যাওয়া, সেই অধর্মের অন্যতম হোতা ছিলেন শকুনি। পাশা খেলেছিলেন ছল করে। খেলায় হেরেছিলেন যুধিষ্ঠির, হারিয়েছিলেন সর্বস্ব। যুদ্ধ ছাড়া কোনও গতিই ছিল না। শকুনি তো শুধু পাশা খেলেছিলেন, আর তো কোনও অন্যায় করেননি। যুদ্ধে কাউকে বধ করেছিলেন, এমনটাও শোনা যায় না। তবে কেন তিনি খলনায়ক?

 

মহাভারত শকুনির জন্ম বা বেড়ে ওঠা নিয়ে বিশদে কিছু বলে না। তবু যেটুকু সূত্র পাওয়া যায়, তা দিয়ে একটু পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে এই অসামান্য ধুরন্ধর চরিত্রটির সঙ্গে। গান্ধার রাজ্যের রাজা সুবল ছিলেন প্রহ্লাদের শিষ্য। তাঁর সন্তান ছিলেন শকুনি ও গান্ধারী। দেবতার কোপে বা অভিশাপে উভয়েই ধর্মের শত্রু হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মলগ্ন থেকেই যেন অভিশাপ এসে স্পর্শ করেছিল শকুনি ও গান্ধারীকে। উভয়েই ছিলেন অর্থনীতিতে অতি নিপুণ। শকুনির ক্রূরত্বের আরও নমুনাস্বরূপ মহাভারতকার বলেন, শকুনির জন্ম হয় দ্বাপরের অংশে। দ্বাপর হলেন তৃতীয় যুগের অধিষ্ঠাতা দেবতা। তিনি দেবতা হলেও ক্রূর প্রকৃতির।

 

তাহলে, এখনও অবধি শকুনির যে পরিচয় মিলল, তা হল, তিনি ধর্মের শত্রু, ক্রূর প্রকৃতির, অর্থনীতিবিদ এবং তীক্ষ্ণধী।

 

গান্ধাররাজ সুবলের জ্যেষ্ঠ পুত্র শকুনি। শকুনির অন্য চারভাই ছিলেন। আর বোন গান্ধারী ছিলেন পরমাসুন্দরী। আগেই জেনেছি গান্ধারী যথেষ্ট শিক্ষিত ছিলেন। সেই সময় ভীষ্ম, পাণ্ডু ও ধৃতরাষ্ট্রের জন্য পাত্রী অন্বেষণ করছিলেন। খোঁজ মেলে কুন্তী, মাদ্রী ও গান্ধারীর। সদ্বংশজাত, সুন্দরী শিক্ষিতা, ঠিক যেমনটা চেয়েছিলেন ভ্রাতৃবধূ হিসেবে, এঁরা ছিলেন ঠিক তেমনই। জ্যোতিষীরা গান্ধারীর বিষয়ে বলেছিলেন, গান্ধারী শতপুত্রের জননী হবেন। অন্যদিকে ভীষ্মের উদ্দেশ্য ছিল, যাতে কুরুবংশ সমুদ্রের মত অত্যন্ত বৃদ্ধিলাভ করে। সে ক্ষেত্রে গান্ধারী সদ্বংশজাতা, আবার জ্যোতিষীদের ভবিষ্যদ্বাণীও জুড়ে রয়েছে তাঁর সঙ্গে। সবদিক থেকে গান্ধারীকে পাত্রী হিসেবে ভীষ্মের পছন্দ হল। শুধু তাঁর একটাই দ্বিধা ছিল, রাজা সুবল আদৌ রাজি হবেন কিনা এমন প্রস্তাবে। কারণ, ধৃতরাষ্ট্র ছিলেন জন্মান্ধ। এদিকে সুবল দেখলেন বংশ, দেখলেন রাজ্যপাট, রাজি হয়ে গেলেন অন্ধ পাত্রের সঙ্গে নিজের পরমাসুন্দরী কন্যার বিবাহ দিতে। হয়ত বা ভীষ্মের প্রতিপত্তিকে এড়িয়ে যেতে পারেননি। ভীষ্ম যে ভ্রাতুষ্পুত্রের জন্য পাত্রী হিসেবে তাঁর কন্যাকে নির্বাচন করেছিলেন, এতেই কৃতার্থ হয়েছিলেন তিনি। যথারীতি গান্ধারীর কোনও মত নেওয়া হল না। সুবল যখন ভীষ্মকে বিবাহের কথা দিয়ে দিলেন, তখন গান্ধারী জানতে পারলেন যে, তাঁর হবু স্বামী অন্ধ। পিতা জেনে শুনে রাজি হয়েছেন অন্ধ রাজপুত্রের সঙ্গে বিবাহ দিতে। তিনি কুল-মান দেখেছেন, তাঁর মন দেখেননি। গান্ধারীও বস্ত্রখণ্ড দিয়ে নিজের চোখকে বেঁধে ফেললেন। নিজেকে শাস্তি দিলেন, চিরদিনের মতো। গান্ধারীর বিয়ের পর শকুনিও এসেছিলেন তাঁর সঙ্গে বোনের শ্বশুরবাড়ি। এর কিছু সময় পর থেকেই শকুনি কৌরবদের পরিবারের সঙ্গেই থাকতে শুরু করেন। রাজ্যপাটের মোহ বিসর্জন দিয়ে শকুনি দুর্যোধনের ছায়াসঙ্গী হলেন।

 

মহাভারত শকুনির ক্রূরতা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ইত্যাদির কথা বললেও শকুনির  মনের কথা নিয়ে বিশেষ কিছু বলেনি। বোনের প্রতি হওয়া এই তীব্র বঞ্চনার ফলে কি তাঁর ক্রোধের জন্ম হয়েছিল? তাই কি এমন শান্তচিত্তে অতি ধীরে কৌরব ভাইদের মনে, বিশেষ করে দুর্যোধনের মনে বিষ ভরে দেওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছেন? যার ভয়াবহ পরিণাম কুরুবংশ ধ্বংস! কোথাও কি তাঁর মনের মধ্যে তৈরি হয়েছিল এমন প্রতিহিংসার বীজ, যার ফলে রাজ্যপাটের মোহ ছেড়ে ঝাঁপ দিলেন এক আগুনে? শেষ করার খেলায় মাতলেন, এটা জেনেও যে এ আগুন তাঁকেও নিস্তার দেবে না?

 

পাণ্ডবদের মধ্যে অর্জুন ছিলেন শ্রেষ্ঠ তীরন্দাজ, আর ভীম অত্যন্ত বলশালী। ফলে তাঁদের সঙ্গে ঠিক এঁটে উঠতেন না দুর্যোধন। নিষ্ফল আক্রোশে শুধু মনে মনে পরিকল্পনা করতেন কীভাবে তাঁদের জব্দ করা যায়। কর্ণের অর্জুনের প্রতি স্বাভাবিক বিদ্বেষ ছিল। সূতপুত্র হওয়ায়, বীর হওয়া সত্ত্বেও বঞ্চিত ছিলেন সেই সমস্ত সুযোগ থেকে, যা এক বীরের প্রাপ্য। এই সমস্ত কিছু জানতেন শকুনি। পাণ্ডবদের সঙ্গে সরাসরি শত্রুতা ছিল না কোনও। কিন্তু চেতন বা অবচেতনে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল কুরুবংশ ধ্বংস করা। সেক্ষেত্রে প্রথম কাজ হল ভাইয়ে ভাইয়ে বিভেদ সৃষ্টি করা। সূক্ষ্মভাবে ধীরগতিতে সে কাজ করেছেন শকুনি। দুর্যোধনের অন্যায় কাজে সঙ্গ দিয়েছেন। যুধিষ্ঠিরের আমন্ত্রণে ইন্দ্রপ্রস্থে তাঁর সভায় কৌরব ভাইদের সঙ্গে শকুনি উপস্থিত হয়েছেন। সে রাজসভা দেখে দুর্যোধনের মনে মনে তৈরি হচ্ছে অসূয়া। যুধিষ্ঠিরের প্রাসাদে স্ফটিকময় ভূমিকে জল মনে করে পরনের কাপড় গুটিয়ে চলতে গিয়ে হোঁচট খেলেন তিনি। আবার স্ফটিকের মত স্বচ্ছ জলে পড়ে গেলেন। সিক্ত হলেন, হেসে উঠল আশপাশের লোকজন। ঈর্ষা, অসূয়া আর ক্রোধ, সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল। হতাশায় বলে উঠলেন পাশে থাকা মাতুল শকুনিকে, পাণ্ডবদের এমন সমৃদ্ধি তিনি সহ্য করতে পারছেন না। অথচ কীভাবে তাদের দমন করা যায়, সে বিষয়ে কোনও উপায়ও চোখে পড়ছে না। তাই সখেদে বলে উঠলেন, শত্রুর সমৃদ্ধি দেখা অপেক্ষা মৃত্যুবরণ করা ভাল। এখানে শকুনিও পাকা কূটনীতিবিদের মতো সাময়িকভাবে দুর্যোধনকে বললেন, যুধিষ্ঠিরের প্রতি এমন ক্রোধ করা উচিত নয়, কারণ পাণ্ডবেরা তাদের ভাগ্যের ফল ভোগ করছে। তাদের ভাগ্যবশতই ইতিপূর্বে আসা সমস্ত বিপদ থেকে তারা মুক্তি পেয়েছে। দুর্যোধনের অনিষ্টচিন্তা তাদের কোনওরকম আঁচ ফেলতে পারেনি। শকুনি নানাভাবে দুর্যোধনকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। ভাবখানা এমন, যেন যথার্থ অভিভাবক তিনি। তিনি জানতেন, এই ঈর্ষা থেকে দুর্যোধনের সহজে নিস্তার নেই। এই ঈর্ষার আগুন তাঁর মনের জ্বালার সঙ্গে মিলেমিশে তাঁর স্বার্থসিদ্ধির সহায়ক হতে পারে। সুতরাং, একে জিইয়ে রাখতে হবে। দুর্যোধনের ভাগ্য তখন তাঁকে টেনে নিয়ে চলেছে অতলখাদের দিকে। শকুনি পরামর্শ দিলেন, একটাই উপায় আছে, যাতে করে যুধিষ্ঠিরকে জয় করা যেতে পারে। যুধিষ্ঠির দ্যুতপ্রিয়, অথচ তিনি পাশা খেলতে মোটে জানেন না। অন্যদিকে শকুনি এটা জানেন, এ সময়ে তাঁর মতো পাশাবিদ আর কেউ নেই পৃথিবীতে। তাই একমাত্র পাশাখেলাতেই যুধিষ্ঠিরকে হারানো যেতে পারে। ইন্দ্রপ্রস্থ থেকে ফিরে পিতাকে দুর্যোধন মনোগত অভিপ্রায় জানালেন। ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ, দুর্যোধন প্রবল, কূটবুদ্ধি শকুনি তাঁর সহায়। পিতার ধর্মবুদ্ধি দুর্যোধনের অধর্মমতির তোড়ে ভেসে গেল। পণজ্ঞ শকুনি তাঁর পণরূপ ধনু, পাশকরূপ বাণ নিয়ে পাশকের অবস্থাকে গুণ হিসেবে কল্পনা করে আসনরূপ রথে চড়ে যুদ্ধে নামলেন। পাশাখেলারূপ সে যুদ্ধে যুধিষ্ঠিরের বিপক্ষে শকুনির সঙ্গে রাজা চিত্রসেন, সত্যব্রত, পুরুমিত্র ও জয় ছিলেন। যুধিষ্ঠির জানতেন যে এঁরা সকলেই ধূর্ত ও ছলপরায়ণ। কিন্তু ওই যে বলে, নিয়তিকে কে খণ্ডাতে পারে! তিনি পাশার মোহকে এড়িয়ে যেতে পারলেন না।

 

স্পষ্টবক্তা শকুনি খেলার আগেই জানিয়ে দিলেন, যে এই খেলায় শঠতা অবলম্বন করা হয়। শকুনির প্ররোচনায় জেনে শুনে পাশা গহ্বরে প্রবেশ করলেন যুধিষ্ঠির। শকুনির শঠতায় একে একে সমস্ত হারালেন যুধিষ্ঠির, এমনকী দ্রৌপদীকে পর্যন্ত। পাণ্ডবদের পরাজয়ে আস্ফালন করেছেন দুর্যোধন, দুঃশাসন। কিন্তু শকুনি কোনওরকম অপমানসূচক মন্তব্য করেননি। অক্ষবিশারদ শকুনি যুধিষ্ঠিরকে পাশাখেলায় প্ররোচিত করেছেন, পাশা খেলেছেন, ছল করে হারিয়েছেন। সর্বহারা পাণ্ডবদের দীর্ঘশ্বাস কুঁড়িয়েছেন, কিন্তু অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন। এই পাশাখেলার সময়েই পাণ্ডবরা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সহদেবের হাতে শকুনির মৃত্যু হবে। এটা শেষ পর্যন্ত সত্য হয়েছিল কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে। সে তো অনেক পরের কথা। তারও আগে যুধিষ্ঠিরসহ পাণ্ডব ভাইরা যখন বনে গেছেন, দুর্যোধন ভাইদের সঙ্গে একা রাজ্যভোগ করছেন। নেই কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী, নেই কোনও ঈর্ষার পাত্র। দুর্যোধন নিশ্চিন্ত, কিন্তু শকুনির তো কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। তিনি উত্তেজিত করছেন দুর্যোধনকে, বলছেন, শত্রুর দুঃখ দেখে যে আনন্দ লাভ করা যায়, সেরূপ আনন্দ পুত্র, ধন বা রাজ্যলাভ করেও পাওয়া যায় না। শকুনির এই কথায় সায় দিচ্ছেন কৌরবরা। বল্কল মৃগচর্মপরিহিতা দুঃখিনী দ্রৌপদীকে দেখার ইচ্ছায় দুর্যোধন মনে মনে উল্লসিত হয়ে উঠেছেন। দ্বৈতবনের কাছে গোপপল্লীতে যাওয়ার কপট আর্জি নিয়ে গিয়েছেন ধৃতরাষ্ট্রের কাছে। ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ, নিরূপায়। সব অভিসন্ধি বুঝতে পেরেও সায় দিয়েছেন এই শর্তে যে, যেন দ্বৈতবনে বসবাসকারী পাণ্ডবদের কোনও ক্ষতি না হয়। দেবরাজ ইন্দ্রের আদেশে গন্ধর্ব চিত্রসেন সৈন্যসামন্ত নিয়ে কৌরবদের বাধা দেন, প্রবল যুদ্ধ হয়। কৌরবরা পিছু হঠতে বাধ্য হন। পাণ্ডবেরা এসে কৌরব ভাইদের মুক্ত করেন। এতে দুর্যোধনের আত্মসম্মানে লাগে। তিনি এই সময় প্রায়োপবেশনে বসার ইচ্ছা প্রকাশ করলে শকুনি দুঃশাসন ও কর্ণের সঙ্গে তাঁকে নানাভাবে বুঝিয়েছেন। দুর্যোধন তাতে কর্ণপাত করেননি। পরে পাতালবাসী দানবদের আশ্বাসে তাঁর লজ্জা ও মৃত্যুর ইচ্ছা দূরীভূত হয়। পাণ্ডবদের বনবাস শেষ হলে শ্রীকৃষ্ণ যখন সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে আসেন, তখন তাঁকে বন্দি করার পরিকল্পনা করেন দুর্যোধন, সঙ্গ দেন শকুনি। এরপর শকুনির পুত্র উলুককে দূতরূপে পাঠানো হয় পাণ্ডবদের কাছে। উদ্দেশ্য, যুদ্ধের প্রাক্কালে পাণ্ডবদের আরও উত্তেজিত করা। শকুনিরও এ বিষয়ে সায় ছিল। উলুক পাণ্ডবদের কাছে দুর্যোধনের কথাগুলো হুবহু উগরে দিলেন। ক্রুদ্ধ হলেন অর্জুন, ভীমসেন। সহদেব বলে উঠলেন, “আজন্ম তোর পিতা আমাদের সঙ্গে এমন নৃশংস আচরণ করেছেন, এবার তার অবসান ঘটবে।“

 

শকুনি যুদ্ধে যে ভীষণ পারদর্শী ছিলেন, তার কোনও নিদর্শন পাওয়া যায় না। শত্রুতা বৃদ্ধির যে খেলায় শকুনি মেতেছিলেন, তাতে করে যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়ার কোনও উপায় ছিল না। সহদেবের হাতেই শকুনি ও তাঁর পুত্রের  মৃত্যু হয়। প্রতিশোধের খেলায় মেতে অন্ধকারের পথে পা বাড়ালে আর ফেরা কঠিন। শকুনি এমন একটি চরিত্র, যাতে ছিল না কোনও ছলনা, কোনও কপটতা। পাশাখেলায় ছলের আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিপক্ষকে জানিয়েই। ধুরন্ধর এই অর্থনীতিবিদ অনায়াসে গান্ধার রাজ্যের রাজা হিসেবে সারা জীবন নির্বিঘ্নে কাটাতে পারতেন। প্রাণপ্রিয় বোনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বঞ্চনায় বেছে নিলেন ধ্বংসের পথ, আত্মাহুতির পথ। যে পথ শুধু যন্ত্রণার, প্রতিশোধের, যে পথে শান্তি নেই, লক্ষ্যপূরণের স্বস্তি আছে।


New
মাদক ব্যবসা ও বিভাজনের রাজনীতির আবর্তে আজকের মণিপুর
ভ্রাতৃঘাতী লড়াইয়ে রাষ্ট্রীয় মদত? বিস্ফোরক রিপোর্ট অসম রাইফেলসের
বিরোধী জোট আছে, রাজনীতি কই?


Other Writings by -অদিতি ভট্টাচার্য্য | 08-08-2020

// Event for pushed the video