4thPillar


দ্য হিল্লোলগঞ্জ ফাইলস

সুদীপ্ত সেনগুপ্ত | 01-08-2022May 11, 2023
দ্য হিল্লোলগঞ্জ ফাইলস

এই ছবিটার নাম হতেই পারত ‘দ্য হিল্লোলগঞ্জ ফাইলস’। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলসের’ প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন এবং অশিক্ষার প্রসারকে অন্যায় বলে যাঁরা মনে করেন তাঁরা ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে পাড়ার মোড়ে মোড়ে এই ছবি দেখানোর ব্যবস্থা করতে পারেন।

 

শৈবাল মিত্রর ‘আ হোলি কন্সপিরেসি’ A Holy Conspiracy স্পষ্ট দ্বিধাহীন রাজনৈতিক বার্তা বহনকারী একটি ছবি। এবং সেই বার্তা দেশের বর্তমান শাসনতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিরোধী। ছবিটি আরও একটু বাস্তবসম্মত হত যদি তাতে রাজনৈতিক দলের নাম ও পতাকা ব্যবহার করা হত। কিন্তু তাতে এই ফিল্ম দেখার সুযোগ মানুষ নিশ্চিতভাবে পেত না, কারণ সেন্সরের ছাড়পত্র পাওয়া অসম্ভব হত এর পক্ষে। আরএসএস-এর নাম বা বিজেপি-র পতাকা ব্যবহার করা না হলেও ছবিতে জয় শ্রীরাম ধ্বনি রয়েছে। রামচন্দ্র সাজা নীলবর্ণ বহুরূপীও রয়েছে। জয় শ্রীরাম ধ্বনির জন্য ছবির একটি ট্রেলারের সেন্সরের ছাড়পত্র আটকে গিয়েছে বলে জানা গেল।

 

খ্রিষ্টান মিশনারি স্কুলের বিধান ডারউইনের বিবর্তনবাদ পড়ানোর আগে বাইবেলের জেনেসিস অধ্যায় পড়াতে হবে। অর্থাৎ আগে বাচ্চারা শিখবে ঈশ্বর রাতারাতি মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন, তারপর শিখবে যে বিবর্তনের ধাপে ধাপে নিম্নতর প্রাণীর থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে মানুষ এসেছে। হিল্লোলগঞ্জের স্কুলের ছাত্ররা সকলেই খ্রিষ্টান, বাড়িতে তারা বাইবেল পড়েই বড় হয়েছে। তাই তরুণ শিক্ষক কুণাল বাস্কে বায়োলজি ক্লাসে জেনেসিস না পড়িয়ে বিবর্তনবাদ পড়ায়। একই সঙ্গে ‘বৈদিক ভারতের বিজ্ঞান’ নামক নতুন বইটি পড়াতে সে অস্বীকার করে কারণ, ‘এই বিষয়ে তার কিছু জানা নেই’। এই বৈদিক ভারতের বিজ্ঞান বাধ্যতামূলকভাবে সকলকে পড়ানোই হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কুশীলবদের ছক। কিন্তু সেই কথা প্রকাশ্যে বললে জনসমর্থন মেলা মুশকিল। তাই গ্রামীণ রাজনীতির ঘোঁট পাকানো হয় কুণালের বিরুদ্ধে। খ্রিষ্টান ধর্মবিশ্বাসে সে আঘাত করেছে, এই অভিযোগে একটি মারপিট গোলমালের ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয় এবং কুণাল গ্রেফতার হয়।

 

এরপর পুরোটাই আদালত কক্ষের নাটক এবং সেই কক্ষটি দেখতে একেবারেই হিন্দি সিনেমার আদালতের মতো নয়, বরং বাস্তবের অতি সাধারণ আদালতের মতো। কুণালের বিপক্ষে এবং মিশনারি স্কুলের পক্ষে সওয়াল করতে আসেন রেভারেন্ড বসন্ত কুমার চ্যাটার্জি (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়)। কুণালের পক্ষের আইনজীবি আন্তন ডিসুজা (নাসিরুদ্দিন শাহ)। দুই মহারথীর দ্বৈরথের ডায়ালগে আবেগ ও যুক্তির অনুপাতের মধ্যে দ্বিতীয়টাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন কাহিনীকার ও চিত্রনাট্যকার শৈবাল মিত্র। ফিলমের দৃশ্যগ্রাহ্য চাকচিক্য এবং আড়ম্বরের দিকটা যদি উপেক্ষা করা যায়, তবে যুক্তির তীক্ষ্ণতায় সৌমিত্র-নাসিরুদ্দিনের দ্বন্দ্ব ‘ক্র্যামার ভার্সাস ক্র্যামার’ বা ‘টু কিল আ মকিংবার্ড’-এর মতো ক্ল্যাসিক কোর্টরুম ড্রামার থেকে কোনও অংশে পিছিয়ে থাকবে না।


দ্য হিল্লোলগঞ্জ ফাইলস

আজকের ভারতের রাজনৈতিক বাস্তবতা ছবিতে হুবহু ফুটিয়ে তুলতে সফল হয়ছেন শৈবাল। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির চতুরস সতর্ক এবং প্রায়শই ছদ্মবেশী পদচারণা যেমন আছে, তেমনই আছে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার ছবি। আদালত কক্ষ থেকে শিস দিতে দিতে পঞ্চায়েত প্রধান বেরিয়ে যেতে পারে, জজের কাছে কোর্টরুমের মধ্যেই শাসকের অমোঘ কোন বার্তা পৌঁছে যায়। কোন সাক্ষীকে ডাকা হবে আর কাকে ডাকা হবে না, কোন অবজেকশন ওভাররুলড হবে আর কোনটা সাসটেইনড – তা একটা নির্দিষ্ট ছক অনুসারেই চলে। বিচারবিভাগের এই শাসকের অনুগামী চলনটাও আজকাল বাস্তবে আমাদের অপিরিচিত আজ?

 

ব্যতিক্রমী সাহসের পরিচয় দিয়েছেন শৈবাল মিত্র ‘আ হোলি কন্সপিরেসি’ করে। আনহোলি কন্সপিরেসি, অশুভ ষড়যন্ত্রের কথা আমরা জানি। সর্বত্রই যখন দেখি শিল্পীরা সরকারের কৃপাপার্থী, শাসকের পায়ে পায়ে ঘুরঘুর করে রসেবশে থাকতে স্বচ্ছন্দ, তখন শৈবালের এই প্রয়াস আরও বেশি করে চোখে পড়ে। শাসকের চোখে চোখ রেখে সত্য উচ্চারণের এই সাহস অভিনন্দনযোগ্য।

 


New
বিদায় পিটি নায়ার: কলকাতার ইতিহাসবেত্তা
এগজিট পোল মিলে গেলেও যে প্রশ্ন উঠবেই
কংগ্রেস সেঞ্চুরি না করলে কে রুখবে বিজেপিকে?


Other Writings by -সুদীপ্ত সেনগুপ্ত | 01-08-2022

// Event for pushed the video