4thPillar


নেতাকে চেনে না, তবু তৃণমূল!

সুদীপ্ত সেনগুপ্ত | 19-04-2022May 10, 2023
নেতাকে চেনে না, তবু তৃণমূল!

বাড়ির সামনে ধুন্ধুমার মারপিট, ইট পাটকেল বৃষ্টি, লোহার রড দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে কারও, রক্তাক্ত যুবক রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে 75 বছরের মানুষটি যখন লড়াই থামানোর চেষ্টা করলেন, তখন যুযুধান দুই পক্ষের কেউই তাঁকে চিনতে পারল না। দুই পক্ষই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের আশ্রিত কর্মী সমর্থক, স্থানীয় বাসিন্দা। যাঁকে তাঁরা চিনতে পারল না তিনিও স্থানীয় বাসিন্দা 60 বছর ধরে। টানা 13 বছর ধরে তৃণমূল কংগ্রেসেরই সাংসদ, লোকসভায় দলের সবচেয়ে দৃশ্যমান নেতা সৌগত রায়। তার আগে পাঁচ পাঁচবার রাজ্য বিধানসভার সদস্য। গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মারা যাওয়ার পর সৌগত নিঃসন্দেহে লেক গার্ডেনসের সেই মুখ যা শিক্ষিত বা নিদেনপক্ষে একটু খবরাখবর রাখা বাঙালির কাছে সবচেয়ে পরিচিত। তাঁকেই চিনতে পারে না বাড়ি ভাঙার বখেরা নিয়ে লড়াই করা স্থানীয় যুবকরা! অথচ ভোটের দিন ‘দলের কাজে’ এদেরই দেখা যায়!

 

সৌগত রায় পরিষ্কার বলেন, “আমিও এদের চিনি না, এরাও আমাকে চেনে না!”

 

শাসক দলের পতাকা নিয়ে গুণ্ডামি করা শ্রেণীটি রাজনীতি থেকে কতটা বিচ্ছিন্ন তা সৌগতর কথা থেকেই স্পষ্ট। খবর না দেখে টিভি সিরিয়াল দেখার নিদান দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়ে থাকেন মাঝে মধ্যেই। বোঝাই যাচ্ছে দলের কর্মী সমর্থকদের অন্তত একটা অংশ কথাটাকে বেশ সিরিয়াসলি নিয়েছে!

 

 

লেক গার্ডেনস ব্যতিক্রম নয়, বরং এটাই এখন প্রায় নিয়ম। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কথায়ও তা ধরা পড়ে, যখন তিনি বলেন, এখন তো সবাই তৃণমূল! সবাই যদি একই দলের হয় তবে লোহার রড দিয়ে মেরে একে অন্যের মাথা ফাটানো কেন?

 

কেনর উত্তরটা খুব সরল। কাজ নেই। হাতে কোনও কাজ নেই বলেই একটা বাড়ি ভাঙাকে কেন্দ্র করে যেটুকু রোজগার হবে তার ভাগাভাগি নিয়ে মাথা ফাটাফাটি। বেহালাতে গত সপ্তাহে প্রায় একই জাতীয় ঘটনা ঘটেছে। সেখানেও শাসক দলের দুই পক্ষের তাণ্ডবে এলাকার সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সেখানেও বিবাদের কেন্দ্রে রয়েছে একটি মেলার, অর্থাৎ সেটি থেকে তোলা আদায়ের অধিকার। এর পিছনে থেকে একটু বড় মাতব্বররা, সামনে কর্মহীন এবং ভবিষ্যৎহীন বাংলার যুব সমাজের একটা অংশ।

 

সামনে যারা থাকে তারা কেন থাকে? হিসাব করে দেখলে দেখা যায় এই ধরনের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হয় যারা, মানে যাদের মাথা ফাটে, যারা গ্রেফতার হয়, মাস কতক জেল খাটে ইত্যাদি তাদের এই অ্যাকশন থেকে আয় হয় কয়েকশো টাকা মাত্র, বড় জোর এক হাজার। এখন, এই গুণ্ডামির কাজটা তো সরকারি চাকরি নয় যে ছুটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড ইত্যাদি আছে! এটা দিন মজুরির মতো, যেদিন কাজ, সেদিন রোজগার! মাসে 15 দিন কাজ থাকলে সেই মাসে রোজগার বড় জোর 15 হাজার। এই টাকার জন্য এতখানি ঝুঁকির কাজ, যাতে কিনা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে, তা করার লোক কোথায় পাওয়া যাবে? উত্তরটা জলবৎ তরল: সেখানেই পাওয়া যাবে যেখানে একেবারেই অন্য কোনও কাজ নেই। বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির সঙ্গে যুক্ত সাংসদদের, যাঁদের সারা দেশের চিত্র সম্বন্ধে মোটামুটি সম্যক ধারণা আছে, তাঁরা কী বলেন? বলেন, “না। তামিলনাড়ু, গুজরাত, পঞ্জাব তো বটেই ওড়িশা বা তেলেঙ্গানাতেও এখন এত কম টাকার জন্য এই ধরনের কাজ করার লোক পাওয়া যাবে না।”

 

সামনেই বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন। শুধু বড় বড় কথা না বলে, আমরা কি বাংলার যৌবনের জন্য কাজ তৈরির কথা আন্তরিকভাবে ভাবতে পারি না?


New
বিদায় পিটি নায়ার: কলকাতার ইতিহাসবেত্তা
এগজিট পোল মিলে গেলেও যে প্রশ্ন উঠবেই
কংগ্রেস সেঞ্চুরি না করলে কে রুখবে বিজেপিকে?


Other Writings by -সুদীপ্ত সেনগুপ্ত | 19-04-2022

// Event for pushed the video