নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য দেওয়ার জন্যে যে সময় চেয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া সে সমস্ত তথ্যই সরকারের আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে স্টেট ব্যাঙ্ক চাইলে একদিনের মধ্যেই সব তথ্য দিতে পারত। কারণ কোন বন্ড কে কিনেছে এবং কে অর্থাৎ কোন দল তা ভাঙিয়েছে তার সমস্ত রেকর্ডই স্টেট ব্যাঙ্কের কাছে ইতিমধ্যেই আছে। সরকারকেও সেই সমস্ত তথ্য স্টেট ব্যাঙ্ক দিয়েছে।
Reporters’ Collective এর তদন্তমূলক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
Association for Democratic Reforms (ADR) ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে স্টেট ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেছে।
ইলেক্টোরাল বন্ডের ক্রেতা ও সুবিধাপ্রাপ্তদের সম্পর্কে তথ্য জানাতে সুপ্রিম কোর্টের কাছে 30শে জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্পটি বাতিল করার পর, বন্ডের ক্রেতা ও অর্থপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দলগুলির নাম প্রকাশের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তার প্রেক্ষিতেই কয়েকমাস সময় চেয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক।
ইলেক্টোরাল বন্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্রান্সপারেন্সি অ্যাক্টিভিস্ট প্রাক্তন নৌ সেনা অফিসার কমোডর লোকেশ বাত্রা তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে দেখিয়েছেন, 2019 - 2020 সালে SBI অনেক কম সময়েই সরকারকে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য দিয়েছে। নথিতে প্রমান রয়েছে, বন্ড বিক্রির 48 ঘন্টার মধ্যে গোটা দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা অর্থ মন্ত্রকে পাঠিয়েছে SBI।
প্রতিটি বন্ডের বিক্রি ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রাপ্ত অর্থের হিসাব সেখানে দেখানো হয়েছে। প্রতিটি বন্ড বিক্রির সময় একটি সিরিয়াল নম্বর ব্যবহার করেছে ব্যাঙ্ক। 2018 সালে বন্ড চালু হওয়ার সময় থেকেই এভাবেই বন্ডগুলিকে চিহ্নিত করেছে SBI ।
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এই বন্ড সংক্রান্ত বিচারের প্রায় 17 দিন পরে 4ঠা মার্চ সুপ্রিম কোর্টের কাছে যে 30 শে জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে, যখন সুপ্রিম কোর্ট স্টেট ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দিয়েছিল 6ই মার্চের মধ্যে সব তথ্য জমা দেওয়ার। খুব স্বাভাবিক ভাবেই SBI এর এই সময় চাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ব্যাঙ্কের বক্তব্য, বন্ড বিক্রি সংক্রান্ত তথ্য সিল করা খামে গোটা দেশের বিভিন্ন শাখা থেকে মুম্বাইয়ের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। গোপনীয়তা বজায় রাখতে একই পদ্ধতি অনুসরণ করে আলাদা ভাবে পাঠানো হয়েছে অর্থপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দলের নাম। এখন 2019 সাল থেকে 22,217টি বন্ড বিক্রি ও অর্থপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দলের হিসাব মেলাতে সময় প্রয়োজন।
যদিও 2017 সালে অর্থমন্ত্রক জানিয়েছিল, ব্যাঙ্ক খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বন্ডের ক্রেতা ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারে। কারন KYC র মাধ্যমে ব্যাঙ্ক বন্ড ক্রেতার সম্পর্কে তথ্য রেখেছে এবং গোপন সিরিয়াল নম্বরে বন্ডগুলিকে চিহ্নিত করেছে। সুপ্রিম কোর্টে আত্মপক্ষ সমর্থনে সরকারের বক্তব্য ছিল, প্রতিটি বন্ডের ক্রেতা ও গ্রহীতার তালিকা ব্যাঙ্কের কাছে আছে এবং প্রয়োজনে তা উদ্ধার সম্ভব।
বন্ড জারি করা থেকে জমা দেওয়া পর্যন্ত হবে কিছু তদারকি করতো TBU। এরাই বন্ড সংক্রান্ত তথ্য দ্রুততার সঙ্গে অর্থ মন্ত্রকে পাঠাতো। আইন অনুযায়ী একটি বন্ডের মেয়াদ 15 দিন হলেও অর্থমন্ত্রকের পরামর্শে মেয়াদ উত্তীর্ণ 10টি বন্ড নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক, এমন প্রমাণও রয়েছে। যার প্রত্যেকটির মূল্য 1কোটি টাকা।
কাজেই ইলেক্টোরাল বন্ডের তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে স্টেট ব্যাঙ্কের গড়িমসি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। SBI এর বিরুদ্ধে অভিযোগ সরকারকে সুবিধা করে দিতেই তারা সুপ্রিম কোর্টের কাছে বারতি সময় চাইছে। কারণ 30 শে জুনের মধ্যে লোকসভা নির্বাচন পর্ব শেষ হয়ে যাবে এবং কোন দল কোন সংস্থার কাছ থেকে কত টাকা পেয়েছে তা নিয়ে আর রাজনৈতিক প্রচারের সু্যোগ থাকবে না। স্টেট ব্যাঙ্ক আদতে স্বাধীন সংস্থা নাকি সরকারেরই বর্ধিত অংশ সে প্রশ্নও উঠে গেছে।
সোফিয়া ইয়াসমিন, 4thPillarWeThePeople