পুরাকালে এক সাংবাদিক ছিলেন অর্জুন নামে। পুরাকাল বলতে বছর পঁচিশেক আগে। ওটাই এখন পুরাকাল, কারণ পাঁচ-ছয় বছর আগেকার ঘটনাই এখন ইতিহাসের পাতায় স্থান পায় – তা সে সিঙ্গুরই হোক বা অযোধ্যা। আগে মানুষ বোকা ছিল, তখন ধরা হত অন্তত ত্রিশ বছর অতিক্রান্ত না হলে কোনও ঘটনার সার্বিক মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। যাই হোক, এখন মানুষ আর বোকা নেই। এখন রোজই ইতিহাস রচিত হয়।
সেই সাংবাদিক প্রবর একবার নিজের জন্মদিনে সম্পাদক হিসাবে নিজের কাগজে উত্তর সম্পাদকীয় নিবন্ধে লিখেছিলেন, আজ আমার জন্মদিনে আপনারা শুভেচ্ছা জানান। এই সাংবাদিক নিজের নামের আগে নিজে ডঃ (ডক্টরেট) লিখতেন, হাতে লিখলেও, যেমন কেউ প্রস্তর যুগে লিখতেন শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তেমনই একখানা তেনার স্বাক্ষরিত চিঠি নিয়ে আর একজন সাংবাদিক একবার গিয়েছিলেন অর্থনীতিবিদ বামপন্থী চিন্তাবিদ, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক মিত্রর কাছে। দ্বিতীয় সাংবাদিকের কাছে এর পরের ঘটনাটা শোনা: অশোকবাবু খাম খুলে চিঠিটি বার করলেন, বিষয়বস্তু পড়ার আগেই দেখলেন ডঃ সাংবাদিকের স্বহস্তে লিখিত ডঃ-আদ্য নাম, এবং নাক সিঁটকিয়ে বললেন, ‘এঃ অশিক্ষিত, নিজেই নিজের ডিগ্রি ঘোষণা করছে!’
ঘটনাটা মনে পড়ল প্রকাশনা সংস্থা ব্লুমসবেরির দিল্লির ফেব্রুয়ারি মাসের দাঙ্গা নিয় একটি বই প্রকাশ শেষ মুহূর্তে বাতিল করা প্রসঙ্গে। Delhi Riots 2020: The Untold Story বইটির তিনজন লেখিকার মধ্যে দু’জন কলেজের অধ্যাপক, একজন আইনজীবী, সকলেই মহিলা। বইটির বক্তব্যের সঙ্গে মার্চ মাসে, ঘটনার এক মাসের মধ্যেই, দিল্লি দাঙ্গার একটি তথাকথিত তথ্য অনুসন্ধানী দলের রিপোর্টের প্রচুর মিল রয়েছে, তিনজন লেখিকাই ছিলেন Group of Intellectuals and Academicians নামে ওই তথ্য অনুসন্ধানী কমিটির সদস্য। এঁদের সম্পর্কে www.4thPillars.com –এ বিস্তারিত আগেই লিখেছেন সোমনাথ গুহ।
মোদ্দা বক্তব্য ছিল, দিল্লির দাঙ্গার মূলে রয়েছে ‘আর্বান নকশাল এবং জিহাদিদের’ কর্মকাণ্ড। ব্লুমসবেরি প্রকাশনা বাতিল করে বলেছে, তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে, কিন্তু একই সঙ্গে সমাজের প্রতি তাদের এটা গভীর দায়িত্ববোধও রয়েছে। বই বাতিলের সমূহ উপলক্ষ্য হল সেই বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রকে দিয়ে বইটির প্রকাশ (তাও প্রকাশকের অনুমতি ছাড়াই), যার উস্কানিমূলক মন্তব্য থেকে হিংসার সূত্রপাত বলে অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের মত।
নীতিশিক্ষা: নিজেকে যদি কেউ ইন্টেলেকচুয়াল এবং অ্যাকাডেমিশিয়ান বলে ঘোষণা করে বাজারে নামেন, তবে তাঁর থেকে সাবধান থাকাই ভাল!