ভারতে করোনা সংক্রান্ত সমস্যার সূচনাতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত, লকডাউন। এই সিদ্ধান্তে করোনাকে যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি সেটা প্রমাণিত। কিন্তু দেশের অর্থনীতি দৃশ্যতই বিপর্যস্ত। দেশের অগণিত মানুষ চরম সংকটের আবর্তে দিশাহারা। গোটা দেশ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। সরকার প্রদত্ত খাদ্যশস্যে কোনওমতে ক্ষুন্নিবৃত্তি সম্ভব হলেও জীবনের অন্যান্য অত্যাবশ্যক সামগ্রী সংগ্রহ করা তাদের কাছে সাধ্যাতীত। কয়েক কোটি মানুষের সামান্য আয়ের উৎসও গত কয়েক মাসে বন্ধ হয়ে গেছে।
এই সংকটে যে আশঙ্কা সমানে ঘনীভূত হচ্ছে তা হল গ্রামে বা শহরে দরিদ্রতম মানুষ প্রথমে হাঁস, মুরগি, সাইকেল ইত্যাদি বিক্রি করবে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে। তারপর মানুষ তার শেষ সম্বল বাস্তুভিটে অথবা সামান্য চাষের জমিও বিক্রয় করতে শুরু করবে অভাবের তাড়নায়। ইতিমধ্যে গ্রামে ও শহরে এক শ্রেণীর মানুষ রাজনৈতিক এবং আর্থিক ক্ষমতায় বলিয়ান হয়ে উঠেছে। তারা গরিব মানুষকে সাহায্যের ছলে সমস্ত জমি স্বল্প মূল্যে কিনে নেবে। এই আশঙ্কা এখন আর কষ্টকল্পনা নয়। গরিব মানুষটির হাতে অর্থের জোগান নিশ্চিত করা আবশ্যিক। সরকার এ বিষয়ে পুরোপুরি উদাসীন। সমস্ত অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ সরকার অগ্রাহ্য করছে। এমতাবস্থায় গরিব মানুষের শেষ সম্বলটুকু রক্ষা করার জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ আশু প্রয়োজন।
পশ্চিমবাংলায় গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে এই আইন প্রণীত হয়েছিল। কাশ্মীরের 90-এর দশকে বিতাড়িত হওয়া হিন্দু পণ্ডিতদের ছেড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি রক্ষায় এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে যে আইন প্রণীত হয় তার নাম ‘The West Bengal restoration of alienated land act, 1973’। সেই আইনে বলা হয়েছিল 1969 সালের পর আর্থিক অনটনে কোনও ব্যক্তি, যার জমির পরিমাপ 2 হেক্টরের কম তিনি যদি নিজের এবং পরিবারের ভরণ পোষণের তাগিদে অথবা নিজের খরচ চালানোর প্রয়োজনে তার সমস্ত জমি অথবা জমির অংশ বিক্রয় করেন, সেক্ষেত্রে তিনি 10 বছরের সময়কালের মধ্যে হস্তান্তরিত জমি পুনরুদ্ধারের জন্য আইনে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে পারবেন। উভয়পক্ষ নোটিস দেওয়ার পর যথাযথ শুনানির সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট অফিসার জমি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে বিক্রেতা দাম হিসেবে প্রাপ্ত টাকা সুদ সহ ফেরত দেবেন।
এই আইন 1980 সালের পর অকার্যকর হয়ে পড়ে। যেহেতু এই আইন প্রযোজ্য ছিল 1967 থেকে 1980 সালের মধ্যে বিক্রয় হওয়া জমির ক্ষেত্রে। এই আইনের 4 নম্বর ধারায় সামান্য পরিবর্তন করলেই এই আইন আবার কার্যকর হয়ে উঠবে। প্রয়োজনে সময়োপযোগী আরও কিছু পরিমার্জন করা যেতে পারে। সমস্ত রাজনৈতিক দলের উচিত সরকারের উপর এই বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করা। অন্যথায় বিরোধী বিধায়কেরা আইনসভায় এই বিষয়ে বিল উত্থাপন করতে পারেন। সরকার সেক্ষেত্রে বিলের বিরোধিতা করার সাহস পাবে বলে মনে হয় না।