সেদিন জনৈক ডেকরেটার্স ব্যবসায়ী রাস্তায় তাঁর সহকারীকে বলছিলেন, 15 আগস্ট কিছু হল? উল্টোদিক থেকে উত্তর এল, দু'টো তৃণমূল, একটা বিজেপি। মাথা চুলকে কিছুক্ষণ ভাবলাম, লোকটা বলতে চাইলটা কী! পরে বুঝলাম, তৃণমূলের দু'টো অনুষ্ঠান আর বিজেপির একটা অনুষ্ঠানে ম্যারাপ বাঁধার বরাত পেয়েছেন ভদ্রলোক। অতএব স্বাধীনতা দিবসের ‘অর্থ’ বলতে তাঁর কাছে এই মাগগিগন্ডার বাজারে কিছু নগদ টাকা।
পাঁচ বছরে একবার অবশ্য নাগরিকদের একটু ‘স্বাধীন’ ‘স্বাধীন’ বোধ হয়। সেই বিশেষ দিনটা যখন আসে, যেদিন বাড়ির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রের লোক বলে, ‘হেঁহেঁ, আমাদের একটু দেখবেন কিন্তু’।
বাকি সারা বছর তো নাগরিক রাষ্ট্রকে মান্যগণ্য করে, স্বাধীনতাটা তাদের হাত চুঁইয়েই নীচের তলায় পৌঁছয় কিনা! রাষ্ট্রের ইচ্ছায় নাগরিক রাত আটটায় টিভিতে নজর রাখে। দেশের শাসক তাদের ‘প্রিয়’ দেশবাসীকে না জানিয়ে কোনও কাজ করেন না যে। দিনের শেষে ক্লান্ত নাগরিক খুশি মনে ভাবে, এটাই কি তবে সেই জনগণের স্বাধীনতা? ওই যে, সে তার ছেলের পড়ার বইয়ের প্রথম পাতায় ছাপার অক্ষরে দেখেছে, ‘আমরা ভারতের জনগণ...’। অতশত ভাবতে বসলে অবশ্য খুব মুশকিল। সত্যি সত্যি নাগরিক খুব বেশি ভাবুক, রাষ্ট্র তা চায়ও না। রাষ্ট্রই তো তার হয়ে ভেবে দিচ্ছে! নাগরিক জানে যা হচ্ছে, তা ভালর জন্যই হচ্ছে। সব দলই চুরি আর দুর্নীতি করে— আত্মবিলাপ করে রাতে ঘুমোতে যায় নাগরিক। রাষ্ট্র নিয়ম করে নাগরিকের কানে (অধুনা হোয়াটসঅ্যাপ) পৌঁছে দেয় দেশপ্রেমের কথা, দেশের জাতীয়তাবাদের শত্রু কোন সহনাগরিকরা তারও বিবরণ থাকে সেখানে। সত্যি, কিছু সহ-নাগরিক বড্ড কথা বলে, রাষ্ট্রের সব কাজে প্রশ্ন তোলে। এই আগ বাড়িয়ে ‘স্বাধীনতা’ ফলাতে যাওয়াটা নিপাট শান্ত নাগরিকদের না-পসন্দ। স্বাধীনতা দিবসের সকালে পাড়ার মোড় থেকে ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগো’ শুনে ধড়মড় করে উঠে পড়ে নাগরিক। ইশ! আজ তো সেই খুশির দিন, গৌরবের দিন, ছুটির দিনও বটে। নাগরিক ভুলে যায় সব। স্বাধীনতার এত বছর পরেও প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির তালিকাটা অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। শাসক নাগরিকের এই দুর্বলতাটা জানে। নাগরিকের সন্তান— যে আরও বছর পাঁচেক পর দেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক হবে— সে স্কুলে পতাকা তুলে বাড়ি ফেরে একটা কেক আর চকোলেট নিয়ে। দায়িত্বশীল নাগরিককে 74 বছর বয়সী স্বাধীন রাষ্ট্রের উপহার।