4thPillar


শ্যাম না কূল, কোনটা রাখবেন মোদী?

শিখা মুখার্জি | 06-06-2022June 10, 2023
শ্যাম না কূল, কোনটা রাখবেন মোদী?

ভারত সরকারের কাছে প্রকাশ্য  ক্ষমাপ্রার্থনার দাবি তুলেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার এবং কুয়েত, ইরান এবং অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশনএর পাশাপাশি সৌদি আরব ওমানের মতো দেশগুলি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা আশা করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে

 

উপযুক্ত ব্যবস্থা বলতে এই দেশের সরকারগুলি অভিযুক্তদের শাস্তি প্রত্যাশা করছে। তারা শাস্তির দাবি জানাচ্ছে, কারণ শাসক দলের মুখপাত্রদের ইসলাম বিদ্বেষী’ মন্তব্যের জন্য মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং এই ধরনের মন্তব্য একের পর এক হিংসা এবং বিদ্বেষের জন্ম দিচ্ছে।' কাতারের সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ""ভারত সরকারের কাছে এই ধরনের মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং তৎক্ষণাৎ নিন্দা জানানো প্রত্যাশা করা হচ্ছে।''

 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরহিরন্ময় নীরবতা ভারতবর্ষের ক্ষতি করছে এবং বিজেপি জমানার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। শাসকদলবিজেপির অভিযুক্তদের ইসলামের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক এবং সুনির্দিষ্ট আক্রমণের প্রেক্ষিতে অনিচ্ছাকৃত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক বিপর্যয়, যা  কাতার, কুয়েত ইরান কিংবা অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন এই বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপের দাবিতে অনড়। এই দেশগুলি নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে উপযুক্ত ব্যবস্থার প্রত্যাশা এবং দাবি রাখছে, কারণ মোদী হলেন সংখ্যাগরিষ্ঠবিজেপি সরকারের প্রধান

 

বিজেপি শাসিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর নীরবতা এটাই প্রমাণ করে যে, এই কাজগুলির পিছনে একটি প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে। তাঁর এই নীরবতাকে বিদ্বেষ প্রচারকারী কন্ঠস্বরগুলির প্রতি সমর্থন, বৈধতা এবং অনুমতিদান হিসাবে দেখছে কাতার, কুয়েত, ইরান এবং অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন। যার অর্থ, মধ্যপ্রাচ্যের ওই দেশগুলিতে, বিশেষত ইরান এবং ইসসামিক দুনিয়ার বিভিন্ন অংশে যে হাজার হাজার ভারতীয় কর্মসূত্রে থাকেন তাদেরও ওপরও মোদীর এই নীরবতার অভিঘাত এসে পড়বে

 

এই ঘটনার অভিঘাত ইতিমধ্যেই বোঝা গেছে। ইসলামের ধর্মগুরু মহম্মদের অপমানে উপসাগরীয় দেশগুলির বাজারে ভারতীয় পণ্যকে বয়কট করা হয়েছে। এই বয়কট অনেকটা রুশ আগ্রাসন এবং রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের বিরুদ্ধে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং ন্যাটো কর্তৃক রাশিয়ার ওপর স্যাংসনের সঙ্গে তুলনীয়। মধ্যপ্রাচ্যে ভারতের কূটনৈতিক কার্যালয় এবং কূটনীতিকদের বাড়িগুলিকেও সামাজিক ভাবে বয়কট করা হচ্ছে। স্থানীয় কর্মচারীরা এই কার্যালয়গুলিতে কাজে যোগ দিচ্ছেন না

 

পরিণতি কী হতে পারে তার আগাম বার্তা হিসাবে কাতার সরকার শেষ মুহূর্তে তাদের তরফে আমিরশাহির ডেপুটি আমির আবদুল্লা বিন আহমদ আল থানির তরফে ভারতের উপরাষ্ট্রপতিবেঙ্কাইয়ানায়ডুর সম্মানে দেওয়া নৈশভোজের অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। এই নৈশভোজ অনুষ্ঠান বাতিল মোদী সরকারের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে। বার্তা এটাই যে, আরব দেশগুলির প্রত্যাশিত দাবিগুলো মেটানো হোক নতুবা এর অভিঘাত সামলানোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হোক

 

এই অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক কখনওই এত খারাপ অবস্থায় যায়নি। বিজেপি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে নূপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দলের পদমর্যাদার মধ্যেই বিষয়টি সীমিত রেখে ঘটনাটিকে লঘু করার চেষ্টা হলেও কার্যত এটি ব্যুমেরাং হয়েছে। কাতার, কুয়েত এবং ইরান এই বিষয়ে তাদের বক্তব্য স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে। এদের মধ্য একজন বিজেপির অনুমোদিত মুখপাত্র, অন্যজনদিল্লি মিডিয়া সেলের আধিকারিক। তাই গোটা বিশ্বের সামনে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে যে দাবি করা হয় ওই ব্যক্তিরা বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি’, তা মানতে নারাজ ওই দেশের সরকারগুলি। নূপুর শর্মা সাসপেন্ড হওয়ার আগে দলের জাতীয় মুখপাত্র ছিলেন। 2015 সালে তিনি বিজেপির তরফে আম আদমি পার্টির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে প্রার্থীও হয়েছিলেন। নবীন জিন্দল বহিষ্কৃত হওয়ার আগে বিজেপিরদিল্লি মিডিয়া সেল ইউনিটের প্রধান ছিলেন

 

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদীর আন্তর্জাতিক মহল এতদিন দড়ি আলগা রেখেছিল। এখন তাঁর কাছে দু'টি বিকল্প আছে। হয় তাঁকে নিজের দলের বিরুদ্ধে গিয়ে ক্রমবর্ধমান মুসলিম বিরোধী বক্তব্যগুলোয় রাশ টানতে হবে, বিশেষত যে বক্তব্যগুলিতে সরাসরি গণহত্যার ডাক দেওয়া হচ্ছে হিন্দু যুবকদের অস্ত্র তুলে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। নয়তো তিনি এখন যা করে চলেছেন, সেটাই তাঁকে করে যেতে হবে। অর্থাৎ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণাপ্রচারের পরেও তিনি নীরব থাকবেন এবং নীরব থেকে তাতে প্রশ্রয় জোগাবেন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যারমতো ঘটনাগুলি উগ্র জাতীয়তাবাদের নামে ঘটতে থাকবে। মোদীর পছন্দটি হল সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুত্বের কর্মসূচিকে সমর্থন করা। কিন্তু এটি করতে গিয়ে তিনি যে বুলডোজার রাজনীতিকে উৎসাহজোগাচ্ছেন এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে, তার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের নজর এখন তাঁর দিকে। গত সপ্তাহেই মার্কিন বিদেশমন্ত্রীঅ্যান্টনিব্লিঙ্কেন ভারতে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফেও প্রায় একই মন্তব্য করা হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন আসলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল

 

নরেন্দ্র মোদীকে এখন করে দেখাতে হবে। তিনি যদি আন্তজার্তিক মহলকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে এই দেশের ঐতিহ্য, সম্মান ও সভ্যতাগত ঐতিহ্য এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যর যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য', তা ধ্বংস হবে। সংবিধানের সকল ধর্মকে সমান ভাবে সম্মান করার যে মূল্যবোধ তা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। অতএব মোদীকে এখনই যা করার করতে হবে। আন্তর্জাতিক মহল তাঁকে আর দ্বিধার সুবিধা এবং অতিরিক্ত সময় দিতে রাজি নয়


New
বিদায় পিটি নায়ার: কলকাতার ইতিহাসবেত্তা
এগজিট পোল মিলে গেলেও যে প্রশ্ন উঠবেই
কংগ্রেস সেঞ্চুরি না করলে কে রুখবে বিজেপিকে?


Other Writings by -শিখা মুখার্জি | 06-06-2022

// Event for pushed the video