গুজরাতের খ্যাতনামা কবি পারুল কক্করকে সবাই জানে রোমান্টিক অরাজনৈতিক কবিতার জন্যে। পঞ্চাশ পেরোনো মহিলাটি হঠাৎ এমন একটা কাজ করেছেন যার জন্যে আইটি সেলের ভক্তবৃন্দ তাঁকে কুৎসিত ভাষায় ট্রোল করেছে, অগুনতি। উনি গঙ্গায় ভেসে যাওয়া শবের ঘটনায় বিচলিত হয়ে লিখে ফেলেছেন একটি রাজনৈতিক কবিতা তাঁর ফেসবুকে। হাজার গালাগাল সত্ত্বেও উনি অবিচলিত, ফেসবুক থেকে কবিতাটি মোছেননি। এদিকে দেখতে দেখতে কবিতাটি ছুঁয়েছে অনেককে। স্বতঃপ্রণোদিত অনুবাদ হয়েছে ইংরেজি, হিন্দি, পাঞ্জাবি, মারাঠি, বাংলা ও আরও অন্যান্য ভাষাতেও। আমাদের বাংলা অনুবাদে চেষ্টা করা হয়েছে মূল কবিতার চিত্রকল্পটি যথাসাধ্য অক্ষুণ্ণ রাখার, তাতে কাব্যগুণে কিঞ্চিৎ হানি স্বীকার করেও।
শববাহিনী গঙ্গা (বাংলা)
আহ্লাদে নাচে মৃতদেহগুলো— আমরা সবাই চাঙ্গা,
হে প্রভু, তোমার রামরাজত্বে শববাহিনী গঙ্গা।
জ্বলে জ্বলে শেষ হয়েছে শ্মশান, খালি আজ কাঠগোলা,
হা-ক্লান্ত শববাহকের দল, অসহায় চোখ খোলা।
দ্বারে দ্বারে টোকা দেয় যমদূত, মৃত্যুর সাথে পঙ্গা?
হে প্রভু, তোমার রাজত্বে আজ শববাহিনী গঙ্গা।
রোজ ধূ-ধূ করে চিতা জ্বলে, ওরা একটু জিরোতে পায় না,
রোজ চুড়ি ভাঙে চাপড়ায় বুক, কে কাকে দেখাবে আয়না?
আগুন জ্বলছে, বাঁশরী বাজাও! সাবাশ বিল্লা-রঙ্গা,
হে প্রভু, তোমার রাজত্বে আজ শববাহিনী গঙ্গা।।
দিব্যবস্ত্রে মানিয়েছে প্রভু, ঠিকরে বেরোয় জ্যোতি,
হায় যদি লোকে জানত- তুমি তো পাথর, নও কো মোতি।
আছে কি সাহস? বল তোরা হেঁকে- আমাদের রাজা নাঙ্গা!
হে প্রভু, তোমার রাজত্বে আজ শববাহিনী গঙ্গা।।
শববাহিনী গঙ্গা (হিন্দি)
একসাথ সব মুর্দে বোলে- সবকুছ চাঙ্গা চাঙ্গা,
সাহিব, তুমহারে রামরাজ মেঁ শববাহিনী গঙ্গা।
খতম হুয়ে শ্মশান তুমহারে, খতম কাষ্ঠ কী বোরি,
থকে হমারে কন্ধা সারে আঁখে রহ গয়ী কোরি।
দ্বর দ্বর জাকর যমদুত খেলে মৌত ক্যা নাচ বেঢঙ্গা,
সাহিব তুমহারে রামরাজ মেঁ শববাহিনী গঙ্গা।।
নিত লগাতার জ্বলতী চিতায়েঁ, রাহত মাঙ্গে পলভর,
নিত লগাতার টুটতি চুড়িয়াঁ কুটতী ছাতি ঘর ঘর।
দেখ লফটোঁ কো ফিডল বজাতে বাহ রে বিল্লা-রঙ্গা,
সাহিব তুমহারে রামরাজ মেঁ শববাহিনী গঙ্গা।।
সাহিব তুমহারী দিব্যবস্ত্র হ্যায়, দেদীপ্য তুমহারী জ্যোতি,
কাশ আসলিয়ত লোগ সমঝতে— হো তুম পত্থর ন মোতী।
হ্যায় হিম্মত তোঁ আকে বোলো— মেরা সাহাব নাংগা,
সাহিব তুমহারে রামরাজ মেঁ শববাহিনী গঙ্গা।।
(বাংলা অনুবাদ: রঞ্জন রায়)