4thPillar


বিপুল চক্রবর্তী'র কবিতা

4thPillars ব্যুরো | 05-02-2020June 8, 2023
বিপুল চক্রবর্তী'র কবিতা

বিপুল চক্রবর্তী

 

সত্তরের গণআন্দোলনের ফসল বিপুল চক্রবর্তীর কবিতা ও গান। নকশালবাড়ি ও বন্দীমুক্তি আন্দোলন এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল তাঁর রচনায়। পরবর্তী সময় নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে এগিয়েছেন তিনি।  বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে তাঁর লেখা। গ্রন্থসংখ্যা ১০। পেয়েছেন কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্মান।

কবিতা

আকাশপারে

একটি গাছ সটান খাড়া কিম্বা ঈষৎ বাঁকা
কিছুই এসে যায় না তাতে তার
মাথাটি তার আলোর দিকে আকাশপারে রাখা
সইতে জানে অসীম অন্ধকার

শির-দাঁড়াটি যত্ন করে ধারণ করি আমরা
বেচতে হয় যে চড়া দামে, সঙ্গে পুরু চামড়া

একটি গাছের নগ্ন হতে হয় যে কতবার
কিছুই এসে যায় না তার তাতে 
পোড়ারমুখী সোনি সোরির মতন বারেবার
ভরে ওঠে নতুন ডালপালাতে

পোশাক-আশাক, প্রসাধনী আর যা কিছু সজ্জা
সে সব সবই তোমার আমার, লজ্জা শুধু লজ্জা

গৌরী লঙ্কেশের জন্য

আমার মুখে তোমার মুখ আঁকি
বেঁচে থাকার লজ্জাটুকু ঢাকি

এই যে বাঁচা - এই যে প্রত্যহের
জীবন্মৃত, ভয়ের আর ক্ষয়ের

এর চে' ভালো, তোমার মতো হেসে
যুদ্ধ চাই জীবন ভালোবেসে

আমার মুখে আঁকি তোমার মুখ 
দেখুক খুনি, দেখুক বন্দুক

অন্য ধর্মযুদ্ধ 

ক.
তারা সব সম্রাটের লোক।
বিষে ভরা পাত্র, হেমলক 
তারাই দিয়েছে তুলে মুখে
প্রগতির। অসুখে অসুখে 
তারপর কী যে কষ্টে-ক্লেশে
দিন যায়! যুদ্ধ দেশে দেশে..

মানুষের ভালোবাসা, গান
বারে বারে ভেঙে খানখান। 
মুসোলিনি তোজো হিটলার 
পেরিয়ে এ পৃথিবী আবার
ফিরে পায় প্রাচীন সে গ্রীস!
নীল হয়ে আছে সক্রেটিস..

খ.
যেন নগ্ন যেন ক্রূর আরও 
এ সময়। পেয়েছে সম্ভারও
প্রযুক্তির, বিজ্ঞানের নামে।
এ দেশেও শহরে ও গ্রামে 
আধুনিক অস্ত্র হাতে হাতে 
সম্রাটের স্তাবকেরা মাতে..

বিষে নীল তুমি সক্রেটিস!
আছ তবু, আছ অহর্নিশ 
হৃদয়ের প্রেমে, ধর্মবোধে
অন্তরের আপন পারদে
আলোকিত পৃথিবীর পথে 
মানুষের মুক্তির শপথে.. 


শেষ দেখে যেতে চাই 

যতদূর চোখ যায় 
ঘাতকের তরবারি
ছায়াহীন পথঘাট 
ছায়াহীন ঘরবাড়ি

কে তুমি কবিতা লেখো
গান বাঁধো কে তুমি
হাঁক পাড়ে সিধু-কানু -
হাঁক পাড়ে তিতুমীর 

পথ ডাকে, এসো তুমি 
কথা লেখো এ পথের
এসো তুমি, সুর দাও - 
গান বাঁধো শপথের

কথা লিখি, গান গাই
আজ পথনাটকের
শেষ দেখে যেতে চাই 
শেষ এই ঘাতকের 
 


বিপুল চক্রবর্তী'র কবিতা


কেন লিখি
 
আমার সমস্ত কান্না চলে যায় সৌন্দর্যের দিকে। কেন কবিতা লিখি, এমন একটি ভাবনা নিয়ে বসা মাত্রই আমারই লেখা এই ছত্রটির কথা মনে পড়ল। ছত্রটি আমার যে-লেখার অন্তর্গত সে-লেখাটি প্রকাশিত হয় যখন, মনে আছে, বন্ধুরা বেশ অনেকে আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, কীভাবে এক রক্তার্দ্র স্বদেশে দাঁড়িয়ে আমি এ কথা লিখতে পারি। তাদের সবিনয়ে আমি বলেছিলাম ঐ লেখাটিরই আরও পরের একটি ছত্র, আমার সমস্ত কান্না চলে যাক সৌন্দর্যের দিকে। তার বেশি আমি আর কিছু বলতে পারিনি। সময়টা ছিল সত্তরের দশক, যখন লেখালিখি শুরু করি। মনে পড়ে, সব মানুষের জন্য একটি সুসহ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতাম আমরা। এক অনির্বাণ আদর্শবাদের উন্মেষ হয়েছিল সেই বয়সে। আজ চারপাশের পৃথিবী অন্য এক পৃথিবী যেন। তবু কেন যে আজও আমার কলম লিখতে ভালোবাসে, তুমি যতই জ্বালাও দাবদাহে / আমার শাখা সবুজ গানই গাহে। আর কী লিখতে পারে আমার কলম -- আর কী লিখতে পারি আমি! 


New
বিদায় পিটি নায়ার: কলকাতার ইতিহাসবেত্তা
এগজিট পোল মিলে গেলেও যে প্রশ্ন উঠবেই
কংগ্রেস সেঞ্চুরি না করলে কে রুখবে বিজেপিকে?


Other Writings by -4thPillars ব্যুরো | 05-02-2020

// Event for pushed the video