জয়দীপ রাউত
অন্তর্মুখী সোজা পথ ধরে অজানা গন্তব্যের দিকে যা যা পাওয়ার, কুড়িয়ে নিয়ে হেঁটে চলে জয়দীপের লেখা। নয়ের দশক থেকে লেখালেখি শুরু করেন এই কবি। কবিতার বইসংখ্যা- তিন। মাথুর, গুঞ্জাগাথা, অপরূপকথাখানি। চাকরি করেছেন টেলিভিশনে। বর্তমানে চাকরি ছেড়ে ‘শর্টফিল্ম’ বানান। তাঁর বেশ কয়েকটি ছবি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পুরস্কৃত।
কবিতা
১
শিব
এ দেহ শবের মতো শায়িত রয়েছে
এ দেহ শিবের মতো শুয়ে
আকাশে তাকানো চোখ হঠাৎ দেখলো কে যে
চাঁদকে নিভিয়ে দিল ফুঁ’য়ে
খড়গ উড়ে এল, মর্গে উড়ে যাই
ছিটকে উঠছে রক্তধারা...
স্বপ্নে দেখি আমি
আমার মৃত্যুর পরে
আঙুলে জাগ্রত উগ্রতারা
২
শীতলার গাধা- ১
শীতলার গাধাটিকে আমি কিছুতেই ডিঙোতে পারিনা। এদিকে অর্ধেক আর গাধার ওপারে আধা আমার সংসার। ওপরে আকাশ নীল নক্ষত্রের চোখে স্থির আমাকে দেখতে থাকে। আমি অমীমাংসিত জাবনার চর্বিতচর্বন নিয়ে, জল নিয়ে দেবীর চরণ বন্দনা করি। মুখে থুতু উঠে আসে। ফেনা উঠে আসে আর মাঝে মাঝে রক্তের লাল। আমার অর্ধেক সংসার জুড়ে যন্ত্রনার ভয়াবহ করোটি কঙ্কাল আর অন্য অর্ধেকে অজ্ঞাত পরকাল জেগে বসে আছে। আমি যে জীবিত একথা ভাবতে গেলে ভয়ে বুক কেঁপে কেঁপে ওঠে আর আমি স্বেচ্ছামৃত্যুর যেহেতু সাহস পাই না তাই মাঝখানে কতকাল ভালো করে ঘুমাতে পারিনি, জাগতে পারিনি, শুধু গর্দভের মাটির মূর্তির চোখে চোখ রেখে অপলক তাকিয়ে দেখেছি। আরও কতদিন এভাবে থাকতে হবে, স্পষ্ট এই দেবীও জানে না।
৩
শীতলার গাধা- ২
অহেতুক এইসব লেখালিখিগুলি আমি ছিঁড়ে ফেলে দেব। দেখো আজ শীতলার গাধার পিঠের থেকে নেমে আসে কাগজকুড়ানি মাসি। আমি তার হাতের ঝাঁটার নিচে মাথা পেতে রাখি। রাখি প্রকাশিত বই। বলি, আমি নই আমি নই যথাযথ কবিতাসেবক, দাসী। শব্দের ভিতরে এক ঝুঁকে পড়া প্রৌঢ় সন্ন্যাসী, সে তার কমন্ডুলুর জল ছিটিয়ে দিয়েছে আর আমি জেগে উঠে দেখি, ঘরময়, চিরদু:খভরা এইসব লেখালিখি ছড়িযে রয়েছে। আমি এইসব কিছুই লিখিনি- আমি জীবনের অর্ধেক সময় দিয়ে তাকে শুধু গুছিয়ে রেখেছি একদিন ছিঁড়ে আকাশে উড়িয়ে দেব ব’লে। অন্তরীক্ষে তীব্র বজ্রগর্ভ মেঘ ভেসে আসে, মেঘস্বরের নিচে পাখি উড়ে চলে। কবিতার কাগজকুড়ানি মাসি দেখি তার ডানার ছায়ার নিচে অধীর অপেক্ষা করে। এইসব অক্ষর, যতি, পঙক্তির সত্যাসত্য সব নিয়ে যাবে ব’লে স্থির বসে থাকে। যাই, তাকে এক গ্লাস জল দিয়ে আসি।
কেন লিখি -
কেন দাঁত মাজি, কেন বাজার যাই- সে সম্পর্কে আমার ধারনা থাকলেও কেন কবিতা লিখি, সে সম্পর্কে আমার সত্যি কোনও স্পষ্ট উত্তর জানা নেই। কবিতার ক্ষেত্রে আমি দৈব নির্ভরশীল। কেননা আমি দেখেছি যে হাজার চেষ্টাতেও এক লাইন লিখতে পারিনি, আবার কখনো কবিতা স্বত:স্ফূর্তভাবে নারীর ইচ্ছের মতো এসেছে আমার কাছে। তারপর তাকে যত্ন করেছি, সাজিয়ে তুলেছি, ভালবেসেছি আর ঝগড়ার কাটাকুটিও কম করিনি।