4thPillar


মানুষের খাদ্যাভ্যাসে অসুস্থ হচ্ছে পৃথিবী

রিম্পা বিশ্বাস | 30-11-2021June 5, 2023
মানুষের খাদ্যাভ্যাসে অসুস্থ হচ্ছে পৃথিবী

আজকাল জলবায়ুর পরিবর্তন, পরিবেশের ক্ষতি কথাগুলো শুনতে শুনতে আমজনতার কান একেবারে পচে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের এক ভাবনা, ‘আরে! আমার না আছে গাড়ি, না আছে কোনও কলকারখানা, এই দূষণের সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক? আমার পেটে তিনবেলা ভালমন্দ জুটলেই হল।’ তবে, এই পেট আর এই ভালমন্দ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভাবার সময় এসেছে। কারণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে মানুষের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

আজ কী খাব? বাজারে যাওয়ার আগে সাধারণ মানুষ এখন আর এ সব ভাবেন না। তিনি জানেন, এখন বারো মাস বাজারে সব কিছু পাওয়া যায়। শাক-সব্জি, মাছের আলাদা আলাদা মরসুম বলে কিছু নেই, টাকা থাকলেই বছরের যে কোনও সময়ে সব কিছু মেলে। আর যদি বাজারে না পাওয়া যায় তবে রাঁধার দরকার নেই, একবেলা অর্ডার দিয়ে আনিয়ে নিলেই হল। প্রিজারভেটিভের ব্যবহার, খাদ্যের সংরক্ষণ, বিশ্বায়ন ইত্যাদির ফলে পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে অন্য প্রান্তের ফলমূল পাওয়া যাচ্ছে নিমেষে। এ ছাড়াও সপ্তাহে কয়েক বার বাড়ির বাইরে খাওয়া। কিন্তু এ সবে যে শুধু আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় তা নয় বরং পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে।

পরিবেশের ক্ষেত্রে গ্রিনহাউজ গ্যাস একটি ক্ষতিকারক প্রভাব বিস্তার করে। এই গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাপ হয় মাথাপিছু কার্বন ফুটপ্রিন্টের পরিমাণ দিয়ে। এই কার্বন ফুটপ্রিন্টে পরিবহণ ছাড়াও নির্ভর করে খাদ্যাভ্যাস, কারণ বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী যে আহারশিল্প গড়ে উঠেছে তাতে দুষ্প্রাপ্য কিছুই নেই, বিশেষত শহরাঞ্চলে। পৃথিবীর প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক মানুষ রোজ গড়ে 2 কেজি করে খাদ্যগ্ৰহণ করেন। এই খাদ্যতালিকার মধ্যে বিদেশি (exotic food) এবং অফ সিজনের খাদ্য যত বেশি মাত্রায় থাকে কার্বন ফুটপ্রিন্টের মাত্রাও তত বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে একটি দেশ যত বেশি উন্নত সেই দেশের মানুষের মাথাপিছু কার্বন ফুটপ্রিন্টের মাত্রা তত বেশি। আমেরিকার এক ব্যক্তির এক বছরে কার্বন ফুটপ্রিন্টের পরিমাণ 16.1 টন, চিনের ক্ষেত্রে তা 7.1 টন এবং ভারতের ক্ষেত্রে তা এখন আরও কম (1.9)।

খাদ্যের উৎপাদন, তার সংরক্ষণ এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া এ সবে প্রায় 26% (global) গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপন্ন হয়। মাছ, মাংস, ডিম এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যের সংরক্ষণের ফলে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। ধান, গম উৎপাদনের ক্ষেত্রে চাষের জমিতে অতিরিক্ত পরিমাণে কৃত্রিম সার (fertilizer) ব্যবহার করায় তা কার্বন নির্গমনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া এ সমস্ত খাদ্য সংরক্ষণের জন্য বাতানুকূল ঘরের ব্যবহার করা হয় যা পরিবেশে গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।

বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশ অন্য মরসুমেও উৎপাদিত খাদ্যের অপ্রয়োজনীয় সংরক্ষণ করে। ফলে এক দিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, তেমনই এই সংরক্ষিত খাদ্য গ্ৰহণের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হচ্ছে। উপরি পাওনা হিসেবে রয়েছে খাদ্যের অপচয়, যা মানুষের দ্বারা করা সবচেয়ে বড় ভুল হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। অফ সিজন খাদ্যের সংরক্ষণের পাশাপাশি খাদ্যের অপচয়ের দিকটি নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। পরিবেশকে সুস্থ রাখতে আমাদের নিজেদের খাদ্যাভ্যাসে বদল আনতে হবে। কার্বন নির্গমনের পরিমাণ শূন্য (zero emissions) রাখার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক শক্তির বহুল ব্যবহার যেমন প্রয়োজন, তেমনই খাদ্যাভ্যাসের তালিকা থেকে অপ্রয়োজনীয় সংরক্ষিত খাদ্য বাদ দেওয়াও প্রয়োজন।


New
বিদায় পিটি নায়ার: কলকাতার ইতিহাসবেত্তা
এগজিট পোল মিলে গেলেও যে প্রশ্ন উঠবেই
কংগ্রেস সেঞ্চুরি না করলে কে রুখবে বিজেপিকে?


Other Writings by -রিম্পা বিশ্বাস | 30-11-2021
মানুষের খাদ্যাভ্যাসে অসুস্থ হচ্ছে পৃথিবী
মানুষের খাদ্যাভ্যাসে অসুস্থ হচ্ছে পৃথিবী

আজকাল জলবায়ুর পরিবর্তন, পরিবেশের ক্ষতি কথাগুলো শুনতে শুনতে আমজনতার কান একেবারে পচে যাচ্ছে। স…


4thPillar

Support 4thPillarWeThePeople

Admin Login Donate
আমাদের কথা

আমরা প্রশ্ন করি সকলকে। আমরা বহুত্ববাদী, স্বাধীন, যুক্তিবাদী। আমরা সংশয়বাদী; তর্কশীল; আবার সহিষ্ণুও বটে। আসুন কথা হোক; পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, বিশ্বাস রেখে আলোচনা হোক। মননের ইতিহাসে শেষ কথা বলার স্পর্ধা কারও যেন না হয়; আবার কোনও স্বরই যেন অকিঞ্চিৎকর বলে উপেক্ষিতও না হয়। এই রকম ভাবনার একটা ইন্টারনেট-ভিত্তিক বিশ্বব্যাপী কমিউনিটি গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।

© 2023 4thPillarWeThepeople. All rights reserved & Developed By - 4thPillar LeadsToCompany
// Event for pushed the video