4thPillar


নতুন করে মানুষ চিনলাম

বিতান ঘোষ | 06-04-2020June 3, 2023
নতুন করে মানুষ চিনলাম

থাকি শহর কলকাতা থেকে বেশ খানিকটা দূরের এক মফঃস্বলে। কোলাহলবিহীন এক পাড়া। গতকাল সন্ধ্যায় নিবিষ্ট মনে একটি মনোগ্রাহী উপন্যাসে বুঁদ হয়ে ছিলাম। হঠাৎই পড়ার ঘরের জানলা দিয়ে আলোর ঝলকানি আর দুম দাম আওয়াজ শুরু হলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এইরকম আওয়াজ দ্বিগুণ জোরে কানে আসতে লাগলো। ‘ফুল ফোটে তাই বলো, আমি ভাবি পটকা'-র মতো ভাববিহ্বলতা ছেড়ে বোঝার চেষ্টা করতে থাকলাম, কী হয়েছে। তারপরেই অবশ্য মনে পড়লো, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত সেই মাহেন্দ্রক্ষণ সমাগত, যেখানে অন্ধকার ঘরে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেশবাসী একতার পরিচয় দেবেন!

 

পড়ার ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরের বারান্দায় চোখ রেখে দেখলাম মা-ও অন্ধকারে বসে আছে। বুঝতে পারলাম সংখ্যাগরিষ্ঠের কুসংস্কারাচ্ছন্ন বাতিকগ্রস্ততায় আমার যুক্তিবাদী মা পর্যন্ত প্রভাবিত হয়েছে। বিপদের সম্মুখে অসহায় মানুষের আপাত দুর্বল জায়গাগুলো এইভাবেই বুঝি বেআব্রু হয়ে পড়ে। তখনও অবশ্য চমক অনেক বাকি ছিল। সদর দরজা খুলে বাড়ির বাইরে আসতেই দেখলাম আমার পরিচিত এলাকাটা যেন ভূষন্ডীর মাঠে পরিণত হয়েছে। সেই নিকষ অন্ধকারে সিলভার লাইনের মতো কিছু আলো ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিছুসময় পরেই বুঝতে পারলাম বাড়ির ছাদ থেকে মোবাইলের ফ্লাশলাইট আর টর্চের আলো ফেলে 'একতা' প্রদর্শন করছেন আমার দায়িত্বশীল প্রতিবেশীরা। ততক্ষণে আমি অবশ্য বাড়ির প্রায় সবকটা আলো জ্বালিয়ে দিয়েছি। এতটা অন্ধকারে বড্ড দিশাহারা লাগছিল। 9 মিনিট সময়টাকে যেন নয় প্রহর মনে হচ্ছিল একটা সময়। কতক্ষণে এই ‘একতা প্রদর্শন' বন্ধ হবে, সেটাই ভাবছিলাম। 

 

সময় এগোনোর সমানুপাতে আতস ও শব্দবাজির দাপট বৃদ্ধি পাচ্ছিল। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরেও দেখলাম অত্যুৎসাহী মানুষদের উৎসাহে কোনও ঘাটতি পড়েনি। সত্যি বলতে কী, ওই কৃত্রিম অন্ধকারে বড্ড অসহায় লাগছিল নিজেকে। ইতিহাসের এক সাধারণ ছাত্র হিসাবে ভারতবর্ষ নামক ধারণাটি সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল আমি। সেই সূত্রেই জানি, এই ধারণাটি এতটা ঠুনকোও নয় যে 9 মিনিটের এই ‘মাদারি কা খেল'-এর মাধ্যমে সেখানে সংহতি আনতে হবে। রাষ্ট্রনেতার বাস্তবতা বহির্ভূত চমকদার ঘোষণাকে দোষ দেওয়ার পাশাপাশি আমার আশেপাশের আপাত পরিচিত মানুষগুলোর কান্ডকারখানা দেখে বিস্মিত হচ্ছিলাম। তথাকথিত শিক্ষিত মানুষদের এই অবিবেচকের মতো কাজকে কীভাবে যৌক্তিকতার উপর দাঁড় করাবো, অনেক ভেবেও বুঝে পাইনি। তারপরেই পাড়ার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কিছু মেসেজ পেলাম। অনেক প্রতিবেশী নাকি ওই নয় মিনিটে বাড়ির শিল নোড়াকে দাঁড় করিয়ে রেখে পুজো করছেন। তারই ছবিতে ছয়লাপ সেই গ্রুপ। হে মায়া প্রোপঞ্চ'নয়'!
 


New
মাদক ব্যবসা ও বিভাজনের রাজনীতির আবর্তে আজকের মণিপুর
ভ্রাতৃঘাতী লড়াইয়ে রাষ্ট্রীয় মদত? বিস্ফোরক রিপোর্ট অসম রাইফেলসের
বিরোধী জোট আছে, রাজনীতি কই?


Other Writings by -বিতান ঘোষ | 06-04-2020

// Event for pushed the video