4thPillar


‘যোগ’বলে ছ'বছর আগেই জানা ছিল করোনা আসছে!

রজত কর্মকার | 04-06-2020May 27, 2023
‘যোগ’বলে ছ'বছর আগেই জানা ছিল করোনা আসছে!

নাথবাবুর এই এক দোষ। মুখের সামনে মাইক পেলে মুখের লুজ মোশন শুরু হয়ে যায়। ভক্তি বড় বিষম বস্তু। বিশেষত তাঁর মতো ভক্ত তো আর পথে-ঘাটে মেলে না। অনেক কষ্টের ফলে তাঁর মতো হওয়া সম্ভব। সে জন্য অবিশ্যি তাঁর বেশ নামডাকও আছে। বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনের আগে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ধুন্ধুমার বক্তিমে রাখার জন্য। তা তিনি যে পোধানমন্তির সুখ্যাত করবেন তাতে আর আশ্চর্য কী! না না, সে জন্য আমরা মোটেই বিচলিত নই। চিন্তার কারণ অন্য।

 

এমনিতেই মোদীবাবুর গুণের শেষ নেই। এত গুণের সঙ্গে তিনি কি ভবিষ্যৎদ্রষ্টাও? মানে নির্বাচনের এক বছরের মধ্যে অর্থনীতির বারোটা বাজানো সরকার করোনার সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পড়বে, সেটাও কি তিনি আগাম দেখে নিয়েছিলেন? না হলে করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতি কীভাবে 6 বছর আগে থেকে নেওয়া সম্ভব? না, আমরা বলছি না। বলছেন স্বয়ং নাথবাবু।

 

কী বলছেন তিনি?

 

জনধন অ্যাকাউন্ট, স্বচ্ছ ভারত মিশন, উজালা যোজনা, সৌভাগ্য স্কিমের মতো রামবাণ সমস্ত পদক্ষেপ করেছেন মোদী। তাতে করোনা একেবারে কেঁচো হয়ে গেছে। গোমূত্রের কথাটা বেমালুম চেপে গিয়েছেন। বা হয়তো ভুলেও যেতে পারেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে করোনার মূর্তি বানিয়ে ভক্তগণ এত পুজো করে, গেলাসে গেলাস ঠুকে ঢকঢক করে গোমূত্র পান করলেন তার ক্রেডিট কিন্তু দেওয়া উচিত ছিল নাথবাবুর। যাই হোক, ভক্তরা সে দুঃখু একটু চেপে থাকুন ক’টা দিন। নিশ্চয়ই একদিন শাবাশি পাবেন।

 

এ সমস্ত মোক্ষম পদক্ষেপ কী কী প্রভাব ফেলল তা একটু জেনে নিন। নাথবাবু যা বললেন না, তা কিছু দেশবিরোধী রিপোর্ট বলছে। যেমন ধরুন অল ইন্ডিয়া ম্যানুফ্যাকচারার্স অর্গ্যানাইজেশনের সমীক্ষা বলছে, প্রায় 35 শতাংশ অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের বিভিন্ন ইউনিট ঝাঁপ ফেলেছে। কমবেশি প্রায় সাড়ে 6 কোটি মানুষ সরাসরি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ 2 কোটির বেশি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সমীক্ষা আরও বলছে, এই ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে বছর গড়িয়ে যাবে।

 

আরও পড়ুন: ছবিটাই পরিস্থিতি বোঝানোর জন্য যথেষ্ট

 

শুধুমাত্র পথ দুর্ঘটনায় 200-র বেশি পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষুধা-তৃষ্ণা, ক্লান্তিতে কত মারা গিয়েছেন তা এখনও পর্যন্ত হিসেব করে ওঠা যায়নি। এবার আসা যাক ট্রেনের কথায়। শ্রমিক স্পেশালে বাড়ি ফিরতে গিয়ে কতজন মারা গিয়েছেন তার হিসেব দিয়ে উঠতে পারেনি রেল। আন্দাজে কোনও রিপোর্ট লেখা যায় না, তাই সে সংখ্যা আপাতত তোলা থাক।

 

এর পর আসা যাক টাস্কে। দারণ সমস্ত টাস্কে করোনার বাপের নাম খগেন করে ছেড়েছেন মোদীবাবু। কখনও বাসন পেটানো, কখনও দীপ জ্বেলে যাই। দিন কতক আগে বিভিন্ন যোগ ব্যায়ামের ভিডিও পোস্টাতে বলেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে এটাই নাকি তাঁর মনের কথা। যোগের মাধ্যমে করোনা বিয়োগ হবে কিনা তা অবশ্য তিনি বলেননি।

 

এ বার সামগ্রিক পরিস্থিতির সঙ্গে তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন রামবাণ স্কিমের কার্যকারিতা বুঝে নিতে হবে। যেমন জনধন অ্যাকাউন্ট। জনতার কাছে ধনের অভাব থাকা সত্ত্বেও সে অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি। অনাহারে দিশাহারা শ্রমিকরা তাই খালি পেটে হেঁটেই বাড়ি ফিরতে গিয়ে বেঘোরে মারা পড়লেন। স্বচ্ছ ভারত মিশনে জঞ্জাল সাফ করার বলা হয়েছিল। দেশ থেকে মানুষ সাফ হয়ে যাচ্ছে। তাই জঞ্জাল ছড়ানোর কেউ থাকছে না। উজালা যোজনায় গ্যাস মিলেছে, কিন্তু পেটের জ্বালা কমেনি। সেই গ্যাসে রান্নার মতো কিছু গরিব মানুষের বাড়িতে ছিল না। এখানেও প্রফিট। গ্যাস বেঁচে গেল যে। সৌভাগ্য স্কিমে মিলেছে বিদ্যুৎ সংযোগ। দেশে কৃষক থেকে শ্রমিক চরম কালো সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। চরম দুর্ভাগ্যের সময়ে এই সৌভাগ্য স্কিম কেমন যেন অক্সিমোরনের মতো শোনাচ্ছে। বিদ্যুৎ আছে, সেটা সুন্দর। কিন্তু পরিস্থিতি ভীষণ ভয়ঙ্কর।

 

নাথবাবু ঠিকই বলেছেন, 6 বছর আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল। এখন তার পরিণাম দেখা যাচ্ছে। ওহঃ, নাথবাবুর পুরো নামটাই এতক্ষণ বলা হয়নি, আদিত্যনাথ। অনেকে তাঁকে যোগী বলেন। যিনি ডায়াসে দাঁড়িয়ে গুলি চালিয়ে মানুষজনকে বিয়োগ করার কথা বলেন, এমনই তাঁর যোগবল, তিনি এমনই যোগী!


New
মাদক ব্যবসা ও বিভাজনের রাজনীতির আবর্তে আজকের মণিপুর
ভ্রাতৃঘাতী লড়াইয়ে রাষ্ট্রীয় মদত? বিস্ফোরক রিপোর্ট অসম রাইফেলসের
বিরোধী জোট আছে, রাজনীতি কই?


Other Writings by -রজত কর্মকার | 04-06-2020

// Event for pushed the video