4thPillar


ঈশ্বরের প্রয়োজন হচ্ছে না

সুদীপ্ত সেনগুপ্ত | 20-01-2020May 26, 2023
ঈশ্বরের প্রয়োজন হচ্ছে না

ভগবান কত ভাল/ অপরের চোখ অন্ধ করেও আমাকে দিলেন আলো

ভগবান কত মিষ্টি/ অন্য খামারে আগুন জ্বেলেও আমাকে দিলেন দৃষ্টি

ভগবান কত ফর্সা/ কালো মানুষকে মারবেন বলে সাদাকে দিলেন বর্শা

 

কবীর সুমনের এই গানটি কি ঈশ্বরের বন্দনা? সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, পরম করুণাময় ঈশ্বর অন্যের চোখ অন্ধ করে আমাকে কেন আলো দেবেন? কেনই বা কালো মানুষকে মারার জন্য সাদার হাতে বর্শা তুলে দেবেন? অতএব যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত হল ভগবান অন্তত সকলের জন্য পরম করুণাময় নন। আরও একধাপ এগিয়ে অনুমান করা যায়, আসলে কবীর সুমন সম্ভবত সর্বশক্তিমান পরম করুণাময় ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

 

CAA-NRC-NPR বিরোধী আন্দোলনে নতুন করে জনপ্রিয় হয়েছে ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের "হম দেখেঙ্গে’। পাকিস্তানের স্বৈরাচারী সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হক-এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ আন্দোলনের মূর্ত স্বর ছিল এই গানটি। স্টেডিয়াম ভর্তি জনতার সামনে কালো শাড়ি পরে ইকবাল বানোর গাওয়া এই গজল গোটা উপমহাদেশে প্রতিবাদের প্রতীক। বেগম বানোর কালো শাড়িও ছিল প্রতিবাদেরই প্রতীক কারণ পাকিস্তানের সেই জমানায় হিন্দু এবং ভারতীয় সংস্কৃতির অংশ বলে শাড়ি পরাও নিষিদ্ধ ছিল। আজ যখন গানটি ভারতে প্রতিবাদ আন্দোলনে গাওয়া হচ্ছে তখন কেউ কেউ বলছেন গানের শেষ স্তবকটি বিশেষ একটি ধর্মের, অর্থাৎ ইসলামের আদর্শের সঙ্গেই সঙ্গতিপূর্ণ তাই এটি তারা সমর্থন করেন না। সত্যিই কি বামপন্থী, মুক্তমনা, র‌্যাশনাল ফয়েজ সাহেব স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ঈশ্বরের দ্বারস্থ হয়েছিলেন?

 

বস নাম রহেগা অল্লাহ্ কা

জো গায়ব ভি হ্যায় হাজির ভি

জো মনজর ভি হ্যায় নাজির ভি

উটঠেগা অন-অল-হক কা নারা

জো ম্যায় ভি হুঁ অওর তুম ভি হো

অওর রাজ করেগি খুল্ক-এ-খুদা

জো ম্যায় ভি হুঁ অওর তুম ভি হো

 

শুধু ঈশ্বরের নাম থাকবে। যিনি একাধারে উপস্থিত ও অনুপস্থিত, একাধারে দৃশ্য ও দর্শক। ধ্বনি উঠবে ‘আমিই সে (সোহম)’। আর রাজত্ব করবে মানুষ-ঈশ্বর, যে কিনা আমি এবং তুমিও।

 

এটাকে কি আল্লাহর বন্দনা বলা চলে নাকি এটা মানুষকেই ঈশ্বরের স্তরে উন্নীত করছে? এটার মানে কি উৎপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ঈশ্বরের থেকে শক্তি প্রার্থনা করা নাকি মানুষের মধ্যেই যে শক্তি আছে তার পূর্ণ সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলার আহ্বান? মানুষ যদি ঈশ্বরের মতই শক্তিমান হয়ে ওঠে তাহলে কি আর ঈশ্বরের প্রয়োজন থাকে? কবিতাটির শেষ স্তবক আমাদের তো সেই প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়।

 

কেউ কেউ আপত্তি করছেন কবিতাটির সেই অংশ নিয়ে যেখানে ঈশ্বরের পৃথিবী থেকে সমস্ত মূর্তি ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

 

জব অর্জ়-এ-খুদা কে কাবে সে

সব বুত উঠবায়ে জায়েঙ্গে

হম অ্যাহল-এ-সফা, মরদুদ-এ-হরম

মসনদ পে বিঠায়ে জায়েঙ্গে

 

যখন ঈশ্বরের আসন থেকে সব মূর্তি ছুঁড়ে ফেলা হবে আর সাফ-সুতরো এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত মানুষকে মসনদে বসানো হবে।

 

এটা কি শুধু ইসলামের পৌত্তলিকতার আক্ষরিক বিরোধিতা নাকি ব্যক্তিপূজার অবসানের আহ্বান? এখানেও কি শেষপর্যন্ত মানুষকেই ঈশ্বরের আসনে প্রতিষ্ঠা করা হল না? তা যদি করা হয় তবে সেটা কি বিশেষ কোনও ধর্মের অনুশাসনের প্রচার নাকি ধর্মের কর্তৃত্বকেই চ্যালেঞ্জ?

 


New
মাদক ব্যবসা ও বিভাজনের রাজনীতির আবর্তে আজকের মণিপুর
ভ্রাতৃঘাতী লড়াইয়ে রাষ্ট্রীয় মদত? বিস্ফোরক রিপোর্ট অসম রাইফেলসের
বিরোধী জোট আছে, রাজনীতি কই?


Other Writings by -সুদীপ্ত সেনগুপ্ত | 20-01-2020

// Event for pushed the video