4thPillar


রামায়ণের চেয়ে বরং সাহির লুধিয়ানভির কীর্তন শুনব

সঞ্চারী সেন | 08-04-2020May 25, 2023
রামায়ণের চেয়ে বরং সাহির লুধিয়ানভির কীর্তন শুনব

“কখন যে বসন্ত গেল এবার হল না গান…”

সত্যি এবারে চৈত্র বড়ই অবহেলায় গেল। তাই এমনিতেই বেসুর হৃদয়কে উত্যক্ত করতে নতুন করে আর রামায়ণ গান শুনব না। কারণ, ছকটা যে নিঃসন্দেহে বুঝে গেছি ভাই। রামরূপী অরুণ খুব শিগগিরই বিজেপি-তে যোগ দিতে চলেছেন বলে সংবাদে প্রকাশ। অর্থাৎ, এক বিশাল টি আর পি নিয়ে তিনি বিহার কিংবা উত্তর প্রদেশের নির্বাচনী মঞ্চে অবতীর্ণ হবেন, হয়তো বা নাটকীয় বেশেই। সঙ্গে বজরংবলী কে সাজবেন কে জানে! যাইহোক, রামায়ণ না দেখার আর একটা বড় কারণ হলেন সুকুমারীদি, সুকুমারী ভট্টাচার্য।
 
সংস্কৃতজ্ঞ এই মানুষটি তথাকথিত ‘পুরুষোত্তম্ রাম’-এর ইমেজের একেবারে ছাল-বাকল ছাড়িয়ে নিয়েছিলেন। পুরুষ ও ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের স্বাভাবিক নিয়মে এমনিতে পিতৃভক্ত, ভ্রাতৃস্নেহধন্য রাম আড়াল থেকে বালী বধ এবং শূদ্র তপস্বী শম্বুক-কে হত্যা করবার অপরাধ তো করেইছিলেন, তার চেয়েও বড় কথা, সুকুমারী’র গ্রন্থ অনুযায়ী, লঙ্কাবিজয়ের পর রাম সীতাকে যা বলেছিলেন, তা সংক্ষেপে এই রকম-

‘...জেনে রাখ, এই যে যুদ্ধের পরিশ্রম, তা তোমার জন্যে নয়। আমার এবং প্রখ্যাত আত্মবংশের মর্যাদা রক্ষার জন্যই তা করেছি। তোমার চরিত্র সন্দেহজনক হয়ে উঠেছে।
...রাবণের কোলে বসে পরিক্লিষ্ট, তার দুষ্ট দৃষ্টিতে দৃষ্টা তুমি, তোমাকে গ্রহণ করে আমি আমার বংশের গৌরব নষ্ট করব?
...বুদ্ধিমান আমি তোমাকে বলছি, লক্ষ্মণ, ভরত, শত্রুঘ্ন, সুগ্রীব বা বিভীষণ এদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করে নাও। তোমার মত দিব্যরূপা মনোরমা নারীকে দেখে রাবণ খুব বেশিদিন চুপচাপ সহ্য করেনি।’
(6:115:15-28)
 
এবং অন্যত্র,
 
‘যাও বৈদেহি, তুমি মুক্ত...
আমার মত ব্যক্তি ধর্ম ও অধর্মের ভেদ জেনেও পরহস্তগতা নারীকে কেমন করে এক মুহূর্ত ধারণ করবে?
...তোমাকে আমি ভোগ করতে পারিনে, (তুমি) যেন কুকুরে চাটা ঘি।’
(3:275:10-13)
 
তাই বলছিলাম, এর চেয়ে সাহিরের লেখা গান শুনব। ওখানে যত অপ্রেম, ঘৃণা, এখানে তত সমর্পণ, ততই প্রেম।

‘আজ সজন মোহে অঙ্গ লগা লো, জনম সফল হো যায়ে…'

- বিমল রায়, শচীন দেব, গুরু দত্ত, ওয়াহিদা রহমান, গীতা দত্ত এবং সাহিরের মিলিত ম্যাজিক। সাহির শব্দের অর্থও ‘জাদুকর’

‘রাধার কী হইল অন্তরে ব্যথা’, সাহির বিলক্ষণ বুঝেছিলেন। সাহির নিজেও কি এক রাধিকাকে চিনতেন? লাহোরে প্রচন্ড ঠান্ডায় পড়ে পাওয়া একটি ওভারকোট সম্বল করে সিমলার পাহাড়ী অঞ্চলের একটি বাড়ির উদ্দেশে তাঁর অভিসার ছিল কি?

সদ্য প্রকাশিত ‘সবেরা’ পত্রিকার সম্পাদক সাহির এবং সেই পত্রিকারই প্রগতিশীল লেখিকা এক নবীনা। সে সময়ে সাহিরের সর্বক্ষণের সঙ্গী আহমদ রাহী লিখেছেন, ‘উল্টো তরফ থেকে তখন কোনও কিছুই ছিল না, শুধু একটু মধুর হাসি ছাড়া, কারণ সেই তরুণী তখন বিবাহিতা, কিন্তু শুধু ওই হাসিটুকুর জন্যই সাহির তাঁর হৃদয় উৎসর্গ করেছিলেন।’

সেই তরুণী সমধিক প্রখ্যাত সাহিত্যিক অমৃতা প্রীতম।

অসাধারণ সব প্রেমের গান লিখেছিলেন সাহির, নারীর হৃদয় ও মননের প্রতি ছিল অসীম শ্রদ্ধা। সে-সব হয়ত এই অনন্য সাধারণ সম্পর্কের জন্যই।

সাহিরের অকাল প্রয়াণের পর তাঁর একটি গ্রন্থের ভূমিকায় অমৃতা লিখছেন, ‘আমার সঙ্গে সাহিরের সম্পর্ক ছিল সাদা কাগজের মতো, কোনওদিন তাতে কিছু লেখা হয়নি। ...আগে যখন সাহির লাহোরে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসত, এসে চুপচাপ কেবল সিগারেট খেয়ে যেত। ছাইদান ভরে যেত আধখাওয়া সিগারেটে। ও চলে গেলে আমি সেগুলো ধরাতাম। ওর সিগারেটের ধোঁয়ার সঙ্গে মিলে যেত আমার সিগারেটের ধোঁয়া। হাওয়ায় যেমন মিলে যায় দুই শহরের দূরত্ব, দুটি দুনিয়াও কি এভাবে মিলে যেতে পারে না?’
 
এই জন্যই তো সাহিরের প্রেমের গান শুনব, এখনই হোক কিংবা আরোপিত বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে উঠে দফতরের কাজের ফাঁকেই হোক।
 
 

সহায়ক গ্রন্থ: প্রবন্ধ সংগ্রহ-৩ - সুকুমারী ভট্টাচার্য এবং কুল্লিয়াত-এ-সাহির।


New
বিদায় পিটি নায়ার: কলকাতার ইতিহাসবেত্তা
এগজিট পোল মিলে গেলেও যে প্রশ্ন উঠবেই
কংগ্রেস সেঞ্চুরি না করলে কে রুখবে বিজেপিকে?


Other Writings by -সঞ্চারী সেন | 08-04-2020

// Event for pushed the video