4thPillar


একটি অবিশ্বাস্য বজ্রপাত ও 18টি হাতির মৃতদেহ

বিতান ঘোষ | 01-06-2021June 5, 2023
একটি অবিশ্বাস্য বজ্রপাত ও 18টি হাতির মৃতদেহ

‘হস্তিক নরাং, হস্তিক চরান, হস্তির পায়ে বেড়ি...’, প্রখ্যাত দুই অসমিয়া সঙ্গীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকা এবং প্রতিমা বড়ুয়ার কন্ঠে বহুশ্রুত এই ভাওয়াইয়া গানটির কথা মনে পড়ে একসঙ্গে 18টি জলজ্যান্ত হাতি মারা  যাওয়ার ঘটনায়। গত 12 মে অসমে কার্বি-আংলঙ জেলায় ঘটনাটি ঘটে। প্রাথমিকভাবে দাবি করা হল বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে হাতিগুলি মারা গেছে। আসামের বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য তদন্তের আগেই জানিয়ে দেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে তড়িতাহত হয়ে মারা গেছে হাতিগুলি। কিন্তু পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে পশুপ্রেমী বিভিন্ন সংগঠন এই দাবি মানতে নারাজ৷ তাদের দাবি, স্বচ্ছতার স্বার্থে 18টি হাতির ময়নাতদন্তের রিপোর্ট স্বতন্ত্রভাবে প্রকাশ করা হোক।

 
আসামের মধ্যাঞ্চলে নগাঁও ও কার্বি-আংলঙ জেলার সীমানায় নিকটে কুন্ডলী অরণ্য অবস্থিত, যেটি একটি প্রস্তাবিত সংরক্ষিত বনাঞ্চল। আসাম বন দপ্তরের কাঠিয়াতোলি রেঞ্জের অন্তর্ভুক্ত এই বনাঞ্চল। সেখানকারই বামুনি পাহাড়ে গত 13 মে 18টি হাতিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। হাতিগুলির দেহ 100 থেকে 150 মিটার দূরত্বে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছড়িয়ে ছিল। দু'টি দেহ পাহাড়ের ঢালু অংশে, 50 মিটার নীচ থেকে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে, চোখে দেখার ভিত্তিতে যে প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করা হয়, তাতে বলা হয় 12 মে মধ্যরাতে কোনও ভয়ঙ্কর বজ্রপাতে তড়িতাহত হয়েই মারা গেছে হাতিগুলি।

কিন্তু এই দাবির বিপক্ষে অনেকগুলি প্রশ্ন উঠছে। যেমন, মধ্যরাতে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটল, অথচ স্থানীয় মানুষরা কিছু টের পেলেন না কেন? সংলগ্ন বনাঞ্চলের উঁচু গাছপালাগুলো অক্ষত থাকল কী করে? হাতিদের দেহগুলি এত বিক্ষিপ্ত ভাবে পড়ে থাকল কী করে? এত বিপুল জায়গা জুড়ে বজ্রপাতের ঘটনা কি স্বাভাবিক বিষয়? তাছাড়া পশুপ্রেমীদের একটা অংশ জানাচ্ছেন, হাতিগুলিকে বসে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, বিদ্যুৎপৃষ্ট কোনও প্রাণী কি এত অল্প সময়ে বসার সুযোগ পায়?  অল আসাম ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (AAEA)-এর তরফেও বজ্রাঘাতে মৃত্যুর এই তত্ত্বকে খারিজ করা হয়েছে। এই বিষয়ে সর্বাধিক সরব হয়েছে ‘নেচার্স বেকন’ সংস্থা এবং সংস্থার কর্ণধার সৌম্যজিত দত্ত। 4thpillar WeThePeople-এর তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন হাতিমৃত্যু নিয়ে মিথ্যাচার করছে। আমাদের স্পষ্ট দাবি, 18টি হাতির ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনতে হবে। অথচ ঘটনার এতদিন পরেও সেই রিপোর্ট হাতে এল না। তাই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, সরকার কি কিছু আড়াল করতে চাইছে?’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই মনে করছেন, হাতিগুলিকে সুপরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিষ প্রয়োগে হাতিগুলিকে মারা হয়ে থাকতে পারেও বলে মনে করছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে হাতিকে অনেকেই গণেশের অবতার হিসাবে পুজো করে থাকেন। তাই 18টি হাতিমৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন তিনি। সেই কমিটির 15 দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়ার কথা থাকলেও, এখনও তা প্রকাশ্যে আসেনি। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, জায়গাটি হাতিদের চলাচলের করিডর হওয়া সত্ত্বেও সেখানে একটি সৌরপ্রকল্প চালু করা হচ্ছিল। সেই প্রকল্পকে নিষ্কণ্টক করার জন্যই কি পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হল 18টি হাতিকে? সৌম্যজিত বাবুর মতে, ‘এসব বলে আসলে মূল তদন্তের অভিমুখটাকেই ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর সৌর প্রকল্পের জন্যই যদি 18টি হাতিকে মরতে হয়, তাহলে তো প্রশ্ন উঠবেই যে, এই প্রকল্পে সরকার কীভাবে ছাড়পত্র দিল?’ দাবি পালটা দাবির মাঝে আসাম, সারা দেশের পশুপ্রেমীরা হাতিগুলির মৃত্যুর কারণ জানতে আগ্রহী। কবে সেই সত্য উন্মোচিত হবে বা আদৌ হবে কিনা, তা জানেন না কেউই।


New
আপনি নিজে কজন মুসলমানকে চেনেন?
নিজবাসভূমে পরভাষী
মহাকুম্ভের অমৃতবারি ও অন্ধদের হস্তিদর্শন


Other Writings by -বিতান ঘোষ | 01-06-2021

// Event for pushed the video