"নাগাল্যান্ড ভারতের বাইরে।'
মনে মনে অনেকে যা ভাবে, সেই কথাটাই বলে ফেলেছিল ই-কমার্স সাইট ফ্লিপকার্ট।
ফ্লিপকার্টে নাগাল্যান্ডে ডেলিভারি অপশন না থাকায় কোহিমার এক বাসিন্দা সম্প্রতি ফেসবুকে অভিযোগ জানিয়ে লেখেন, “দেবে না কেন? আমরা কি এখনও স্বাধীনতা পাইনি।'' তাঁর বক্তব্য, ভারতের অন্যান্য সব রাজ্য যেমন সার্ভিস পায় নাগাল্যান্ডেরও তা পাওয়া উচিত। সেই পোস্টের উত্তরে ফ্লিপকার্ট জানায় যে নাগাল্যান্ড ভারতের বাইরে বলে সেখানে ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব না। সর্ব বৃহৎ ভারতীয় ই-কমার্স সাইট কি তবে ভারতের মানচিত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহল নয়? নাকি তারা একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে থাকা অঞ্চলকেই শুধু ভারতের অংশ বলে স্বীকৃতি দেয়? এই ঘটনায় হইচই পড়ে যাওয়ায় ফ্লিপকার্ট পরবর্তীকালে ক্ষমা চেয়েছে, এবং জানিয়েছে এটা তাদের অনিচ্ছাকৃত ভুল। কিন্তু এমন একটা ভুল হয় কী করে? নিজের দেশের একটি অঙ্গ রাজ্যের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা নিছক ভুলই নয়, তা অপমানজনকও বটে। কেন উত্তর পূর্ব এবং পূর্ব ভারতের প্রতি এত অবহেলা?
নাগাল্যান্ডের এক গায়ক অ্যালাবো নাগা এই বিষয়ে মশকরা করে সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, "ধন্যবাদ এত তাড়াতাড়ি স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য।'
এ হেন ঘটনার উদাহরণ প্রচুর রয়েছে। ই-কমার্স সাইটটির স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে মাত্র, কিন্তু পূর্ব ভারতের কাউকে দেখলেই, "চিংকি', "চিনা' প্রভৃতি বলে মজা(?) করা, তাদের এক প্রকার অবজ্ঞা করে দূরে ঠেলে রাখতে প্রায়ই দেখা যায়। তাদের খাবার দাবার, পোশাক নিয়ে নানান সময়ে নানান কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য শোনা যায়। উত্তর পূর্ব ভারতের বাসিন্দা মানেই যেন তারা ভিন দেশের। সিকিমের বাসিন্দা ডাক্তারির ছাত্র সদ্রত বলেন, "ভারতে এখনও অনেক মানুষ আছেন যাঁরা জানেনই না সিকিম ভারতেরই অংশ। আমি সিকিমের বাসিন্দা শুনে জিজ্ঞেস করে, সেটা কোথায়? চিনে? আমি তাদের মজা করে বলি কেন ভারতের মানচিত্র দেখনি? তাছাড়া পড়াশোনার জন্য সিকিমের বাইরে গেলে নানান সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কেউ কেউ চিঙ্কি বা চিনের বাসিন্দা বলে ডাকে। একদম ভাল লাগে না। কেউ জেনে বলে মজা করার জন্য, কেউ না জেনে। কিন্তু খুব খারাপ লাগে। এটা তো আমারও দেশ, তবে কেন এমন শুনতে হবে, শুধু অন্যদের তুলনায় আলাদা দেখতে বলে? চাইনিজদের সঙ্গে আমাদের চেহারার মিল আছে ঠিকই, কিন্তু এক না। লক্ষ করলেই তফাৎ বোঝা যায়। তাহলে এ ধরনের মশকরা কেন?' ঠিকই তো, নিজের দেশে থেকেও যদি ভিন দেশের বাসিন্দার মতো ব্যবহার পাই, সুযোগ সুবিধা না পাই তাহলে কার না রাগ, কষ্ট হয়? ক্ষোভ হয়? আমরা ভুলে যাই, "নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান/বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান।' ভুলেই গিয়েছি হয়তো, নইলে কি এমন মন্তব্য আসত? অথচ এই আমরাই কিন্তু আবার গর্ব ভরে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত গাই। কিন্তু তার অর্থ, মর্ম, উদ্দেশ্য সবই বোধহয় ভুলে গেছি। অনেকের কাছেই এখন পূর্ব ও উত্তর পূর্ব ভারত শুধুই একটা ভিন দেশের জায়গা যেখানে বিনা পাসপোর্টে যাওয়া যায়।
মণিপুরের বাসিন্দা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পাওনাম থৈবি বলেন, "এই বর্ণবাদী মনোভাবগুলো বাদ দিতে হবে এবার। কাউকে কোণঠাসা করা, বা তাকে দেখতে কেমন বা কোন রাজ্যের বাসিন্দা দেখে তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা অত্যন্ত নিম্নরুচির। এই বিষয়গুলো আমার কাছে ভীষণ অপমানজনক। সকলের এটা বোঝা দরকার, সব বিষয়ে মজা করা যায় না। যখন কোনও একজন বা একটি সমষ্টি বারংবার একই ধরনের মজার, ব্যঙ্গের শিকার হয় সেটা তার বা তাদের মনে ছাপ ফেলে, এবং ব্যাপারটা যথেষ্ট বিরক্তিকর। ভারত তো তাদেরও দেশ, তবে এই অবজ্ঞা কেন? এই ব্যঙ্গ কেন? জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় যে গর্ব অনুভব হয়, সেই গর্বের যে কারণ, অর্থাৎ গানের কথা, ভারতের বৈচিত্রের কথা ভুলে গেলে চলবে না। তাকে বুঝতে হবে, জানতে হবে, একই সঙ্গে নিজেদের সংযত করে বদলাতে হবে। সবাই একই দেশের বাসিন্দা, এই ধরনের ব্যবহার বা আচরণ মোটেই কাম্য নয়।'
রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হওয়ার দরুন দুই বোনেরই খুব ছোট বয়সে দেশপ্রেমের সঙ্গে পরিচয় ঘটে।
সন্তানের খুশির জন্য মায়েরা কত কীই না করতে পারে, তা জীবন হাতে কলমে আমাদের দেখিয়ে দেয়।
পরিস্থিতি নাকি বয়স, কে আমাদের বড় করে তোলে?
পদক পেলে তবেই উন্নয়ন দোরগোড়ায় আসবে, নতুবা নয়।
বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব যেন মারণ উৎসব না হয়, তার চেষ্টা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদেরই করতে হবে।
সোশাল মিডিয়াকেই অস্ত্র বানিয়ে নেমে পড়েছেন মানুষের পাশে দাঁড়াতে