‘‘নমস্কার, আমি বব বিশ্বাস, এক মিনিট,’’ ব্যস! তার পরেই একের পর এক রোমহর্ষক খুন। অতি সাধারণ ‘নিপাট ভদ্রলোক’ চেহারার আড়ালে যে ঠান্ডা মাথার পেশাদার খুনি লুকিয়ে থাকতে পারে, তা পাশের মানুষটি ভাবতেও পারবেন না!
সালটা 2012, বড় পর্দায় মুক্তি পেল, ‘কাহানি’ (Kahani)। পরিচালক সুজয় ঘোষ (Sujoy Ghosh) তাবড়-তাবড় অভিনেতা, সুন্দর স্ক্রিপ্ট, সিনেমাটোগ্রাফি— সব মিলিয়ে কলকাতা (kolkata) শহরের ‘কাহানি’ হয়ে উঠল একটি কাল্ট ক্লাসিক।
তবে সমস্ত অভিনেতার ভিড়ে নজর কাড়লো একটি চরিত্র। ছবিতে চরিত্রটি সব মিলিয়ে স্ক্রিনটাইম হয়তো মিনিট দশেক কিংবা তার থেকে খানিক বেশি। ডায়লগ বলতে দু'-চারটে শব্দ। গোটা ছবিতে মিনিট দশেকের একটি চরিত্র আলাদা করে নজর কেড়েছে এমন ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না। বব বিশ্বাসের (Bob Biswas) চরিত্রে অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় (Saswata Chattopadhyay) হয়ে উঠলেন ভারতীয় সিনেমার পরিচিত মুখ। পরিচিতি আগেও ছিল তোপসের, কিন্তু বব বিশ্বাস যেন একটা অনুঘটকের কাজ করলো।
‘কাহানি’র সেই পরিচিত বব বিশ্বাস আবার পর্দায় ফেরত এল নতুন মোড়কে সুজয়-কন্যা দিয়া অন্নপূর্ণার পরিচালনায় শাহরুখ খানের (Shah Rukh Khan) রেড চিলিজ-এর হাত ধরে জি ফাইভ (Zee 5) ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। তবে এ বার বব বিশ্বাসই প্রোটাগনিস্ট। ‘কাহানি’র শেষে দেখা গিয়েছিল, এক দুর্ঘটনায় বব কোমায় চলে যায় আর এ বার গল্পের শুরু ঠিক আট বছর পর স্পিন অফে কোমা থেকে ফিরে এসেছেন অভিষেক বচ্চন, থুড়ি এ বারের বব। বব বিশ্বাস এখানে নিছক খুনি নন, কোমা কাটিয়ে ওঠা এক স্মৃতিভ্রংশ মানুষ, যে জানেই না সে কে, কী করে খুন করত? কেন সে খুন করত? যাকে খুন করতে চায় সে ভাল না খারাপ ইত্যাদি। মন না চাইলে সে আর খুন করে না। এ রকম একজন বিভ্রান্ত মানুষের চরিত্রে অভিনয় করেছেন জুনিয়র বচ্চন।
ছবির প্রথমেই আমরা দেখি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে বব। পুরনো স্মৃতি বিশেষ কিছু নেই। তাঁর এক স্ত্রী ও আগের পক্ষের দুই সন্তান রয়েছে। চিত্রনাট্যের বেশ কিছু দিক একসঙ্গে সামনে আসে প্রথময় যারা ববকে দিয়ে আবার খুন করাতে চায়। দ্বিতীয়ত, ‘ব্লু’ নামক এক মাদকবিশেষের কলকাতার ছাত্রসমাজে ব্যাপক রমরমা, যা নাকি ছাত্র-ছাত্রীদের মন:সংযোগে দারুন উপকারী। তৃতীয়ত, ববের আন্তরমনের দ্বন্দ্ব, অনবরত নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই। কেমন মানুষ ছিল সে? ভাল না মন্দ? সে কি সত্যিই মানুষ মারতে পারে? আদৌ কখনও খুন করেছে? আপাত শান্ত বব তার নিজের জীবনের গতিপ্রবাহ কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। কিন্তু ঘটনাচক্রে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে প্রথম খুন করে ফেলে তারই উৎপাৎপ্রবণ সঙ্গীতশিল্পী প্রতিবেশীকে (Kanchan Mallik)। আর এই খুন এমন আন্দাজে করে যেন মানুষ খুন করা তার কাছে ‘জলভাত’! কিন্তু এই ছবির প্রধান সমস্যা হল, ববের মতোই ছবির পরিচালক এবং গল্পকারের ধারণা এবং উদ্দেশ্য বেশ অস্পষ্ট। বব বিশ্বাসকে তাঁরা সাদা হিসেবে দেখাতে চান না কালো, তা স্পষ্ট নয়।
‘কাহানি-তে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় অভিনীত যে ববকে আমরা দেখেছিলাম, সেই চরিত্রের জটিলতা, স্তরগুলি এখানে আস্তে আস্তে পরিষ্কার করার চেষ্টা করা উচিত ছিল। গল্প যত এগোতে থাকে আমরা অপেক্ষা করে থাকি যে একটা সদুত্তর পাওয়া যাবেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিরাশ হতে হয়। পাড়ায় খুন হয়ে গেল, অথচ কারও কোনও হেলদোল নেই, রাস্তা দিয়ে লাশ টেনে নিয়ে যাওয়ার সময়ে পাড়ার কেউ এসে পড়ল না, কিছুটা অস্বাভাবিক ঠেকেছে। ববের অন্তর্দ্বন্দ্বের গভীরে যাওয়া হয়নি। তার গার্হস্থ্য জীবনের খুঁটিনাটিও খুব দায়সারা ভাবে লেখা।
ববের স্ত্রী মেরির চরিত্রে চিত্রাঙ্গদা সিং (Chitrangada Singh)-এর তেমন কিছুই করার ছিল না, তবে প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর এত সহজেই ববের মতো আকর্ষণহীন চরিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া এবং তাঁকে বিয়ে করে ফেলা কিছুটা অতিনাটকীয় লেগেছে। তবে এই ছবিতে উল্লেখযোগ্য পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Paran Bandyopadhyay) উপস্থিতি। কালীকৃষ্ণ পাল, অর্থাৎ কালীদার চরিত্রে তাঁর মতো দুঁদে অভিনেতার অভিনয় মনে রাখার মতো। যদিও খুব কম জানা যায় কালীদা সম্পর্কে, তবে এই কালীদাই ববের আগ্নেয়াস্ত্র সরাবরাহকারী, নজরকাড়া এক চরিত্র। সুজয় ঘোষ পরিচালিত ছবি ‘কাহানি’-তে স্বল্প উপস্থিতিতে বব বিশ্বাস যে আলোড়ন তৈরি করেছিল, তা দিয়া অন্নপূর্ণা ঘোষ পরিচালিত ‘বব বিশ্বাস’ পারেনি। তবে এর দায় অভিষেক বচ্চনের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া কখনওই যুক্তিযুক্ত হবে না। রজতাভ দত্ত থেকে ক্যামিও চরিত্রে দিতিপ্রয়া যথাযথ।
আরও পড়ুন: সিনেমা: একান্নবর্তী
কিন্তু এই চিত্রনাট্যের মূল সমস্যা হল মন্থরগতির গল্প। কী হচ্ছে, কেন এত খুন হচ্ছে, কারাই বা খুন করাচ্ছে— এই সব কিছুই পরিষ্কার নয়। তাই এই রকম একটি দুর্বল চিত্রনাট্য অভিষেক বচ্চনকে কার্যত একাই টেনে নিয়ে যেতে হয়েছে। তাই অভিষেকের পারফরম্যান্স গল্প ও চিত্রনাট্যের চাপে চাপা পড়ে গেল। এই রকম চিত্রনাট্য এবং গল্পের পাল্লায় পড়লে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়েরও খুব বেশি কিছু করার থাকত না। ‘এক মিনিট’ বানানটা বাংলা এবং হিন্দি উভয় ভাষাতে এক হলেও উচ্চারণের তারতম্য কিন্তু বর্তমান। পুরনো বব বিশ্বাসের উচ্চারণ অনুযায়ী ‘অ্যাক্ মিনিট’ শব্দটি আজও ‘শাশ্বত’। স্পয়লার আছে। ‘কাহানি’ সিনেমার শেষে রোড অ্যাক্সিডেন্টের পরে বব কোমায় চলে গিয়েছিলেন।
বব বিশ্বাস সিনেমার শুরুতে তাঁর জ্ঞান ফিরল অ্যাকসিডেন্টের আট বছর পরে, অথচ বব বিশ্বাস সিনেমার শেষে ববের ফ্লিপ ফোনে বিদ্যা বাগচীর ফটো এল, খুন করার নির্দেশ-সহ।
তা হলে বব বিশ্বাস সিনেমার টাইমলাইন কী? ‘কাহানি’র আগে, না পরে? এ প্রশ্ন থেকেই যায়।
রেটিং - 3.5
ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ভারতে তার ভবিষ্যৎ
আইন যা-ই বলুক, স্ত্রীর অসম্মতিতে বলপূর্বক যৌনসঙ্গম আদপে কিন্তু ধর্ষণই!
ভারতীয় রাজনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে পরিবারতন্ত্র, তবে এর সমালোচনা বিজেপির মুখে মানায় না
শবরপাড়ার মেয়েরা লড়াই করতে জানে। ওদের কোনও ইনাম লাগবে না, লাগবে শুধু অধিকারটুকু
শীত দরজায় কড়া নাড়লেও খাদ্যরসিক বাঙালির পাতে শীতের সব্জির দেখা নেই।
শেক্সপিয়রের ‘ম্যাকবেথ’ অবলম্বনে নির্মিত সিরিজ ‘মন্দার’ এক ক্ষমতার লড়াই ও করুণ পরিণতির গল্প বলে।