আইন বনাম সামাজিক কালচার। এই দ্বন্দ্বে আইনকেই সাধারণত পিছু হটতে হয়েছে। তামিলনাড়ুর ষাঁড় নিয়ে ভয়ঙ্কর খেলা জালিকাট্টুর (Jallikattu) ক্ষেত্রেও আপাতত তাই। এই বছরের জালিকাট্টু অনুষ্ঠানেও একজন ব্যক্তি মারা যান, 80 জন আহত হন। পুলিশ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারও করে ষাঁড়কে আঘাত করার অভিযোগে। মানুষের পক্ষে ভয়ঙ্কর বলেই শুধু নয়, প্রাণী অধিকার এবং সুরক্ষার দিক থেকেও জালিকাট্টু নিয়ে আপত্তি উঠেছে। আদালতের নির্দেশেও বন্ধ করা যায়নি খেলা। তামিল সংস্কৃতির(Tamil Culture) এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ – এই যুক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেনি আদালতের নির্দেশ।
জালিকাট্টুর ঐতিহাসিক পটভূমি সিন্ধু সভ্যতায়। কৃষিকাজ জানা মানুষের কাছে ষাঁড় একটি অতীব মূল্যবান বিষয় ছিল। এখনও তামিল সংস্কৃতি অনুযায়ী দক্ষিণের বেশিরভাগ ঘরে ষাঁড়কে নিজেদের পরিবারের সদস্য হিসেবে পালন করা হয়। তবে চাষের কাজে ব্যবহারের জন্য নয়, জালিকাট্টুতে ষাঁড়ের অংশগ্রহণের জন্য। তামিল সাহিত্য থেকে জানা যায় এক সময় জালিকাট্টু খেলার মাধ্যমে দক্ষিণে স্বয়ম্বর সভার আয়োজন করা হত। অর্থাৎ সেই যুগে পুরুষ ষাঁড়কে বাগে আনতে পারবে তাকেই বেছে নেওয়া হত জীবনসঙ্গী হিসেবে। প্রতি বছর দক্ষিণ ভারতের পোঙ্গল উৎসবের তৃতীয় দিনে জালিকাট্টু অনুষ্ঠিত হয়। এই খেলার জন্য বছর ধরে ষাঁড়দের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। খেয়াল রাখা হয় যাতে অনুষ্ঠানের সময় ষাঁড়ের কোনও ক্ষতি না হয়। যেসব মানুষ জালিকাট্টুতে অংশগ্রহণ করেন তারাও যথেষ্ট সাবধানতা মেনে চলে।
আরও পড়ুন:নারী বা পুরুষই শুধু নয়, মানুষ!
কিন্তু এতেই কি হয়? ষাঁড়কে ক্ষেপিয়ে দিয়ে মানুষের সামনে ছেড়ে দিলে এর পরিণতি যে ভয়াবহ হবে এটা তো আমারা সকলেই জানি। এটাই হয়ে আসছে এবং এই কারণেই প্রশাসন বারবার এই খেলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সুপ্রিম কোর্ট 2004 থেকে 2017 পর্যন্ত বিভিন্ন ভাবে এই খেলা বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। PETA (People For The Ethical Treatment Of Animals) এবং মানবাধিকার কমিশনের (Human Rights) সদস্যরা বারবার এই খেলার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ফলত, কিছু দিনের জন্য খেলাটি বন্ধ করা গেলেও আবারও ফিরে এসেছে। তবে প্রতিবার তামিল সংস্কৃতিকে হাতিয়ার করে রাজনীতি জিতে গিয়েছে। 2017 তে আমরা দক্ষিণ ভারত জুড়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ দেখতে পাই তা ছিল মূলত রাজনৈতিক। প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা জালিকাট্টু মানুষের আবেগে পরিণত হয়েছে। এবং এই আবেগকে হাতিয়ার হিসেবে রাজনীতিতে বারবার ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে কোনও রাজনৈতিক দলই আদালতের নির্দেশ কার্যতকর করার জন্য যেমন শাসক হিসেবে উদ্যোগ নেয়নি, তেমনই বিরোধী হিসেবেও জোরদার দাবি করেনি।
দেশে আসলে চলছে ধনকুবেরদের শাসন প্লুটোক্র্যাসি, মোদী-শাহরা নাটকের চরিত্র মাত্র
আধুনিক পেশাদার জীবনের দাবি মেনে ক্রমশ মেয়েদের পোষাকে পকেট চালু হচ্ছে, এমনকী শাড়িতেও
পুরুষতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় নারীদের উচ্চশিক্ষা মানায় না
ধর্মীয় বিশ্বাস কখনওই জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে না
একুশ যেভাবে ভাবতে শেখায়...
শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে সচেতনতাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ